যাযাদি: শোনা যাচ্ছে চিড়িয়াখানার প্রবেশমূল্য বাড়াচ্ছেন?
নজরুল ইসলাম: ২০১৬ সালের এপ্রিলে ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা করা হয়েছে। তবে এবারের প্রস্তাব আছে আগামী জুলাই থেকে ৫০ টাকা করার। চিড়িয়াখানা পরিচালনার উপদেষ্টা কমিটির গত ৪ নভেম্বরের বৈঠকের সিদ্ধান্ত এটি। সদস্যদের মধ্যে একজন সাংসদ এটি প্রস্তাব করেছেন। অবশ্য এখনও সেটির জিও ইসু্য হয়নি। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে প্রস্তাব করতে হয়েছে। জিও ইসু্য হতে সময় লাগবে।
যাযাদি: টিকিটের দাম বাড়ালে দর্শনার্থীদের মধ্যে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন কি?
নজরুল ইসলাম: আমার সেটি মনে হয় না। কারণ এত সস্তায় প্রবেশ গোটা বিশ্বের কোথাও নেই। চিড়িয়াখানাটি ১৮৭ একর জমির মধ্যে। বিশালায়তনের মধ্যে অনেক কিছু দেখবেন। সে তুলনায় যেকোনো বেসরকারি চিড়িয়াখানায় টিকিটের দাম আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া আগের বার ১০ টাকা বাড়ানোয় দর্শনার্থীদের মধ্যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং দর্শনার্থী আরও বেড়েছে। মানুষ এখন অনেক সচ্ছল। দিনে দিনে প্রচুর দর্শক আসছে।
যাযাদি: আন্তর্জাতিক মানের দিক দিয়ে ঢাকার চিড়িয়াখানাটি কোন অবস্থানে আছে?
নজরুল ইসলাম: আমরা আরও আধুনিকতার দিকে যাচ্ছি। পঞ্চাশ ষাট বছরের পুরনো অবকাঠামো দিয়ে গত ৪-৫ বছরে যেভাবে আমরা ডেভেলপ করেছি এটি অনেক। কিছুদিন আগে ভারতের দিলিস্নর চিড়িয়াখানার সাবেক একজন জয়েন্ট ডিরেক্টর অজিত কুমার ভৌমিক এসেছিলেন, তিনি আমাদের চিড়িয়াখানার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এছাড়া জাতীয় চিড়িয়াখানাকে বিশ্বমানে উন্নীত
করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক চিড়িয়াখানা বিশেষজ্ঞ বার্নার্ড হ্যারিসনকে দেয়া হয়েছে মাস্টারপস্ন্যান তৈরির দায়িত্ব।
মাস্টারপস্ন্যান শেষ হলেই জাতীয় চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নের মূল কাজ শুরু হবে।
বার্নার্ড হ্যারিসন এর আগে সিঙ্গাপুর সাফারি পার্ক এবং সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নের কাজ করেছেন। আধুনিকায়নের কাজ শেষ হলে জাতীয় চিড়িয়াখানা বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। প্রাণী ও দর্শনার্থীদের জন্য পৃথিবীর আধুনিকতম সব সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে এতে।
যাযাদি: চিড়িয়াখানায় এখন কত প্রজাতির প্রাণী আছে?
নজরুল ইসলাম: ১৩৮ প্রজাতির প্রাণী ও পাখিসহ অ্যাকুরিয়াম ফিশ নিয়ে ২ হাজার ৭৯২টি।
যাযাদি: নতুন করে কোনো প্রাণী আনার সম্ভাবনা আছে কি?
নজরুল ইসলাম: হ্যাঁ, সম্ভাবনা আছে। এর জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১১ সালের পর কোনো প্রাণী ক্রয়ের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়নি। তবে এবার দুবাই চিড়িয়াখানা থেকে কিছু প্রাণী এক্সচেঞ্জ করব। আমরা কিছু প্রাণী তাদের দেবো, তারাও আমাদের কিছু দেবে।
যাযাদি: চিড়িয়াখানার পিকনিক স্পটগুলো বন্ধ। খুলে দেয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে?
নজরুল ইসলাম: চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পিকনিক স্পটগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উৎসব দ্বীপ ও নিঝুম দ্বীপ নামে দুটি পিকনিক স্পটে দশ ও ছয় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে দিনব্যাপী বনভোজন করার অনুমতি পেত নগরবাসী। তবে তাদের হইচই, উচ্চ শব্দে গান বাজানোসহ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে চিড়িয়াখানার পরিবেশ নষ্ট হয় বলে পিকনিক স্পট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে চিড়িয়াখনার আরেকটি গেট হলে সেখানে হতে পারে। তবে চিড়িয়াখানার মধ্যে থাকবে না। কেউ প্রাণীদের পরিবেশ নিয়ে নিয়ে ভাবেন না। চিড়িয়াখানার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভাবেন না। এ কারণেই এটি উপদেষ্টা কমিটি বন্ধ করে দিয়েছে।
যাযাদি: টিকিট কেটে মাছ ধরার ব্যবস্থা কি এখনো আছে?
নজরুল ইসলাম: সেটিও প্রায় বন্ধ। এখন মাসে একবার ব্যবস্থা আছে। প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার। নভেম্বর থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে মাসে একবার। আবার খুব কাছাকাছি সময়ে এটিও বন্ধ করে দেয়ার সম্ভাবনা আছে। মাছ ধরা আসলে চিড়িয়াখানার কোনো অংশ নয়।
যাযাদি: চিড়িয়াখানা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
নজরুল ইসলাম: অনেকদিন ধরেই পরিকল্পনায় আছে চিড়িয়ানা আধুনিকায়ন করার। অনেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চেষ্টাও করেছেন। মাঝে মধ্যে কিছু কাজ এগোয় আবার পিছিয়ে যায়। অবশ্য এখন সেটি এগোনোর পর্যায়ে আছে। চিড়িয়াখানার জন্য একটি মাস্টারপস্ন্যান প্রস্তুত করা হবে। সে অনুযায়ী একটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হবে। সে প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে। এটি ইন্টারন্যাশনাল ও ন্যাশনাল কনসালটেন্টের মাধ্যমেই করা হবে। মাস্টারপস্ন্যানের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে বিশ্বে এক নাম্বার চিড়িয়াখানা হবে এটি।
যাযাদি: হকার এবং ক্যান পার্টির দৌরাত্ম্য আছে কি?
নজরুল ইসলাম: ক্যান পার্টি মোটেও নেই এখানে। এটি নির্মূল করা হয়েছে তিন-চার বছর আগে। এখন মাত্র দুটি ক্যানটিন পরিচালিত হয়। সেগুলো বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায়। সামনের দোকান তো সবই বন্ধ। ভেতরেও কোনো দোকানপাট নেই। ক্যানটিন দুটি সরকারি বিধি মোতাবেক চলে। জিনিসপত্রের সরকারি তালিকা সেখানে টাঙিয়ে দেয়া আছে। সরকারি শিক্ষিত কর্মচারীরা সেখানে কাজ করেন। তাদের চাকরির জবাবদিহিতা আছে।
যাযাদি: বিশ্বব্যাপী চিড়িয়াখনায় প্রাণীদের বয়স হলে মেরে ফেলা হয়। ঢাকা চিড়িয়াখনায় এমন ৩৯টির মতো প্রাণী আছে যেগুলোর বয়স হয়ে গেছে।
নজরুল ইসলাম: বয়স হলেও সেগুলো এখনও অপ্রদর্শনযোগ্য নয়। মেরে ফেলার মতো সময় এখনও হয়নি। এ ছাড়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের মধ্যে একটি অধ্যায় অনুমোদিত হতে যাচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই আইনটি প্রয়োগ করা যাবে। অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ারের আইন ইতোমধ্যে কেবিনেট থেকে পাস হয়েছে। সংসদেও উত্থাপিত হয়েছে। জিওটা হয়নি। সেটা হয়ে গেলে প্রাণী মারার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে।
যাযাদি: চিড়িয়াখানা নিয়ে আপনার কিছু বলার আছে?
নজরুল ইসলাম: আমি আপনার মাধ্যমে বলতে চাই, চিড়িয়াখানায় না এসে, প্রকৃত তথ্য না জেনে কিছু গণমাধ্যম চিড়িয়াখানার ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। দর্শকদের উদ্দেশে বলব- আপনারা বিনোদনের জন্য আসবেন। নির্দ্বিধায় পরিবারসহ যখন-তখন আসবেন। চিড়িয়াখানায় আসুন, নিজের চোখে দেখুন। বিভিন্ন জায়গায় মতামত ও অভিযোগ দেয়ার ব্যবস্থা আছে সেখানে লিখিত দিয়ে যান। আমরা ব্যবস্থা নেবো।
যাযাদি : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নজরুল ইসলাম: যায়যায়দিনকেও ধন্যবাদ।