শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন

আ’লীগে একাধিক প্রাথীর্ বিএনপিতে ওয়াদুদ ভুইয়া

খাগড়াছড়ি
রিপন সরকার, খাগড়াছড়ি
  ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে একদিকে আওয়ামী লীগের দু’গ্রæপের দলীয় কোন্দল, অন্যদিকে তৃণমূল নেতাকমীের্দর পাওয়া-না পাওয়ার হতাশা। এরপর এরই মধ্যে কে হবেন খাগড়াছড়ির আসনের নৌকার কাÐারি এ নিয়ে জেলা শহর, বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজার, পাড়া, মহল্লা, চায়ের দোকান আর রাজনীতি সচেতনদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।

পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রাথীের্দর মধ্যেও শুরু হয়েছে নিবার্চনী বৈতরণী পার হওয়ার পরিকল্পনা ও নানা প্রস্তুতি। রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধমীর্য় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করে চলেছেন সম্ভাব্য প্রাথীর্রা।

রাজনৈতিক সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত ২৯৮নং খাগড়াছড়ি আসনকে ১৯৮৪ সালে তৎকালীন সরকার জেলা ঘোষণা এবং সংসদীয় আসন নিধাির্রত করে সংসদে খাগড়াছড়িবাসীর প্রতিনিধি পাঠানোর পথ সুগম করে। উন্নয়নের পথে ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আশানুরূপ উন্নয়নসুবিধা পায়নি খাগড়াছড়িবাসী। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীদের অধিকার স্বাধিকারসহ নানা আন্দোলন, সংগ্রাম, দুই দশকেরও অধিক সময় গেরিলাযুদ্ধ, বারবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, এরপর ১৯৯৭ সালে পাবর্ত্য শান্তিচুক্তি হলেও খাগড়াছড়িবাসী বিগত সময়ের বেশিরভাগই অস্থিতিশীলতায় পার করেছে। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাবর্ত্য শান্তিচুক্তি হলেও চুক্তিকে ঘিরে মতবিরোধের জের ধরে এখানে সৃষ্টি হয়েছে আরো তিনটি আঞ্চলিক দলের। দলগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়তই খুন, অপহরন, দন্ধ, সংঘাত, এখানকার সাধারন পাহাড়ি-বাঙ্গালী ভোটারদেরকে আতংকিত করে রেখেছে সারাবছর, কোল খালী হয়েছে অনেক মায়ের। এই আসনের নিবাির্চত কোন সাংসদ এসব সংঘাত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসনে কোন সময় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করেনি বলে সাধারন ভোটাররা ক্ষুদ্ধ তাদের প্রতি। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে গত সরকারগুলি শান্তি সম্প্রীতি আর স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আন্তরিক হলেও এখানকার ভ‚-রাজনীতি এবং অধিকারের প্রশ্নে সৃষ্ট আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির বিভিন্ন দাবি, আধিপত্যের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের চরম দগ্ধ, সংঘাতে এখনো পিছিয়ে আছে এই আসনের অধিকাংশ মানুষ। খুন, গুম, অপহরণ, চঁাদাবাজি, আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগেই আছে। এসব ঘটনায় যেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনা, তেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ থাকলেও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এসব অথর্ কোনো কাজে আসেনি। শুধু বড় দুটি রাজনৈতিক দল আর আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকমীের্দর পকেট ভারী হয়েছে ।

১৯৯১ সালের ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের সময়ই খাগড়াছড়ি আসনে ‘নৌকা’ আর ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের খেলা জমতে শুরু করে। এ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের ওপর পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-এর আন্ডারগ্রাউন্ড সশস্ত্র শাখা ‘শান্তিবাহিনী’র একটি বড় প্রভাব ছিল তিন পাবর্ত্য জেলার তিনটি আসনেই। ওই সংগঠনের আশীবাের্দ এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান কাঠ ব্যবসায়ী কল্পরঞ্জন চাকমা। তখন সাধারণ পাহাড়িদের ওপর সংগঠনটির ব্যাপক প্রভাব এবং তিনি পিসিজেএসএস প্রধান সন্তু লারমার মামা হওয়ার সুবাদে বিপুল ভোটে জিতেও আসেন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নিবার্চনেও তিনি দলটির মনোনয়নে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন। আওয়ামী লীগ সরকার পাবর্ত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান দীঘির্দনের জাতিগত সংঘাত ও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে ঐতিহাসিক পাবর্ত্য চুক্তি সম্পাদন করেন। কিন্তু চুক্তি নিয়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের একটি বড় অংশের বঞ্চনার প্রশ্নে আলোচনায় চলে আসেন দুই অংশের দুই তরুণ নেতা। পাহাড়িদের মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা প্রসিত বিকাশ খীসা এবং বাঙালিদের অংশে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির নিবার্চনে নিবাির্চত সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভ‚ইয়া।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নিবার্চন আসতেই জনপ্রিয়তার শীষের্ পরিণত হয় ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)’। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত এই নিবার্চনে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নের প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নেয় জেএসএস। আর আওয়ামী লীগ-বিএনপির সাথে পাল্লা দিয়ে নিবার্চনে অংশ নেয় ইউপিডিএফ। চুক্তিবিরোধী আন্দোলন আর জেএসএসের ভোট বজের্নর সুবাদে জিতে যান ওয়াদুদ ভ‚ইয়া। নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সারাদেশে বিএনপির জয়লাভ করার পর তিনি ‘পাবর্ত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোডর্’-এর চেয়ারম্যানও মনোনীত হন। তারপর দ্রæত পাল্টাতে থাকে খাগড়াছড়ির রাজনৈতিক সমীকরণ।

বিগত ২০০৯ সাল থেকে টানা দুই মেয়াদে সরকারের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি আসনেও আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য নিবাির্চত হয়েছেন। নবম সংসদে নিবাির্চত যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা সাবেক প্রতিমন্ত্রী পদ-মযার্দায় শরণাথীর্ পুনবার্সন টাস্কফোসর্-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। আর বিএনপি বিহীন আলোচিত ৫ জানুয়ারির নিবার্চনে ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত খীসাকে ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের বতর্মান সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। নিবাির্চত হওয়ার দুই বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ি পৌরসভার নিবার্চনে দলের জেলা কমিটির দীঘির্দনের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. জাহেদুল আলমের আপন ছোট ভাই রফিকুল আলম স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নিবাির্চত হন। এই নিবার্চনে জাহেদুল আলমের আরেক জেঠাতো ভাই শানে আলম দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে নিবার্চন করাকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর সহিংস অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। জাহেদুল আলমের সাথে তার ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবকল্যাণ সম্পাদক দিদারুল আলম, যুগ্ম-সম্পাদক এসএম শফিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতাকমীর্ দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রাথীর্ রফিকুল আলমের পক্ষে অবস্থান নেন। দলের সাংগঠনিক নিয়মে বহিষ্কৃত হন অনেকে। সেই বিরোধের জেরে এখনো খাগড়াছড়িতে দ্ব›দ্ব সংঘাত অব্যাহত আছে। চলতি বছরের ২০ মে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বধির্ত সভার সিদ্ধান্তে জাহেদুল আলমকে সাময়িক বহিষ্কার করে তার স্থলে ১নং যুগ্ম সম্পাদক এস এম শফি (যিনি নিজেও পৌর নিবার্চনে দলীয় প্রাথীর্র বিপক্ষে ছিলেন)-কে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনে মৌখিক নিদের্শনা দেয়া হয়। কিন্তু তিনিও সেই পুরনো ধারায় অবস্থান করায় কাযর্ত জেলা আওয়ামী লীগের কাযর্ক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে।

গত প্রায় তিন বছর ধরেই জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও দলীয় কমর্সূচি পালিত হচ্ছে দ্বিধাবিভক্ত এবং দুটি কাযার্লয় থেকে। ফলে সাধারণ নেতাকমীর্ এবং তৃণমূলে দলটির কাযর্ক্রম অনেকটা লোক দেখানো-দায়সারা পযাের্য় নেমে এসেছে। বতর্মান সরকারের মেয়াদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সাংগঠনিক কাযর্ক্রমে নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে আ’লীগের নতুন মুখের গুঞ্জনের মধ্যে এবার যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারা হলেনÑ সাবেক প্রতিমন্ত্রী পদ-মযার্দায় শরণাথীর্ পুনবার্সন টাস্কফোসের্র চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বতর্মান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পাবর্ত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরী, জেলা সহ-সভাপতি ও পানছড়ি ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমার নাম আলোচনায় রয়েছে।

যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, এবার অবশ্যই দলের মনোনয়ন চাইবেন। গত নিবার্চনে অসুস্থতার কারণে মনোনয়ন চাননি। তৃণমূল ও কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। খাগড়াছড়ির বতর্মান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, মনোনয়নের চুড়ান্ত এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। তারা যঁারা মাঠের কমীর্ তাদের দায়িত্ব হলো দলকে জনগণের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সবোর্চ্চ চেষ্টা করা। তিনি দ্ব্যথর্হীন ভাবে বলেন, মনোনয়ন যিনিই পাবেন তার পক্ষেই তিনি অতীতের মতো সবর্শক্তি দিয়ে কাজ করবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে এই আসনটি ধরে রাখাই জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকমীর্র উদ্দেশ্য।

বিএনপি : ২০০১ সাল থেকে পাহাড়িদের নেতৃস্থানীয় অনেকে বিএনপি ঘরানার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে ভ‚মিকা পালন করছেন। খাগড়াছড়ির বিএনপি রাজনীতিতে সব সময়ই প্রভাবশালী ভ‚মিকাতেই ‘ভ‚ইয়া’ পরিবার। সাবেক ছাত্রনেতা ওয়াদুদ ভ‚ইয়ার হাত ধরেই ১৯৯১ সাল থেকে খাগড়াছড়িতে বিএনপি রাজনীতির বেগবান ধারা সূচিত হয়। সেই থেকে টানা তিনবার মনোনয়ন পেয়ে ২০০১ সালের নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন। এর আগে অবশ্য ১৫ ফেব্রæয়ারি বিতকির্ত নিবার্চনেও তিনি সংসদ সদস্য নিবাির্চত হয়েছিলেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত জোটের শাসনামলে তিনি ‘পাবর্ত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোডর্’-এর চেয়ারম্যান হন। এসময় তার সাঙ্গপাঙ্গদের ধারাবাহিক সন্ত্রাস-টেন্ডারবাজি-হামলা-মামলায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন জেলাবাসী। প্রাণভয়ে এলাকা ছাড়া হন আওয়ামীলীগের কয়েক হাজার নেতাকমীর্। প্রাণ হারান অনেকে। একপযাের্য় তার সাথে মতের অমিল হওয়ায় নিজ দলের বড়ো একটি অংশের ওপরও নেমে আসে হামলা-মামলা। এলাকাছাড়া হন বিএনপির অনেক নেতাকমীর্ও।

‘ওয়ান-ইলেভেন’-এর সময়কালে তিনি প্রথমে আটক হন। পরে দুনীির্ত মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বেশ কয়েক বছর জেল খাটেন। ফলে দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে দলের মনোয়ন পান চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ পাহাড়ি নেতা সমীরণ দেওয়ান। তিনি ১৯৮৯ সালে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিবাির্চত হয়ে ১৯৯১ সালের দিকে বিএনপিতে যোগ দেন। কিন্তু সে নিবার্চনে ওয়াদুদ ভ‚ইয়ার নেপথ্য কলকাঠিতে দলের বড়ো অংশ ‘ধানের শীষ’র বিপক্ষেই শুধু অবস্থান নেননি; নিজের ভাতিজা দাউদুল ইসলাম ভঁূইয়াকে দাড় করিয়ে দেন স্বতন্ত্র প্রাথীর্ হিসেবে। সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িতেও তখন বিএনপি’র ভরাডুবি হয়।

এরপর সমীরণ দেওয়ান দলের কাযর্ক্রমে কিছুটা সক্রিয় হলে তাকে দলের কেন্দ্রীয় নিবার্হী কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়। সেই থেকে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদের নিবার্চনের আগ পযর্ন্ত জেলা বিএনপির পৃথক কাযর্ক্রম দেখা গেলেও ওয়াদুদ ভ‚ইয়ার প্রভাব কমেনি। বরং এক পযাের্য় সমীরণ দেওয়ান পিছু হটে যান।

কাযর্ত জেলা বিএনপিতে এখন ওয়াদুদ ভ‚ইয়ারই একচ্ছত্র প্রভাব। তার অনুসারীরাই দলের সব কমর্কাÐে সক্রিয় রয়েছেন। আর সমীরণ দেওয়ান কেন্দ্রের নিবার্হী সদস্য পদে থাকলেও জেলার কোন কমর্সূচি কিংবা অন্য কোথাও তার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবু ‘পাহাড়ি-বাঙালি’ সাধারণ মানুষের কাছে ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে পুরনো মামলায় কোন কারণে ওয়াদুদ ভ‚ইয়ার মনোনয়ন ফসকে গেলে সমীরণের কপাল খুলতে পারে বলে বিএনপির মধ্যে কানাঘুষা চলছে। আগামী নিবার্চনে খাগড়াছড়ি বিএনপির প্রাথীর্ হিসেবে এই দুই জনের বাইরে ওয়াদুদ ভ‚ইয়ার ভাতিজা রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ফরহাদের নাম আলোচনায় রয়েছে।

সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভ‚ইয়া বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি নিবার্চনে অংশ নিলে তারাও নিবার্চনে যাবেন। সেক্ষেত্রে কোন প্রকার আইনি জটিলতা দেখা দিলে, সে সময়েই করণীয় নিধার্রণ করা হবে। আর যদি দলের চেয়ারপারসন এবং দলের সিদ্ধান্তে অন্য কেউ মনোনয়ন পায় তারা তার পক্ষেই কাজ করবেন।

সমীরণ দেওয়ান সম্পকের্ বলেন, তিনি কেন্দ্রের সদস্য। কিন্তু মাঠে-ময়দানে কোথাও নেই। এমনকি দলীয় কাযার্লয়ে আসেন না।

এ ব্যাপারে সমীরণ দেওয়ান বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের সদিচ্ছায় অতীতেও দলের জন্য কাজ করেছেন। তিনি তাকে মূল্যায়ন করেছেন। এবারও মনোনয়ন চাইবেন। না পেলেও ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের সাথেই থাকবেন।

জাতীয় পাটির্ : এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৯ সালে খাগড়াছড়িতে ডজনে ডজন নেতা সৃষ্টি হয় বিতকির্ত ‘স্থানীয় সরকার পরিষদ (বতর্মান পাবর্ত্য জেলা পরিষদ)’ নিবার্চনের মাধ্যমে। নব্বইয়ে এরশাদ সরকারের পতনের পর পর সবাই রাতারাতি হয়ে উঠেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র নেতা। ১৯৮৬ ও ৮৮ সালের নিবার্চনে জাতীয় পাটির্ থেকে দুই দুইবার নিবাির্চত সংসদ সদস্য একেএম আলিমউল্লাহ অনেকদিন ধরেই জেলা আওয়ামলিীগের উপদেষ্টা। জেলা পযাের্য়ও দলটির সাংগঠনিক অবস্থা অনেক দূবর্ল। কিন্তু ২০১৫ সালের নিবার্চনে বতর্মান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পাটির্র পেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পাটির্র আহবায়ক সোলায়মান আলম শেঠ নিবার্চনে অংশগ্রহণ করেন। সোলায়মান আলম শেঠ গত ২ নভেম্বর খাগড়াছড়ির কমর্রত সাংবাদিকদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় খাগড়াছড়ি আসনে তার দল থেকে প্রাথীর্তা ঘোষনা দিয়ে বলেন, তিনি মনোনয়ন পেয়ে নিবাির্চত হলে এ আসনের সকল জনসাধারনের আত্মসামাজিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যত আয়বধর্নমুলক কমর্পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করে যাবেন। পাশাপাশি স্থায়ী শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় একাগ্রতার সহিদ কাজ করে যাবেন।

ইউপিডিএফসহ অন্যান্য আঞ্চলিক দল : ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালের নিবার্চনে এই আসনের পাহাড়িরা অন্ধের মতো আওয়ামী লীগ প্রাথীের্ক ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করলেও ‘শান্তিচুক্তি’র ইস্যুতে ২০০১ সালের নিবার্চনে বিপুল ভোটে জয় ছিনিয়ে নেন, বিএনপি’র প্রাথীর্ ওয়াদুদ ভ‚ইয়া। সেই নিবার্চনে মাত্র তিন বছর বয়সী আঞ্চলিক দল ‘ইউপিডিএফ’র ব্যানারে প্রথমবারের মতো নিবার্চনে ৩২ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসা।

নবম এবং দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনেও আওয়ামী লীগের বিপরীতে এই দলের প্রাথীর্ প্রসিত বিকাশ খীসা ও উজ্জল স্মৃতি চাকমা পান ষাট হাজারের বেশি ভোট। ফলে সময় যতই গড়াচ্ছে ক্রমেই আঞ্চলিক এই রাজনৈতিক দলটি, আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে হানা দিচ্ছে অসম গতিতে। তাই আগামী নিবার্চনে বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগের জন্য ইউপিডিএফ সমথির্ত প্রাথীর্, রীতিমতো মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে চাকমা-মারমা ও ত্রিপুরা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ইউপিডিএফের জোরালো সাংগঠনিক শক্তির বিপরীতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে।

এছাড়া খাগড়াছড়িতে চর মোনাই পীরের দল ‘ইসলামী আন্দোলন’, ইসলামী ঐক্যজোট, জাকের পাটির্, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মাকর্সবাদী), জাসদ (ইনু), ন্যাশনাল পিপলস পাটির্ (এনপিপি)-র নিবার্চনে প্রাথীর্ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22714 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1