শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচয় তার ‘অজানা মহিলা’

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
হাসপাতালের বেডে অজ্ঞাত সেই বৃদ্ধা

হাসপাতালের ফাইলে পরিচয় হিসেবে কোথাও লেখা আছে ‘অজানা মহিলা’ আবার কোথাও ইংরেজিতে ‘আননোন প্যাসেন্ট’। বয়সের ভারে ন্যুব্জ সত্তরোধ্বর্ এই নারীর শরীরে এক টুকরো কাপড়ও নেই। কেউ হয়তো হাসপাতালের সাদা বেড কভার গায়ে তুলে দিয়েছিল, তাও অচেতন দেহের পাশে পড়ে আছে। মাস খানেকেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়াডের্র সামনের মেঝেতে পড়ে আছেন এই বৃদ্ধা, দেখার কেউ নেই।

গত বুধবার রাত ১০টার দিকে বৃদ্ধাকে এমন অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আশপাশের মানুষ ও আয়া-নাসের্দর কাছ থেকে জানতে চেয়েও তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্য আলি ইউসুফ বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে কে বা কারা এই মহিলাকে এনে হাসপাতালে ভতির্ করান। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর এখানেই পড়ে আছেন। তিনি চলাফেরাও করতে পারেন না, কথাও বলেন না। যতটুকু জেনেছি, তিনি মানসিক রোগী, কোনো কিছুই চিনতে পারেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের কোনো আয়া দয়াপরবশ হয়ে খাইয়ে দিলে খান, নয়তো খান না; এখানেই পড়ে থাকেন। শরীরের অবস্থা তেমন ভালো নয়। কখনও তার খেঁাজ নিতে কাউকে আসতে দেখিনি।’

ওই বৃদ্ধার পাশে পড়ে থাকা ফাইল ঘেঁটে জানা যায়, গত ৯ অক্টোবর তাকে হাসপাতালের ১৮ নম্বর ওয়াডের্ ভতির্ করা হয়। প্রথম দিকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোটর্ পাওয়া গেলেও বতর্মানে তার অবস্থা কী সে সম্পকের্ তেমন কোনো তথ্য নেই।

এ বিষয়ে জানতে ১৮ নম্বর ওয়াডের্র বেশ কয়েকজন সিনিয়র নাসর্ ও আয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা বিষয়টি হেলায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যেন এক অচ্ছুত নিয়ে কেন এত মাথাব্যথা! এ সময় তারা এ প্রতিবেদকের কাছে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘উনি আপনার কী হন?’ চড়া গলায় বলেন, ‘আপনার প্রয়োজন হলে আপনি নিয়ে যান।’ সরকারি হাসপাতালের কমর্চারী হয়েও রাষ্ট্রের নাগরিকের প্রতি এমন অবহেলা যেন তাদেরই মানায়!

কারও সাহায্য না পেয়ে বৃদ্ধার পাশে পড়ে থাকা ফাইল ঘেঁটে পাওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে জসিম নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার গ্রাম পুলিশ।

বৃদ্ধার পরিচয় জানাতে গিয়ে জসিম বলেন, ‘এই বৃদ্ধা একসময় কক্সবাজারের পেকুয়া চৌমুহনি এলাকায় থাকতেন। কেউ তার পরিচয় জানেন না। অনেক বছর তিনি চৌমুহনিতে রাস্তার পাশে কাটিয়েছেন। একসময় রাস্তার ধারে বসে কোরআন শরিফ পাঠ করেই দিন কাটাতেন ওই বৃদ্ধা। স্থানীয়রা তাকে খাবার-কাপড় দিয়ে সহায়তা করতেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে বৃদ্ধার শরীর খারাপ হতে থাকে, তিনি কাউকে চিনতে পারছিলেন না। প্রায় মাসখানেক আগে তাকে পেকুয়া উপজেলা হাসপাতালে ভতির্ করা হয়। কিন্তু অবস্থার আরও অবনতি হলে, পেকুয়া উপজেলার নিবার্হী কমর্কতার্ মাহবুবুল করিমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা চমেক হাসপাতালে ভতির্র সিদ্ধান্ত নেন। ইউএনও সাহেবের নিদেের্শ আমি নিজে গিয়ে তাকে হাসপাতালে ভতির্ করিয়ে আসি।’

এ সময় বৃদ্ধার বতর্মান দুরবস্থার কথা জসিমকে জানালে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে উনাকে সমাজসেবা বিভাগের পক্ষ থেকে দেখাশোনার কথা ছিল। এত বড় হাসপাতালে উনার এই অবস্থা হবে জানলে আমরা উনাকে পেকুয়াতেই রেখে দিতাম। স্থানীয়রা উনাকে ভালোবাসেন, এখানে তারা বৃদ্ধার কম-বেশি দেখভালও করতেন।’

রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের সমাজসেবা অফিসে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। পেকুয়া উপজেলার নিবার্হী কমর্কতার্ মাহবুবুল করিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

শীতের এই রাতে যাওয়ার সময় বৃদ্ধার গায়ে হাসপাতালের সাদা বেড কভারটি টেনে দিয়ে ফিরে আসেন অসহায় এই প্রতিবেদক ... । মনে একটাই প্রশ্ন ভাসতে থাকে, রাষ্ট্র-সমাজ তার জ্যেষ্ঠ নাগরিকের প্রতি কীভাবে এড়াতে পারে নিজের দায়?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22785 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1