বুড়িগঙ্গা তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরুর পর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের মুন্সিহাটি এলাকায় ছয়তলা একটি বাড়ির নিচতলার একাংশ ভেঙে দিয়েছিলেন বিআইডবিস্নউটিএর কর্মীরা। গত ২৯ জানুয়ারি ওই অভিযানে বিআইডবিস্নউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ির অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে বাসিন্দাদের মালামাল নিয়ে সরে যাওয়ার সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু আড়াই মাসের মধ্যে ভবনের ভেঙে ফেলা অংশ মেরামত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছেন বাড়ির মালিক। খুলে ফেলা জানালা লাগিয়ে নতুন রঙ করা হয়েছে ওই ভবনে। কামরাঙ্গীরচরে গিয়ে দেখা যায়, মুন্সিহাটি এলাকার শেষ প্রান্তে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে এসহাক-রওশন সেন্টার নামের ভবনটি। ৮১৮ নম্বর হোল্ডিংয়ে দেড় কাঠা জমির ওপর গড়ে তোলা ছয়তলা ভবনটির প্রতি তলায় দুটি করে ইউনিট। উচ্ছেদ অভিযানের পর পুরনো ভাড়াটিয়ারা চলে যাওয়ায় মেরামতের পর ভবনের গায়ে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তি- 'ফ্ল্যাট ভাড়া হবে'। সেখানে দুটো মোবাইল নম্বরও দেয়া আছে যোগাযোগ করার জন্য। শুক্রবার পর্যন্ত নতুন কোনো ভাড়াটিয়া না উঠলেও বাড়ির নিচতলায় একটি মিষ্টির দোকান ঠিকই চলছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছর পাঁচেক আগে এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়। বাড়ির মালিক এসহাক মিয়ার মূল বাড়ি বুড়িগঙ্গার অন্য পাড়ে খোলামুড়া এলাকায়। সেখানেই তার পরিবার থাকে। আর এ বাড়ির দেখাশোনা করেন বাদশা মিয়া নামে একজন কেয়ারটেকার। বাড়ির মালিক কোথায় জানতে চাইলে বাদশা মিয়া বলেন, এসহাক থাকেন বিদেশে। আর তার স্ত্রী রওশন আরা থাকেন নদীর ওই পাড়ের বাড়িতে। তিনিই বাড়ির দেখাশোনা করেন। বাদশা বলেন, ভেঙে ফেলা অংশটি কয়েকদিন আগে মেরামত করা হয়েছে। তবে আগের ভাড়াটিয়ারা সবাই চলে গেছেন। 'যেই দিন ভাঙছে হের পর থেইকা ভাড়াটিয়ারা যাওয়া শুরু করছে। অহন আর কেউ নাই। পুরা বাড়ি খালি। গ্যাস, কারেন্টের লাইনও নাই। সেইগুলা ভাঙনের আগেই কাইটা দিছিল।' অবৈধ অংশ না ভেঙে উল্টো মেরামতের কারণ জানতে চাইলে বাড়ির মালিকের স্ত্রী রওশন আরা টেলিফোনে বলেন, এ বিষয়ে বলতে পারবে তার মামাতো ভাই নুরুল ইসলাম সেন্টু। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে সেন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, সেদিন 'ভুল করে' ভবনের ওই অংশ ভেঙে দিয়েছিল বিআইডবিস্নউটিএ। এ বিষয়ে সব কাগজপত্র তাদের কাছে আছে। 'বিআইডবিস্নউটিএর লিস্টে আমাদের বাড়ির নাম নাই। ম্যাজিস্ট্রেটও দেখছেন আমাদের নাম নাই। কিন্তু পাশের বিল্ডিং ভাঙার সময় লেবাররা দুর্ঘটনাক্রমে এইটা ভাইঙ্গা ফেলছে আরকি। আমাদেরটা লিস্টে নাই। এখন সরকার যদি ক্ষতিপূরণ দিয়া আমাদেরটা নিয়া যায়, নিয়া যাউক, আমরা তো আর আটকায়া রাখতে পারব না।' সেন্টু দাবি করেন, তাদের সব কাগজপত্র ঠিক আছে। এ বিষয়ে বিআইডবিস্নউটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলছেন তারা। 'যদি লিস্টে নাম থাকত, তাহলে আমাদেরটা কি থাকত? কত বড় বড় বিল্ডিং ভাইঙ্গা ফেলছে না? আর আমাদের বিল্ডিং নিয়া কেন প্রশ্ন করতেছেন। আমাদের বিল্ডিং থেকে নদীর দিকে আরও সামনে বাড়ি আছে, সে সব নিয়াও প্রশ্ন করেন। সেইগুলা তো ভাইঙ্গা দেওয়ার কথা, কিন্তু ভাঙ্গে নাই।' এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিআইডবিস্নউটিএ-এর যুগ্ম-পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, ওই ভবনের পাঁচ ফু্ট অংশ নদীর সীমানায় পড়েছে। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযানের সময় ভবনে মানুষ ও মালামাল থাকায় তারা পুরোটা ভাঙেননি। 'সেখানে বাসিন্দারা ছিল, বাচ্চারা ছিল। অনেকভাবে চেষ্টা করেও তাদের নামাতে পারছিলাম না। আর যেহেতু পুরো ভবনটি অবৈধ নয়, সেহেতু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেছিলেন অবৈধ অংশটুকু ভবন মালিককে নিজেই সরিয়ে নিতে।' ওই এলাকায় আবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে জানিয়ে আরিফ উদ্দিন বলেন, 'আমরা তো এখন ভাঙতে ভাঙতে টঙ্গীর দিকে চলে এসেছি। ওই (কামরাঙ্গীরচর) এলাকায় নেই। এখন যেভাবে যাচ্ছি, সেভাবেই চলে যাব। আমাদের একটা রিফ্রেশমেন্ট উচ্ছেদ প্রোগ্রাম ঈদের পর হবে, বর্ষা মৌসুমে। আমাদের ভাঙার পরে যারা পুনর্র্নিমাণ করবে, সেই অভিযানে সে সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেব।' স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসহাক-রওশন সেন্টার নির্মাণ করার আগে নদীর তীরের জায়গাটি আবর্জনা দিয়ে ভরাট করা হয়। মুন্সিহাটি এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, 'এই বাড়ি তো আমাগো চোখের সামনে বানাইছে। ময়লা দিয়া ভরাট কইরা বিল্ডিং তুলছে। এইখানে বাড়ি বানাইয়া মানুষ মারার ফন্দি করছে আরকি।' ভবনটির একটি বড় অংশ যে নদীর সীমার মধ্যে পড়েছে তা দেখাতে ভবনের পেছনে নিয়ে যান ওই ব্যক্তি। সেখানে দেখা যায়, পশ্চিম দিকে একটি টিনশেড ভবনের পরে আরেকটি বহুতল ভবন। সেই ভবনটিরও একটা অংশ ভাঙা। ওই ভবনের সামনে বিআইডবিস্নউটিএর একটি সীমানা পিলার রয়েছে। আরেকটি সীমানা পিলার রয়েছে এসহাক-রওশন সেন্টারের সামনের সড়কে। স্থানীয় ওই বাসিন্দা বলেন, দুটো পিলার ধরে মাপলে দেখা যাবে এসহাক-রওশন সেন্টারের বেশিরভাগটাই নদীর সীমানায় পড়েছে।