শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
চকবাজার ট্র্যাজেডি

আবারও 'ওয়েক আপ কল'?

জমজমাট ওই এলাকায় বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ছিল অনেক গ্যাস সিলিন্ডার। আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনেও ছিল রংসহ বিভিন্ন কেমিক্যালের দোকান ও গুদাম
যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

নয় বছর আগে পুরান ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকান্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদামগুলো সরানোর দাবি উঠেছিল জোরেশোরে, কিন্তু তা না হওয়ার মধ্যে চকবাজারের অগ্নিকান্ড ঘটল, যাতে নিহত হলো অসংখ্য মানুষ।

নিমতলীর এক কিলোমিটারের মধ্যে চকবাজার চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশের কয়েকটি ভবনে বুধবার রাতে যে আগুন লাগে, তা ভয়াবহ রূপ নেয়ার জন্য দাহ্য পদার্থের অনিরাপদ গুদামকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রাসহ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত ১০টার দিকে আগুন প্রথমে লাগে ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চারতলা ভবনে, তারপর পাশের আরও চারটি ভবনে ছড়ায়।

ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের ওই ভবনের নিচে ছিল দোকানপাট, দোতলাজুড়ে ছিল প্রসাধন সামগ্রীসহ বিভিন্ন পস্নাস্টিক পণ্যের গুদাম। উপরের দুটি তলায় ছিল বাসা।

রাতে অগ্নিনির্বাপক বাহিনী যখন কাজ করছিল, তখন দোতলার আগুন নেভাতেই বেশি বেগ পেতে হয়েছিল।

সকালে আগুন নিভিয়ে ফেলার পর সেখানে অসংখ্য পারফিউম, এয়ার ফ্রেশনারের কৌটা ও পুড়ে যাওয়া পস্নাস্টিক দেখতে পাওয়া যায়।

এছাড়া জমজমাট ওই এলাকায় বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় ছিল অনেক গ্যাস সিলিন্ডার। আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনেও ছিল রংসহ বিভিন্ন কেমিক্যালের দোকান ও গুদাম।

শরিফ নামে ওই এলাকার একজন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'যেভাবে আগুন লাগুক না কেন দোতলার গুদামে দাহ্য জাতীয় পদার্থ থাকার কারণে রাস্তার এপাশের-ওপাশের ভবনে আগুন ছড়িয়েছে।'

তিনি বলেন, 'ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চারতলার ভবনের নিচতলায় বিভিন্ন দোকান আর দোতলার বডি স্প্রেসহ নানা দাহ্য জাতীয় পদার্থের গুদাম থাকায় এত বড় ঘটনা ঘটেছে।'

ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের ভবন থেকে আগুন লাগার পর প্রথমে পাশের দুটি ভবনে ছড়ায়, যেখানে একটি রাজমনি হোটেল নামে একটি রেস্তোরাঁ ছিল। পরে সরু গলির মধ্যে ওপাশের দুটি ভবনেও ছড়ায় আগুন।

সড়কে পড়ে আছে অসংখ্য পারফিউম, এয়ার ফ্রেশনারের কৌটাসহ পলিথিন তৈরির কাঁচামাল। বাশার নামে হায়দার বক্স লেনের একজন বাসিন্দা বলেন, আগুনের সময় রাজমনি হোটেলের সামনের রাস্তায় কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণের পর ওই গ্যাস সিলিন্ডারেও আগুন লেগে ভবনে ও রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় পুলিশ প্রধান মো. জাবেদ পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, 'এখানে অনেক কেমিক্যালের গোডাউন ছিল। তাছাড়া (বিভিন্ন দোকানে সরবরাহের জন্য) গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে একটি পিকআপও ছিল।'

এই অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত কী- তা জানাতে না পারলেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার জন্য দাহ্য পদার্থকে দায়ী করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ সকালে সাংবাদিকদের বলেন, রাসায়নিকসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন পুরো নেভাতে অনেক সময় লাগছে।

২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির জন্য কেমিক্যালের গুদামগুলোকে দায়ী করা হয়। তারপর তদন্ত কমিটির সুপারিশে কেমিক্যালের অনিরাপদ গুদামগুলো সরিয়ে নেয়ার সুপারিশও করা হয়েছিল।

দুই বছর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পুরান ঢাকার কেমিক্যালের গুদাম সরিয়ে নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

তার মধ্যেই ফের একই ধরনের ঘটনা ঘটল পুরান ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা চকবাজারে। পস্নাস্টিকসহ বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি এই বাজারে অধিকাংশ ভবন অনেক পুরনো, একটির সঙ্গে আরেকটি লাগানো, ফলে আগুন লাগলে তা দ্রম্নত ছড়ায়।

আর রাস্তা সরু ও আশপাশে খোলা জায়গা না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ করতেও বেগ পেতে হয় অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মীদের।

সকালে সে কথাই বলছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক শাকিল নেওয়াজ। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বৈদু্যতিক তারের কথাও বলেন তিনি।

নিমতলীর ঘটনা স্মরণ করেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'এটা আমাদের ভালো একটা লেসন দিয়েছে, ওয়েক আপ কল দিয়েছে, তোমরা সতর্ক হও।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<37793 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1