শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে যে কারণে কমছে বাংলাদেশি হত্যা

বিবিসি বাংলা
  ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:৪৭

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং আগামীকাল শুক্রবার তিন দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে যাচ্ছেন।

এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। ঢাকার বাইরে রাজশাহীতেও যাবেন তিনি।

কমর্কতার্রা বলছেন, সেখানে তিনি দুই দেশের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করবেন।

ধারণা করা হচ্ছে, রাজনাথ সিংয়ের এই সফরকালে সীমান্ত এলাকায় মাদক ও নারী-শিশু পাচারের মতো অপরাধ, হত্যাকাÐসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথাবাতার্ হতে পারে।

ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন এক সময়ে বাংলাদেশে যাচ্ছেন যখন বিএসএফের সৈন্যদের হাতে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমে গেছে।

বাংলাদেশে শীষর্স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পযর্ন্ত গত ছয় মাসে সীমান্তে বিএসএফের হাতে শারীরিক নিযার্তনে তিনজন নিহত হয়েছে এবং গুলিতে কেউ নিহত হয়নি।

কিন্তু ২০১৭ সালে সীমান্তে নিহত হয়েছিল ২৫ জন। তাদের মধ্যে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল বিএসএফের জওয়ানদের গুলিতে। ২০১৬ সালে নিহত হয়েছে ৩০ জন এবং ২০১৫ সালে ৪৬ জন।

তবে এ বছর যে তিনজন নিহত হয়েছে তারা ঠিক কী ধরনের নিযার্তনে মারা গেছে সেসব কারণের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বলা প্রয়োজন যে সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোটর্ থেকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব পরিসংখ্যান তৈরি করেছে।

বাংলাদেশের অন্য আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারও বলছে, এ বছর সীমান্তে বিএসএফের হাতে তিনজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। কিন্তু গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৯২। ২০১৬ সালে ৮৭ এবং ২০১৫ সালে নিহত হয়েছিল ১৩২ জন।

বাংলাদেশের মানবাধিকারকমীর্রা বলছেন, সীমান্ত-হত্যা বন্ধের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারত দুটো দেশের ইতিবাচক অবস্থানের কারণে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য রকমের উন্নতি ঘটেছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নিবার্হী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, এ ব্যাপারে ভারত সরকারের মনোভাবেরও বড় রকমের পরিবতর্ন ঘটেছে।

এ বিষয়ে একটি ঘটনার উদাহরণ দেন তিনি- মাস দুয়েক আগে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ২০ বছরের এক তরুণ বিএসএফের ছররা গুলিতে আহত হয়েছিলেন। এর প্রতিবাদ জানিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র বিভিন্ন পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে। তখন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে তাদের বলা হয়েছে যে ভারত সরকার ওই তরুণের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে।

শীপা হাফিজা বলেন, ‘আহত যুবককে ভারতে নিয়ে গিয়ে তাদের নিজেদের খরচে চিকিৎসা দিতে রাজি হয়েছে ভারত সরকার। এখন তার পাসপোটর্ তৈরির কাজ চলছে।’

সীমান্ত পরিস্থিতির এই উন্নতির পেছনে কী কাজ করেছে জানতে চাইলে শীপা হাফিজা বলেন, বিএসএফের সৈন্যদের হাতে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের নিহত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো খুবই সোচ্চার।

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ সরকার এসব সংগঠনের কথায় কান দিয়ে বিষয়টি ভারত সরকারের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরেছে।

‘তবে এই বিষয়টি যাতে শুধু দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। এটার প্রতিফলন ঘটতে হবে রাষ্ট্রীয় পযাের্য়র নীতিমালাতেও। তা নাহলে ভারত কিম্বা বাংলাদেশ- যে কোনো দেশে সরকার পরিবতের্নর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আবারও আগের পযাের্য় চলে যেতে পারে,’ বলেন শীপা হাফিজা।

বাংলাদেশ সরকারও বলছে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাবাহিনীর গুলিতে এখন আর কোনো হত্যাকাÐের ঘটনা ঘটছে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকায় হত্যাকাÐের ঘটনা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিএনপির আমলে এই হত্যাকাÐের ঘটনা প্রকট আকার ধারণা করেছিল। কিন্তু এরপরে আমাদের সরকারের আমলে আমরা এই হত্যাকাÐের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছি।’

ভারত সরকারও বলছে যে তাদের বাহিনীর সৈন্যদের হাতে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে না।

ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফের মহাপরিচালক কে. কে. শমার্ কয়েক মাস আগে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ভারতীয় সৈন্যরা এখন আর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে না।

প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার কারণে আমাদের জওয়ানদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। চোরাকারবারিরা জানে যে বিএসএফের সৈন্যরা গুলি করবে না, তাই তারা আমাদের উপর আক্রমণ করছে। কিন্তু তারপরেও বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে না। কারণ এই অস্ত্র আর ব্যবহার করা হবে না এটা আমাদের সরকারের সিদ্ধান্ত।

বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্ত প্রায় ২৫০০ মাইল লম্বা। এই সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম আর ভারতের অংশে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য মতে, ভারত সরকার সীমান্তে ২০০০ মাইলেরও বেশি লম্বা কঁাটাতারের বেড়া তৈরি করেছে। এই বেড়ার উচ্চতা প্রায় তিন মিটারের মতো।

অধিকার বলছে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফের হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বহু দিনের। তার মধ্যে রয়েছে নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা, নিযার্তন এবং অপহরণ। এসব ঘটনা আন্তজাির্তক চুক্তিরও লঙ্ঘন।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে বিশ্বের রক্তাক্ত সীমান্তগুলোর একটি উল্লেখ করে অধিকারের মানবাধিকারকমীর্রা এও বলছেন, শুধু তাই নয়, বিএসএফের জওয়ানরা অনেক সময় অবৈধভাবে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকেও বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর হামলা চালায় ও তাদেরকে অপহরণ করে থাকে।

অধিকারের হিসাবে অনুসারে ২০০০ সালের পর থেকে গত ১৮ বছরে বিএসএফ সৈন্যদের হাতে ১,১৩৬ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ২০০৬ সালে, ১৫৫ জন।

অধিকার বলছে, বিএসএফের হাতে গত ১৮ বছরে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১,৩৬০ আর সবচেয়ে বেশি অপহরণ হয়েছে ওই একই বছরে (২০০৬), ১৬০টি। তারপরে ২০১৩ সালে, ১২৭টি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<3174 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1