একই অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুনীির্ত দমন কমিশন (দুদক) এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এই অনুসন্ধান নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। একই বিষয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানের কারণে শেষ পযর্ন্ত জটিলতা তৈরি হয় কি না, তা নিয়েও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
যে অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান, তা হলো ক্রিসেন্ট গ্রæপের জালিয়াতি। রপ্তানি বিলের মাধ্যমে বিদেশে পণ্য সরবরাহ করে সে অথর্ ফেরত আনেনি ক্রিসেন্ট গ্রæপ। এভাবে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি অথর্ পাচার করার অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সংস্থা দুটি। জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় জালিয়াতির মাধ্যমে ওই অথর্ পাচারের পৃথক অনুসন্ধান প্রায় শেষও হয়েছে। শিগগির এ বিষয়ে মামলা করতে যাচ্ছে বলে সংস্থা দুটি জানিয়েছে।
দুদক জানিয়েছে, এখানে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে জনতা ব্যাংকের টাকা পাচার এবং আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। জনতা ব্যাংকের কমর্কতার্রা এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই এখানে দুদকের আওতাভুক্ত সম্পৃক্ত ধারার অপরাধ হয়েছে। মূলত জনতা ব্যাংকের কমর্কতাের্দর দুনীির্ত এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এখানে সম্পৃক্ত ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং পরবতীর্ পযাের্য় পাচার এবং মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ হয়েছে। তাই দুদক ছাড়া অন্য সংস্থার এ বিষয়ে মামলা করার আইনি ভিত্তি নেই।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) সহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে এক বছর আগে থেকে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষ করে ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোডের্ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তাদের অনুমোদন পেলে মামলা করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি অথর্পাচার-সংক্রান্ত, সে কারণে শুল্ক গোয়েন্দার এখতিয়ার আছে বিষয়টি নিয়ে কাজ করার।
কাগজে-কলমে ক্রিসেন্ট গ্রæপ চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছে হংকং ও ব্যাংককে। সেই রপ্তানি বিল কিনে গ্রæপটিকে নগদে টাকা দিয়েছে ব্যাংক। এখন রপ্তানির টাকা ফেরত আসছে না। ব্যাংক চাপ দেয়ায় মাঝে মধ্যে কিছু অথর্ আসছে দুবাই থেকে। যদিও আমদানিকারক দেশ থেকেই টাকা আসার কথা। তদন্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সরকার থেকে নেয়া নগদ সহায়তার টাকা দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছে গ্রæপটি।
গ্রæপটির রপ্তানির ৬৫৩টি বিলের টাকা দেশে ফেরত আসেনি। যার মূল্যমান বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৬৯ লাখ। এসব রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই কিনেছে হংকং ও থাইল্যান্ডের ৯টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় আছেন বাংলাদেশিরা। আবার পণ্য হংকংয়ে পাঠানো হলেও রপ্তানি বিল পাঠানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমদানি করা এসব প্রতিষ্ঠান ভুয়া। রপ্তানি ভতুির্কর টাকা অবৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়ে নিয়ে ফেরত এনেছে ক্রিসেন্ট গ্রæপ।
দুদক ও শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, দুটি সংস্থাই ব্যাংকের কাছ থেকে নানা নথিপত্র সংগ্রহ করেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই ও পযাের্লাচনা করে অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে জালিয়াতির পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকের করা তদন্ত প্রতিবেদনের বেশির ভাগ তথ্য মিলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে মাঠপযাের্য়র যেসব কমর্কতাের্ক দায়ের কথা বলা হয়েছে, তাদেরই চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ব্যাংকে শীষর্ পযাের্য়র নিবার্হী, পরিচালনা পষের্দর কাউকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মামলার পর তদন্ত পযাের্য় তাদের সংশ্লিষ্টতা ও দায়ের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
সূত্র বলছে, অনুসন্ধানে ক্রিসেন্ট গ্রæপের শীষর্ ব্যক্তিদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ হয়েছে। তারা হলেন ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টসের চেয়ারম্যান এম এ কাদের, পরিচালক সুলতানা বেগম ও রেজিয়া বেগম, লেসকো লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া এবং রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুন জাহান মীরা।
এ ছাড়া ব্যাংকারদের মধ্যে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. রেজাউল করিম (বতর্মানে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি), ডিজিএম মুহাম্মদ ইকবাল, এ কে এম আসাদুজ্জামান, এজিএম মো. আতাউর রহমান সরকার, এসপিও মো. খায়রুল আমিন, মো. মাগরেব আলী, অফিসার ইনচাজর্ (এক্সপোটর্) মোহাম্মদ রুহুল আমিন, সিনিয়র অফিসার ইনচাজর্ মো. সাইদুজ্জামান, মো. মনিরুজ্জামান ও মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।