শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একজন রোহিঙ্গাও ফিরতে চায় না, প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত

স্থগিত করার আহŸান জাতিসংঘের
যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:২৫
প্রত্যাবাসন হতে যাওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা

আজ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর কর্মসূচি শেষ মুহূর্তে এসে গভীর অনিশ্চয়তা পড়েছে।

যে ৫০টি রোহিঙ্গা পরিবারের দেড়শ জনকে দিয়ে আজ প্রত্যাবাসন শুরুর কথা, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে তারা বলেছে তারা কেউই মিয়ানমারে ফিরতে চায় না।

কাউকে যেন জোর করে পাঠানো না হয়, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে সরকার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বা ইউএনএইচসিআরকে ওই রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সাথে কথা বলার অনুমতি দেয়।

গত দুদিন ধরে ওই ৫০টি পরিবারের সবার সাথে কথা বলে ইউএনএইচসিআর তাদের একটি রিপোর্ট বুধবার বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং পুনর্বাসন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করে।

এরপর সন্ধ্যায় কমিশনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন, ইউএনএইচসিআর বলেছে, তালিকাভুক্ত দেড়শ শরণার্থীর একজনও যেতে চায় না। তিনি বলেন, জাতিসংঘের রিপোর্টটি তারা ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং পুনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালামও দিনভর সাংবাদিকদের কাছে নিশ্চিত করতে পারেননি যে বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মতো প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে। সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের শুধু বলেন, ‘অলৌকিক কিছু তো অনেক সময় ঘটে।’

আহরার হোসেন বলেন, ‘কর্মকর্তারা শুধু মুখে বলছেন না যে বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসন হবে না, কিন্তু তাদের কথাবার্তাতে স্পষ্ট যে সেটা হচ্ছে না।’

কীভাবে তৈরি হয় এই তালিকা

কীভাবে তারা এই তালিকা তৈরি করলেন যেখানে তালিকাভুক্ত একজনও ফিরতে চায় না?

শরণার্থী কমিশনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে ‘র‌্যানডমলি’ এই আট হাজার শরণার্থীর তালিকা তৈরি করে মিয়ানমারকে দেয়া হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, পরে তালিকাভুক্ত এই লোকগুলোকে বুঝিয়ে ফিরতে রাজি করানো হয়েছিল।

জাতিসংঘ অবশ্য এই প্রক্রিয়া নিয়ে সবসময়ই সন্দেহ প্রকাশ করেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা বলে- প্রত্যাবাসন না করে কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠিয়ে বুঝতে চেষ্টা করা উচিত যে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে গিয়ে নিরাপদে থাকতে পারবে কিনা।

দিনভরই অবশ্য শরণার্থী কমিশনার দফায় দফায় প্রত্যাবাসন কমিশনের কর্মকর্তারা সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এবং অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। বৈঠকগুলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি শুরু হওয়ার প্রস্তুতি হিসেবেই হচ্ছিল। বৈঠকগুলোতে ঢাকা থেকে আগত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তাও ছিলেন।

এদিকে সীমান্তের ঠিক কোনো জায়গা দিয়ে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন শুরু করা হবে সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা সুস্পষ্ট করে কিছু বলেনি।

তবে কক্সবাজারে নিযুক্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, ‘প্রত্যাবাসন কর্মসূচিটি যদি শুরু হয় তাহলে সেটা টেকনাফের ঘুমধুম সীমান্ত দিয়েই হবে।’

এরই মধ্যে সেখানে ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এই ট্রানজিট ক্যাম্পটি ঘুমধুম সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে রাবার বাগান নামক একটি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ট্রানজিট ক্যাম্পটিতে ৬০টি কামরা রয়েছে এবং কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন সেখানে ৩শ জন শরণার্থী রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে গুজবের হিড়িক

এদিকে এই প্রত্যাবাসন কর্মসূচি নিয়ে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে নানা ধরনের গুজব ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত যে ১৫০জন শরণার্থী রয়েছে, তাদের অনেকেই শরণার্থী শিবির থেকে প্রত্যাবাসন এড়াতে পালিয়ে যাচ্ছেন বলে তারা জানতে পেরেছে।

অবশ্য এই খবরটি বিবিসির পক্ষ থেকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে