শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মদিনে দল নিয়ে কামাল হোসেনের নতুন আশা

যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৩৪
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে শনিবার তার কার্যালয়ে ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান দলের নেতাকর্মীরা -যাযাদি

গণফোরাম এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে দাবি করে একে আরও শক্তিশালী করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি কামাল হোসেন। শনিবার নিজের ৮৩তম জন্ম দিনে শুভেচ্ছাসিক্ত হয়ে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় এই আহ্বান জানান তিনি। কামাল হোসেন বলেন, 'এবার ভালো ভালো লোকজন এগিয়ে এসে আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। তারা যোগদান করছেন এজন্য যে, আমাদের দল কর্মক্ষম, আমাদের দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং তারা এসে অবদান রাখতে চান। 'আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হবে সাংগঠনিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করা। সদস্য সংগ্রহ বাড়াতে হবে। এটা বাড়াতে হবে এই কারণে যে আমরা মনে করি, এই দলটি দেশের জাতীয় দল যেখানে সকল মহলে প্রতিনিধিত্ব করবে।' প্রায় তিন দশক আগে আওয়ামী লীগ ছেড়ে গণফোরাম গঠনের পর এখনই দলটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে অংশ নেয়ার পর অনেকে এই দলে যোগ দেন। এই প্রথম সংসদ নির্বাচনে দুটি আসনে বিজয়ীও হয়েছে কামাল হোসেনের দল। ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানের পর পুনর্র্নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে গণফোরাম। 'গঠনমূলক' রাজনীতির মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আনতে চাওয়ার কথা জানিয়ে কামাল বলেন, 'যে পরিবর্তন সবাই চাচ্ছে সেটা হচ্ছে কার্যকর গণতন্ত্র। 'আমাদের এই গঠনমূলক রাজনীতির মধ্য দিয়ে, গঠনমূলক কর্মসূচির ভিত্তিতে যে রাজনীতি দেশে গড়ে উঠছে, তার মধ্য দিয়ে আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আমরা আগামীতে আনতে পারব দেশে।' দলকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়ে কামাল বলেন, 'আমাদের মনে রাখতে হবে শক্তিশালী সংগঠন ছাড়া অর্থপূর্ণ কাজ করা যাবে না, দেশে পরিবর্তন আনা যাবে না। 'আমরা গর্ব করি যে, আমরা টাকার বিনিময়ে রাজনীতি করি না। আমরা ধর্মকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করি না। আমরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করি জনগণের ওপর ভিত্তি করি।' সকালে মতিঝিলের ইডেন কমপেস্নক্সে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কামাল হোসেন এসে পৌঁছলে নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। তাদের নিয়ে পরে কেক কাটেন তিনি। দলের নেতা সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু দলের সভাপতিকে কেক খাইয়ে দেন। বৈঠক শুরুর আগে জন্মদিনের এই সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে একজন শিল্পী দুটি গানও গেয়ে শোনান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণফোরাম নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল, আলতাফ হোসেন, সিরাজুল হক, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, রেজা কিবরিয়া, আ ম সা আ আমিন, মহসিন রশিদ, জগলুল হায়দার \হআফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম পথিক প্রমুখ। অবিভক্ত ভারতে কলকাতায় ১৯৩৭ সালে কামাল হোসেনের জন্ম। তিনি বিয়ে করেছেন মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেনকে। তাদের দুই মেয়ে সারা হোসেন ও দিনা হোসেন। কামালের শিক্ষাজীবন শুরু কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে ১৯৪৪ সালে। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুলে মাধ্যমিক এবং নটোর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নটোর ডেম ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৫৫ সালে অর্থনীতিতে ডিগ্রি নেন কামাল। এরপর ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ ও ১৯৬৪ সালে যথাক্রমে বিসিএল ও ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতিও ছিলেন। স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া কামাল ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান তৈরির জন্য যে কমিটি হয়েছিল, সেই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামালে তিনি প্রথমে আইনমন্ত্রী, পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যও ছিলেন কামাল। ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৯৩ সালে গঠন করেন গণফোরাম। গত বছরের অক্টোবরে একাদশ নির্বাচন সামনে রেখে তিনি বিএনপি, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে গঠন করেন সরকারবিরোধী নির্বাচনী জোট 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট'। এই জোটের শীর্ষনেতা হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন তিনি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনে করে, আওয়ামী লীগের শাসনে দেশে গণতন্ত্র নেই। তা ফিরিয়ে আনা তাদের লক্ষ্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে