মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান রানাকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।
তবে টাঙ্গাইলে যুবলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় গত সপ্তাহে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়ে যাওয়ায় এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না এই আওয়ামী লীগ নেতা।
হাইকোর্টে রানার জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উলস্নাহ।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির উলস্নাহ বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় আজ আমানুর রহমান রানাকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে যাবে।'
এদিকে টাঙ্গাইলে যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুনকে হত্যার মামলায় গত ৬ মার্চ রানাকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বৃহস্পতিবার চেম্বার আদালত হাইকোর্টের ওই জামিন আদেশ স্থগিত করে দিয়েছে বলে বশির উলস্নাহ জানান।
কয়েক দফা চেষ্টার পর ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল ফারুক হত্যা মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন রানা। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে তা স্থগিত করে দেয় আপিল বিভাগ।
এরপর ওই বছরের ১৯ অক্টোবর আপিল বিভাগ জামিনের এ স্থগিতাদেশ চলমান রেখে জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল ৪ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়।
ওই আদেশ অনুযায়ী চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। পরে নতুন করে বিচারিক আদালতে জামিন আবেদন করেন রানা।
বিচারিক আদালতে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ফারুক হত্যা মামলায় এবং ৩০ সেপ্টেম্বর যুবলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় রানার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর হাইকোর্টে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সদস্য ফারুক আহমেদকে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তৎকালীন এমপি রানা ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠান টাঙ্গাইলের বিচারিক আদালত।
এ মামলায় ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর দন্ডবিধির ৩০২, ১২০, ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাদের বিচার শুরু করে আদালত। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
অন্য মামলাটি দায়ের করা হয় ২০১৩ সালে, তবে ঘটনাটি তার আগের বছরের।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা শামীম ও মামুন ২০১২ সালের ১৬ জুলাই মোটরসাইকেলে করে টাঙ্গাইল শহরে গিয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন শামীমের মা আছিয়া খাতুন টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
ওই ঘটনায় ২০১৩ সালের ৯ জুলাই নিখোঁজ মামুনের বাবা টাঙ্গাইল আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করলে তদন্ত করে ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি তালিকাভুক্ত করে পুলিশ।
পরে এ মামলায় গ্রেপ্তার খন্দকার জাহিদ, শাহাদত হোসেন ও হিরন মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের জবানবন্দিতে আওয়ামী লীগ নেতা আমানুর রহমান খান রানার নাম আসে।
গ্রেপ্তার আসামিরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, রানার নির্দেশেই যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।