ড্রেজিং কাজের ক্রয় পদ্ধতিতে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আইন ও বিধিমালা থাকলেও তা মানা হয়নি গাইবান্ধা-বাহাদুরাবাদে ফেরিঘাট নির্মাণে। আবার বর্ষা মৌসুমে তড়িঘড়ি করে ভূমি উন্নয়ন করা হয়েছে। এতে সাত কোটি টাকারও বেশি অপচয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঢাকা বিভাগের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে গাইবান্ধার সঙ্গে জামালপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যমুনা নদীতে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিআইডবিস্নউটিএ। প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি আগামী ডিসেম্বরে শেষ করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি ) সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে এমনই চিত্র পাওয়া যায়।
সার্বিক ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী নিজাম উদ্দীন এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রকল্পটি সঠিক সময়ে ২০১৯ সালে শেষ করার চেষ্টায় আছেন। ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে। ড্রেজিংয়ের কাজ উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কেন করা হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আই ডোন্ট নো। আস্ক টু এ্যানি বডি।' ভূমি উন্নয়ন করা হলেও বাড়ি সরানো হয়নি কেন, এ ব্যাপারে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে ওইসব বাড়ি সরাতে। উনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর সরকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে। প্রথমে ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও গত বছরের ১৩ নভেম্বর সংশোধন করা হয়। এতে সময় ঠিক রাখা হলেও ব্যয় বাড়িয়ে ১৪২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ধরা হয়। প্রকল্পটির সময় ঘনিয়ে আসায় গত জানুয়ারি মাসে সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে আইএমইডি। সেখানে বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে বালাশী-বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ করার কথা। কিন্তু কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের আগে ক্রয় পরিকল্পনায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) পূর্তকাজের প্যাকেজ-১ এ বালাশী-বাহাদুরাবাদ এলাকা ফেরিঘাট বেসিন এবং ফেরিরুট চ্যানেল তৈরির জন্য ড্রেজিং কাজ উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির উলেস্নখ রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। বরং ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড-ডিপিএম পদ্ধতি অবলম্বন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। নৌবাহিনীর মেসার্স ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড ড্রেজিংয়ের কাজটি সাব-কন্ট্রাক্ট ঠিকাদার মেসার্স এসএস রহমানকে দিয়ে করাচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডবিস্নউটিএর প্রকৌশলী নিজাম উদ্দীনকে। তাই সবকিছু দেখভাল করার দায়িত্বও তার কাঁধে পড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনি পণ্য, কার্য ও সেবা ক্রয়ের প্রচলিত আইন ও বিধির সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করেননি। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হয়েছে। বর্ষ মৌসুমে তড়িঘড়ি করে এসব কাজ করা হয়েছে। তা সমীচিন হয়নি। এতে ব্যয় করা হয়েছে সাত কোটি ২০ লাখ টাকা। এই ভূমি উন্নয়ন বর্ষাকালে না করে শুষ্ক মৌসুমে ড্রেজিংকৃত মাটি দিয়ে করা হলে সাত কোটি ২০ লাখ টাকা সাশ্রয় হতো। ড্রেজিং কাজের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হলেও প্রকল্প এলাকায় কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও অধিগ্রহণকৃত স্থানে এখনো জনগণের ঘরবাড়ি দেখা যায়। যা রাখা ঠিক হয়নি বলে প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়।