মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য

গতি কমেছে আমদানি-রপ্তানিতে

২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫০৮ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে আমদানি বাবদ ব্যয় করতে হয়েছিল ৫২২ কোটি ডলার
যাযাদি রিপোটর্
  ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

গত ছয় মাস ধরে কমছে পণ্য আমদানি-ব্যয়। রপ্তানি আয়েও গতি নেই। আবার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সও আসছে ধীরগতিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবের্শষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে আমদানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরের তুলনায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে আমদানি ব্যয় কমেছে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫০৮ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে আমদানি বাবদ ব্যয় করতে হয়েছিল ৫২২ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক মাস আগে অথার্ৎ গত অক্টোবর মাসে আমদানিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

অথর্নীতিবিদরা বলছেন, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের শ্লথগতির কারণে দেশের পণ্য আমদানি-ব্যয় কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নিবার্চনকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের অনেকেই উৎপাদনে যায়নি। এ কারণে আমদানিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়াকেও আমদানিতে ভাটার পড়ার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন ড. জায়েদ বখত। তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে বেশি অথর্ খরচ হয়। ফলে অনেকেই আমদানিতে অনুৎসাহিত হয়। তবে আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো, সরকারকে এখন আগের মতো খাদ্য ও খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হচ্ছে না। গত ডিসেম্বর মাসে নিবার্চনে ব্যস্ত থাকায় সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যও আগের মতো আমদানি করেনি। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আগের মতো আমদানি করতে হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অথর্বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৪৫৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত আগস্ট মাস থেকে আমদানি ব্যয় কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের আগস্টের তুলনায় ২০১৮ সালের আগস্টে আমদানি কমেছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। আবার গত অক্টোবর মাসে আমদানিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, গত অথর্বছরে (২০১৭-১৮) দেশে পঁাচ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়, যা আগের অথর্বছরের চেয়ে ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শুধু আমদানিতে ভাটা পড়েনি, রপ্তানিতে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ডিসেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় মাত্র ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি অথর্ দেশে এসেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ৩৪২ কোটি ৬১ লাখ ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৩৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত অথর্বছরের শেষ মাস অথার্ৎ ২০১৮ সালের জুনে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস তিন দশমিক ০৯ শতাংশ। একইভাবে ২০১৮ সালের মাচর্ মাসেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস এক দশমিক ৩৮ শতাংশ।

আমদানি-রপ্তানি ছাড়াও রেমিটেন্স আয়ও কাক্সিক্ষত হারে বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা ১২০ কোটি ২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে মাত্র ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসীরা ১১৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। ধীরগতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজাভের্ও টান পড়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) রিজাভের্র পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৩৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। তারপর থেকে রিজাভর্ নিম্নমুখী।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্স তিন শতাংশ কম পাঠিয়েছে। নভেম্বর মাসে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, যা ২০১৭ সালের একই সময়ে ছিল ১২১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।

তবে বিদায়ী বছরে (২০১৮ সালে) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন এক হাজার ৫৫৪ কোটি লাখ ডলার (১৫.৫৪ বিলিয়ন), যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ ৩০ হাজার ৫৪১ কোটি টাকারও বেশি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নিবার্হী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্নমুখী উদ্যোগের রেমিটেন্স ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তিনি মনে করেন, আগামী দিনেও রেমিটেন্স ইতিবাচক ধারায় থাকবে।

এদিকে এই অথর্বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দঁাড়িয়েছে ২৫৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অথর্বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৪৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

সাধারণত, কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তভুর্ক্ত হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<32823 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1