শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাধ্যমিকের নতুন বই নিয়ে অনিশ্চয়তা

যাযাদি রিপোটর্
  ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
বিনা মূল্যের বই বিতরণের প্রস্তুতি

মাধ্যমিক পযাের্য় বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণ নিয়ে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। দ্রæত এ সংকট নিরসন না হলে নিধাির্রত সময়ে শিক্ষাথীের্দর হাতে বই পৌঁছানো অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এখনো নিধাির্রত সময়ে উপজেলা পযাের্য় বিনামূল্যের বই পৌঁছায়নি। তাই নতুন করে আরও ৩০ দিন সময় বাড়ানো হয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোডর্ (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে।

এনসিটিবির তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে বই পৌঁছেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উপজেলা পযাের্য় বই পৌঁছেছে ৫৫ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে ২০১৯ শিক্ষাবষের্র জন্য ছাপার আদেশ দেয়া ৩৬ কোটি ছয় লাখের বেশি বইয়ের মধ্যে এনসিটিবির তথ্যানুসারে অবশিষ্ট ২০ কোটি বা ৪০ শতাংশ বই কবে ছাপা হবে, কখন সেগুলো উপজেলা পযাের্য় বা বিদ্যালয়ে পৌঁছবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন, বই ছাপার কাগজ সংকট, পরিবহন সমস্যাসহ নানা কারণে অবশিষ্ট বই ছাপা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মুদ্রণ শিল্প সমিতির অভিযোগ, এনসিটিবি পাঠ্যবই ছাপার কাজ মনিটরিং, সরবরাহ, অনুমোদন এবং পরিবহনে অসহযোগিতা ও বাধা সৃষ্টি করছে।

এনসিটিবি ও মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক সূত্র জানায়, প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহ কিছুটা হলেও মাধ্যমিকের বই নিয়ে বেশি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময় মতো বিল না পেলে এবং মিলগুলো সময়মতো কাগজ সরবরাহ না করলে মাধ্যমিকের বই ছাপা ও সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এমন প্রেক্ষাপটে, গত ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে এনসিটিবিকে চিঠি দিয়ে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত। অপরদিকে গত সপ্তাহে এনসিটিবিতে যান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি পাঠ্যবইয়ের ছাপা ও বিতরণের সবের্শষ পরিস্থিতি নিয়ে কমর্কতাের্দর সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবার প্রায় ৩৬ কোটি পাঠ্যবই বিতরণ হবে। এর মধ্যে ২১ কোটি বই ইতোমধ্যে জেলা-উপজেলা পযাের্য় পৌঁছে গেছে।’ বাকি বইগুলো ডিসেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য নিদের্শনা দেন মন্ত্রী। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ কাজে কেউ বাধা সৃষ্টি করবেন না। সবাই সহযোগিতা করবেন।

এনসিটিবির একাধিক সূত্র ও মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শেষ পযাের্য় রয়েছে। অবশিষ্ট বই ছাপার জন্য কাগজ পাওয়া গেলে এবং এনসিটিবি থেকে বিল পাওয়া সাপেক্ষে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা গেলেই মাধ্যমিকের কাজে হাত দেয়া হবে।

এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী এনসিটিবি পরিদশর্ন করতে এলে, আমরাও তার সঙ্গে কথা বলি। ২০১০ সাল থেকে তিনি আমাদের যেভাবে সহায়তা ও সমথর্ন দিয়ে এসেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। বতর্মান সমস্যাগুলো তার সমানে তুলে ধরা হয়। শিক্ষামন্ত্রী আমাদের সহায়তা করবেন বলে প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।’

এনসিটিবিকে চিঠি দেয়ার কথা স্বীকার করে শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, ‘এনসিটিবি কিছু অনাকাক্সিক্ষত সমস্যা সৃষ্টি করছে। এসব নিয়ে আলোচনা এবং তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য লিখিতভাবে এনসিটিবিকে জানানো হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে এনসিটিবি বই ছাপার কাজে যতটুকু সহায়তা করেছে এবার ঠিক ততটুকুই অসহযোগিতা করছে।’

সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী এনসিটিবিতে আসেন রুটিন ওয়াকর্ হিসেবে। পাঠ্যবই নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সময়মতোই শিক্ষাথীের্দর হাতে বই পৌঁছাবে। মন্ত্রী স্যারের কাছে সাবির্ক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।’

মুদ্রণ শিল্প সমিতির চিঠি সম্পকের্ তিনি বলেন, ‘চিঠিতে কী লেখা হয়েছে, এখনো দেখিনি। এটা ফাইল নোট হয়ে আমার কাছে আসবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভারতীয় মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান পরিদশের্ন যাওয়া এনসিটিবির মনিটরিং টিমের প্রতিবেদন দিয়ে কী হবে? তাদের ৫৬ লাখ বই ইতোমধ্যে উপজেলা পযাের্য় পৌঁছে গেছে। অবশিষ্টগুলো আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই দেশে প্রবেশ করবে, ফলে সে বই নিয়ে কোনো টেনশন নেই।’

জানা গেছে, ঢাকা, রাজশাহী ও বগুড়ার সাতটি বড় প্রতিষ্ঠান এখন পযর্ন্ত একটি বইও দেয়নি। তারা বিল না পাওয়ায় বই ছাপার কাজ কমিয়ে দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাগজ কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এছাড়া বিলের টাকা দিচ্ছে না এনসিটিবি। বই ছাপা হলেও পরিবহন সংকটে আগে একাধিক লট পথে আটকে ছিল। এখন আবারও রাস্তায় বই পড়ে থাকলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবে। তাই সমস্যা সমাধানের জন্য মুদ্রণ নেতাদের কাছে প্রতিকার চেয়েছি, তারা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। দেখা যাক কী হয়।

মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে বই পরিবহনে পুলিশের নানা ধরনের হয়রানির ব্যাপারে অন্য বছর এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এবার তা শেষ বেলায় এসে নেয়া হয়েছে। ফলে বই পরিবহনকারী ট্রাক-ভ্যানগুলো পথে পথে নানা ধরনের বাধার মুখে পড়ে। ফেরিতে দু-তিনদিন বিলম্ব এবং লাইনে পড়ে থাকতে হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ফেরিতে মন্ত্রী-এমপিদের মতো অগ্রাধিকার পেয়েছিল বই পরিবহনকারী ট্রাক-ভ্যান। এবার উল্টো ঘটছে।

জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে বই ছাপা, মনিটরিং ও বিতরণে এনসিটিবি সবার্ত্মক সহায়তা করেছিল। কিন্তু এ বছর শুরু থেকেই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে দেশীয় মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ছাপাখানাগুলোতে এনসিটিবির মনিটরিং টিম পরিদশের্ন গেলেও সময়মতো কাগজ ও ছাপার মানের অনুমোদন দিতে নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। ফলে ছাপার কাজ শেষ করতে পারছে না মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকিছু সুস্পষ্ট অভিযোগ এনসিটিবিতে দেয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একই ধরনের অভিযোগ পাঠ্যবই সরবরাহ ও পরিবহনের ক্ষেত্রেও ঘটছে। ফলে সময়মতো বই সরবরাহ ও পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছে।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এনসিটিবি মুদ্রণকারীদের সব ধরনের সহায়তা আগের মতোই দিচ্ছে। কোনো ধরনের সমস্যার কথা জানার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমর্কতার্রা সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22726 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1