মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় যুগেও নিষ্পত্তি হয়নি রমনার বোমা মামলা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:১০
২০০১ সালের পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণ

রাজধানীর রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলা দেড় যুগেও নিষ্পত্তি হয়নি। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলাটির রায় নিম্ন আদালত থেকে ঘোষণা করা হলেও বিস্ফোরক আইনে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। হত্যা মামলার রায় চার বছর আগে হলেও এখনো হাইকোর্টে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শেষ হয়নি। হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন নিম্ন আদালত ৮ জনের মৃতু্যদন্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। এর মধ্যে মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) অন্যতম সদস্য মুফতি হান্নানের অন্য এক মামলায় মৃতু্যদন্ড কার্যকর হয়। তবে দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে চারজন এখনো পলাতক। এদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটি সাক্ষীর অভাবে ঝুলে আছে ট্রাইবু্যনালে। দেড় যুগ পার হলেও মামলাটির নিষ্পত্তির মুখ দেখা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ- সাক্ষীদের প্রতি জামিন অযোগ্য ধারায় ওয়ারেন্ট ইসু্য করার পরও সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছে না। তবে মামলাটিতে ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার কার্যক্রম বিষয়ে দ্রম্নত বিচার ট্রাইবু্যনাল-১ এর কৌঁসুলি আবু আবদুলস্নাহ বলেন, 'আদালত সাক্ষীদের প্রতি জামিন অযোগ্য ধারায় ওয়ারেন্ট ইসু্য করেছেন। কিন্তু সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পারছেন না পুলিশ। তা ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী হাজির করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।' অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, 'আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে বিনাবিচারে জেল হাজতে আছেন। এটা তো কারও কাম্য নয়। মামলাটি সাক্ষীর পর্যায়ে আছে। কিন্তু সাক্ষী তো আদালতে হাজির হচ্ছে না। আদালতে সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলাটি নিষ্পত্তি হচ্ছে না।' ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। এরপর ওই ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। এরপর দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রম্নত বিচার ট্রাইবু্যনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটিতে ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট ২৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ট্রাইবু্যনাল। সর্বশেষ গত বছরের ১৭ মে একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। তারপর থেকে আর কোনও সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। আগামী ২৫ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। এদিকে ২০১৪ সালের ২৩ জুন হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের মৃতু্যদন্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা আরিফ হাসান সুমন ও মওলানা মো. তাজউদ্দিন। যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উলস্নাহ ওরফে জুয়েল। তবে এ মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনো পলাতক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে