শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
একাদশ সংসদ নিবার্চন

একদিকে বিএনপি নেই অন্যদিকে নেই নৌকা

যাযাদি রিপোটর্
  ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ঢাকা মহানগরীর আসনগুলোর মধ্যে খানিকটা ভিন্ন চিত্র ঢাকা-৬ আসনের; এখানে বিএনপির কোনো প্রাথীর্ না থাকলেও প্রতীক ধানের শীষ রয়েছে, আবার নৌকা প্রতীক না থাকায় লাঙ্গলের জন্য ভোট চাইতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতা-কমীের্দর।

পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, ওয়ারী, গেÐারিয়ার পুরোটা এবং কোতোয়ালি ও বংশালের একাংশ নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে প্রাথীর্ নিবার্চনে দুই প্রধান দলই একই রকম ছক কষেছে।

বিএনপি আসনটি ছেড়ে দিয়েছে তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দল গণফোরামের নিবার্হী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীকে, তিনি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই ভোট করছেন।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দিয়েছে তাদের মহাজোট শরিক জাতীয় পাটির্র সভাপতিমÐলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদকে, তিনি দলীয় প্রতীক লাঙ্গল ছাড়েননি।

পুরান ঢাকার এই আসনে একসময় সংসদ সদস্য ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; তার পথ ধরে ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনা এই আসনে প্রাথীর্ হয়েছিলেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে তাকে হারতে হয়েছিল বিএনপির সাদেক হোসেন খোকার কাছে।

পুরান ঢাকার খোকা এরপর থেকে আসনটি অনেকটা নিজের করে নিয়েছিলেন; ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে প্রাথীর্ বদলেও আসনটির দখল নিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। খোকা পরে ঢাকার মেয়রও হয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নিবার্চনে ঢাকা নগরীর সবগুলো আসনে আওয়ামী লীগ জিতলেও ঢাকা-৭ আসনে খোকা ঠিকই ধানের শীষ উঁচু করে রেখেছিলেন।

কিন্তু ২০০৮ সালের পালাবদলের ঢেউয়ে খোকার দুগর্ হাতছাড়া হয়, তিন যুগ পর ঢাকা-৬ আসনে নৌকার বিজয় পতাকা ওড়ান মিজানুর রহমান খান দীপু। এই নিবার্চনে খোকার ভোটে ভাগ বসিয়েছিলেন বিকল্প ধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও।

দীপুর মৃত্যুর পর ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নিবার্চনে এই আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলে সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন জাতীয় পাটির্র সভাপতিমÐলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।

এখন জাতীয় পাটিের্ত থাকলেও একসময় আওয়ামী লীগেই ছিলেন এই ফিরোজ রশীদ; ছাত্রলীগ থেকে পুরান ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপিও নিবাির্চত হয়েছিলেন তিনি।

ফিরোজের মধ্যে আওয়ামী লীগের ছেঁায়া থাকলেও ধানের শীষের প্রাথীর্ ঠিক বিপরীত; হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী তার ধারার বিপরীতে গিয়েই এবার ধানের শীষের প্রাথীর্ এখানে।

বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নিজের পুরনো দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নামা কামাল হোসেনের দল গণফোরামের সুব্রতসহ সব প্রাথীর্ই ধানের শীষ প্রতীক নিয়েছেন।

কয়েকটি মামলায় দÐ নিয়ে চিকিৎসার জন্য কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন এবার নিবার্চন করতে চেয়েছিলেন। খোকার সমথর্করাও চাইছিলেন তার ছেলেকে; কিন্তু জোটের স্বাথের্ নিজেকে ‘বলি’ দিয়েছেন ইশরাক।

‘বাবার কথায়’ ইশরাক মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পুরান ঢাকার এলাকাটিতে বিএনপি জোটের একক প্রাথীর্ এখন সুব্রত, যিনি ভোট করতে চাইছিলেন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে। কিন্তু সেখানে জোটের নেতা অলি আহমদ থাকায় তাকে সরে আসতে হয়। দুই লাখ ৬০ হাজার ভোটারের ঢাকা-৬ আসনে ফিরোজ রশীদ ও সুব্রত চৌধুরী ছাড়াও ছয়জন প্রাথীর্ হয়েছেন। তবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা ধানের শীষ ও লাঙ্গলের মধ্যেই যে হচ্ছে, তা স্পষ্ট।

বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি হাজ্জাজ এ আসনে হারিকেন মাকার্য় প্রাথীর্ হয়েছেন। তার দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) নিবন্ধন না থাকায় তিনি বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রতীক নিয়েছেন।

এ আসনের অন্য প্রাথীর্রা হলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটির্র মো. আবু তাহের হোসেন (কাস্তে), জাতীয় পাটির্-জেপির সৈয়দ নাজমুল হুদা (বাইসাইকেল) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাজী মো. মনোয়ার খান (হাতপাখা), গণফ্রন্টের আহমেদ আলী শেখ (মাছ), ন্যাশনাল পিপলস পাটির্র মো. আক্তার হোসেন (আম)।

কী বলছেন ভোটাররা

ধোলাইখাল এলাকায় গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রেতা মো. রতন মিয়া। দীঘির্দন ধরে এই এলাকাতেই তার বসবাস।

নিবার্চনের খবর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকাটা তো বিএনপির ছিল। বারবার খোকা সাহেব নিবাির্চত হয়েছেন। এই যে চারপাশে যা দেখছেন, সবাই বিএনপি করে।

“এখানে এমনও লোক আছে তারা যদি রাস্তায় নামে, তাদের একজনের ডাকে হাজার হাজার মানুষ নামবে। কিন্তু কেন যেন তারা সবাই চুপচাপ!’

রোববার এই নিবার্চনী এলাকা ঘুরে ফিরোজ রশীদের পোস্টার ও প্রচার চোখে পড়লেও ধানের শীষের প্রাথীর্র পোস্টার ছিল না বললেই চলে।

ধানের শীষের প্রচারে বাধা দেয়া হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে রতন মিয়া বলেন, ‘আমি তো এমন দেখিনি যে পোস্টার লাগানোর সময় কেউ কাউকে বাধা দিয়েছে। অনেকের পোস্টার লাগানো হচ্ছে, ধানের শীষের কোনো পোস্টার নাই কেন, বুঝতে পারলাম না।’

ভোট দিতে আগ্রহী রতন শান্তিপূণর্ নিবার্চন চান। তিনি বলেন, ‘জোর করে ভোট নিয়ে জেতার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই।’

ওয়ারী, গেÐারিয়া, কোতোয়ালি এলাকায় রিকশা চালান ঝিনাইদহের যুবক ইকবাল হোসেন।

প্রচার কার বেশি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে-সেখানে লাঙ্গলের জন্য ছোট ছোট মিছিল দেখি, হঠাৎ হঠাৎ সমাবেশও করে। আবার নৌকাও বলে। ওয়ারী এলাকায় তো ধানের শীষের কোনো পোস্টার দেখলাম না।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফিরোজ রশীদের পক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাকমীর্রা ছাড়াও থানা ও ওয়াডর্ নেতরাও প্রচারে নেমেছেন। কিন্তু সুব্রত চৌধুরীর জন্য বিএনপির কোনো নেতাকমীের্ক প্রচারে নামতে দেখা যায়নি।

স্থানীয় একটি স্কুলের খÐকালীন শিক্ষক আব্দুল হালিম বলেন, ‘সবাই মাঠে আসুক, তখন যদি কেউ কাউকে বাধা দেয় মিডিয়া ডেকে বলা হোক, ইসিতে গিয়ে অভিযোগ করুক।’

আশাবাদী ফিরোজ, অভিযোগ সুব্রতর

১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে জমজমাট প্রচার চালাচ্ছেন জাতীয় পাটির্র ফিরোজ রশীদ। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কমীের্দরও দেখা যাচ্ছে।

প্রতিদিনই লিফলেটসহ পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন ফিরোজ রশীদ। গত ১২ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার প্রচার শুরুর সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচাযর্ মীজানুর রহমানও ছিলেন।

ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এই সরকারের উন্নয়ন কমর্কাÐের কারণে মানুষের ব্যাপক সাড়া আছে। এখানে নৌকা-লাঙ্গল এক। ইনশাল্লাহ এবারও লাঙ্গলের জয় হবে।’

অন্যদিকে গণফোরামের নিবার্হী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার তিন দিন পর প্রচারে নামলেও পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, শুক্রবার নামার পর গেÐারিয়া এলাকায় গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেন। পরদিন হাটখোলা এলাকায় তার কমীের্দর ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

সুব্রত বলেন, ‘আমার পোস্টার লাগাতে দিচ্ছে না। প্রচারণায় বের হলে হামলা করছে। যাদের নিয়ে গণসংযোগ করি তাদের সন্ধ্যার পর গ্রেপ্তার করে ফেলছে। নিবার্চনের তো কোনো পরিবেশই নেই।’

এ কারণে রোববার দুপুর পযর্ন্ত প্রচারে না গিয়ে নিজের নিবার্চনী প্রচার কাযার্লয়েই অবস্থান করছিলেন তিনি।

ধানের শীষের প্রাথীর্র অভিযোগের বিষয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমাদের কোনো কমীর্-সমথর্ক কাউকে বাধা দিচ্ছে না। তিনি আমার বন্ধু মানুষ, তাকে কেন আমাদের লোকেরা বাধা দেবে?”

সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘এসব বিষয়ে নিবার্চন কমিশন, রিটানির্ং অফিসে অভিযোগ দিয়েছি, থানায় অভিযোগ জানিয়েছি, কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না।’

বিরোধী জোটের প্রাথীর্র অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগরীর ১৫টি আসনের রিটানির্ং কমর্কতার্ (ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার) কে এম আলী আজম বলেন, ‘ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষের প্রাথীর্র কোনো অভিযোগ সম্পকের্ এই মুহূতের্ মনে পড়ছে না।

‘তবে আমাদের কাছে এই পযর্ন্ত তিন/চারটি অভিযোগ এসেছে। এগুলো সাথে সাথে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট সহকারী রিটানির্ং অফিসারদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<27657 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1