শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘ব্রেইন ডেড’ রোগীর থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন হবে

যাযাদি রিপোটর্
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০৪
কিডনির প্রতীকী ছবি

ক্লিনিক্যালি ডেড বা ব্রেইন ডেড রোগীদের থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে পাশের দেশ ভারত ও শ্রীলংকায় ‘ব্রেইন ডেড’ রোগীদের থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হলেও বাংলাদেশে এমনটা আগে কখনো হয়নি। নতুন এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশে এলে অনেক কিডনি রোগীর জীবন বঁাচানো সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। সাধারণত দুইভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করা যায়। জীবিত মানুষের থেকে এবং ব্রেইন ডেড রোগীর থেকে। তবে যে পরিমাণ কিডনির চাহিদা রয়েছে সেটা জীবিত দাতা বা লিভিং ট্রান্সপ্ল্যান্ট থেকে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ কারণে ব্রেইন ডেড রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপনের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। গত বছরের জানুয়ারিতে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন-২০১৭ গেজেট আকারে প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনানুযায়ী যদি চিকিৎসকরা কোনো রোগীকে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করেন এবং ওই রোগীর নিকটাত্মীয়রা যদি রোগীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্যকে দেয়ার লিখিত অনুমোদন দেন তাহলে ট্রান্সপ্লান্ট টিম ওই রোগীর শরীর থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারবে। ব্রেইন ডেথ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো দাবিদার না থাকলে ঘোষণাকারী হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রদানের অনুমতি দিতে পারবেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট নামে এই প্রক্রিয়াটিকে বাংলাদেশে পরিচিত করাতে কিডনি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পঁাচ সদস্যের একটি কিডনি বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় এসেছেন। তারা প্রাথমিক অবস্থায় ঢাকার পঁাচটি হাসপাতাল পরিদশর্ন করবেন। সেখানে কোনো ‘ব্রেইন ডেড’ রোগী পাওয়া গেলে ওই দলটি দেশের কিডনি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করবেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), বারডেম, কিডনি ফাউন্ডেশন ও সিএমএইচÑ এই পঁাচ হাসপাতালের যেখানেই দাতা পাওয়া যাবে, সেখানে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের অস্ত্রোপচার করা হবে। যদি ‘ব্রেইন ডেড’ রোগী পাওয়া না যায়, তাহলে কিডনি বিশেষজ্ঞদের বিশেষ কমর্শালার আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশে কোরিয়া-কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট টিমের কো-অডিের্নটর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. এএসএম তানিম আনোয়ার বলেন, ‘দেশে বছরে ৫০০০ কিডনির চাহিদা থাকলেও কিডনি মেলে মাত্র ১২০টি। এই নগণ্য সংখ্যক কিডনি প্রতিস্থাপন করা হতো জীবিত মানুষের শরীর থেকে। যাদের বেশিরভাগই রোগীর নিকট আত্মীয়।’ আর যারা কোনো দাতা পান না তাদের ধঁুকে ধুঁকে মরতে হয়। না হলে দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করাতে হয়। ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশে এই লিভিং ট্রান্সপ্লান্ট শুরু হয়। ব্রেইন ডেড রোগী কারা? ব্রেইন ডেড বলতে বোঝায় যখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কমিটি লাইফ সাপোটের্ থাকা কোনো রোগীকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করেন। মেডিসিন বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন, নিউরোলজি ও অ্যানেস্থেশিওলজির কমপক্ষে তিনজন চিকিৎসক নিয়ে গঠিত কমিটি ব্রেইন ডেথ হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন। হাসপাতালের নিবিড় পযের্বক্ষণ কেন্দ্রে লাইফ সাপোটের্ থাকলেই যে রোগী ব্রেইন ডেড হবেন সেটা ভুল ধারণা। চিকিৎসকদের মতে, ব্রেইন ডেড রোগীর মস্তিষ্ক পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। শুধু হৃদপিÐটি যন্ত্র দিয়ে সচল রাখা হয়। এমন অবস্থায় রোগীর বেঁচে ফেরার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। তবে অঙ্গ দান করা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এখন যে ভ্রান্ত ও নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, সেখান থেকে মানুষকে বের করে আনতে সবর্স্তরে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন ডা. আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘এখন রক্ত দানের মতো কিডনি বা লিভার দানের বিষয়েও মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’ বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে