বান্দরবানে আলীকদম উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল কালামের সংবর্ধনার একটি ছবি রোববার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া একাধিক ছবিতে দেখা গেছে, সংবর্ধনায় ফুলের মালা দেওয়ার সময় তিনি এক ম্রো তরুণীকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছেন, যা অনেকের কাছে শোভন বলে মনে হয়নি। ছবিতে ওই তরুণীর এমন অভিব্যক্তি ফুটেছে যে তাকে বিব্রত ও অসহায় মনে হয়েছে। যেন নিজেকে তিনি ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও পারছেন না। তাৎক্ষণিকভাবে ওই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
তবে ম্রো তরুণীকে জড়িয়ে ধরা 'দোষের কিছু হয়নি' বলে মন্তব্য করেছেন আবুল কালাম।
চেয়ারম্যানের পক্ষে ম্রো তরুণীর ভাই বলেছেন, এটাকে (জড়িয়ে ধরা) অন্যভাবে ভাবার সুযোগ নেই। তার বোনের ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
তবে চেয়ারম্যানের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও অনেকে চেয়ারম্যানের সঙ্গে ম্রো তরুণীর ছবি ছড়িয়ে দেওয়াকে তরুণীটির জন্য 'মর্যাদাহানিকর' বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, ফেসবুকে ছবি ছড়ানোর আগে ছবিতে তরুণীর মুখটি অন্তত ঢেকে দেওয়া বা ঝাপসা করে দেওয়া যেত।
ম্রো ছাত্র ফোরামের সাবেক সভাপতি ইয়াংঙান ম্রো বলেছেন, চেয়ারম্যান আবুল কালামের এ রকম আচরণ যেমন অশোভন, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে দেওয়াও মানহানিকর। এ ঘটনায় কী করা যেতে পারে, এ সিদ্ধান্তের জন্য তারা সভা ডেকেছেন।
আলীকদমের ম্রোরা জানান, গত শনিবার ম্রো, মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমাদের কয়েকটি পাড়া মিলে একটি ম্রোপাড়ায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালামকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করে। সেখানে তরুণ-তরুণী, বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী-সবাই ফুলের মালা, তোড়া দিয়েছে আবুল কালামকে। এ সময় একজন ম্রো তরুণীকে তিনি এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছেন, যা দেখতে অশোভন লেগেছে। যৌন হয়রানি বা শ্লীলতাহানির মতো মনে হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, শত শত মানুষের সামনে বিব্রত ম্রো তরুণী অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়া চেষ্টা করছেন। কিন্তু আবুল কালাম তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রয়েছেন। তরুণী নিজেকে ছাড়াতে পারছেন না। অন্য নারীদের সঙ্গেও আবুল কালামের আরও কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে।
ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। ম্রো জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত সমাজেও প্রতিবাদ ওঠে। রিং রাও ম্রো নামের একজন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, 'এটিও ম্রো নারীর ওপর ক্রাইস্টচার্চের হামলার মতো একটি হামলা।'
রেঙ হী ম্রো নামের আরেকজন তার পোস্টে বলেছেন, 'আবুল কালাম সম্মান ও শালীনতা বজায় রেখে হিজাব পরা বাঙালি নারীর সঙ্গেও ছবি তুলেছেন। কিন্তু ম্রো মেয়েটিকে টেনেহিঁচড়ে জড়িয়ে ধরেছেন। এর অর্থ কী!'
চাকমা সার্কেলের রানি য়েন য়েন রায় ফেসবুকে লিখেছেন, 'একজন জনপ্রতিনিধির সংবর্ধনা গ্রহণের নমুনা! পাড়াবাসীর মৌনতা করুণাদায়ক। একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের অসভ্যতা, জনসমক্ষে আদিবাসী নারীর যৌন হয়রানি রুখে দেওয়ার সাহস কেউ দেখাতে পারেনি।'
সালেক খোকন নামের একজন লিখেছেন, 'আলীকদমের চেয়ারম্যানের লুচ্চামির চিত্র ছড়িয়ে দিন অসুবিধা নেই। কিন্তু ম্রো নারীর ছবিটি ভাইরাল করেছেন কেন?'
এদিকে জড়িয়ে ধরার ঘটনায় দোষের কিছু দেখছেন না উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম। তিনি বলেন, 'পাড়াবাসীর সংবর্ধনায় সবাই আবেগাপস্নুত হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছি। নির্বাচনে নারী-পুরুষ সবাই রাত-দিন পরিশ্রম করেছেন। ভোটের আগের রাতে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিয়েছেন। তাই তাদের সবার জন্য আমার ভালোবাসা একটু বেশি। তারাও জড়িয়ে ধরেছেন, আমিও ধরেছি। এতে দোষের কিছু নেই।'
ওই ম্রো তরুণীর বড় ভাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংবর্ধনার ছবি এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি ভালো হয়নি। পাড়াবাসী চেয়ারম্যান আবুল কালামকে সংবর্ধনা দিয়েছে। সেখানে শুধু তার বোন নন, আরও অনেক নারী ও পুরুষকে চেয়ারম্যান খুশিতে জড়িয়ে ধরেছেন। এটাকে অন্যভাবে ভাবার সুযোগ নেই। আবুল কালাম চেয়ারম্যানের পরিবারের সঙ্গে তারা একই পরিবারের সদস্যের মতো।