বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
নেই পুলিশও

সেই এফআর টাওয়ারে সুনসান নীরবতা

সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভবনের নিরাপত্তার জিম্মাদারি ছেড়ে দিয়ে বনানী সোসাইটির কাছে ন্যস্ত করেছে পুলিশ
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
অগ্নি দুর্ঘটনার পর রাজধানীর বনানীতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বিধ্বস্ত জনমানবহীন এফআর টাওয়ার -ফাইল ছবি

ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় রাজধানীর বনানী এফআর টাওয়ারে নেই আর আগের মতো মানুষের আনাগোনা। পুরো ভবনের ২২টি ফ্লোরের সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ভবনের নিরাপত্তার জিম্মাদারি ছেড়ে দিয়ে বনানী সোসাইটির কাছে ন্যস্ত করেছে পুলিশ। শুধু অনুমতিসাপেক্ষে নীরবে ভবন থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

গত ২৮ মার্চ দুপুরে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। এ ঘটনায় একজন শ্রীলঙ্কান নাগরিকসহ ২৪ জন নিহত হন।

অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় কাশেম গ্রম্নপের মালিক তাসভির উল ইসলাম এবং এফআর টাওয়ারের জমি ও ১০টি ফ্লোরের মালিক এস এম এইচ আই ফারুককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাসভির জামিনে বেরিয়ে এলেও মুক্তি মেলেনি ফারুকের।

আগুনের ঘটনার পর থেকে এফআর টাওয়ারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে রাজউক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি গত ৪ এপ্রিল রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। দুই শর্ত পূরণ হলেই চালু হবে বনানীর এফআর টাওয়ার। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ওই তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটিই জানানো হয়েছে।

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এফআর টাওয়ারের প্রধান ফটকে সুনসান নীরবতা। গেট বন্ধ। শুধু সড়কে চলা যানবাহনের হর্নের শব্দ। তবে এফআর টাওয়ারের পেছনে নিরাপত্তাকর্মীরা টেবিল সাজিয়ে টালি খাতা নিয়ে বসে আছেন। পেছনের সিঁড়ি খোলা রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে নিজেদের মালামাল নামিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। ভবনে আগুনের পর পুলিশ ভবনের নিরাপত্তা ও তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত থাকলেও সোমবার পুলিশ দেখা যায়নি।

বনানী সোসাইটির নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'পুলিশ আর এখানে আসে না। তারা আমগো ওপরে দায়িত্ব দিছে। আমরাই বইসা থাকি। কেউ আসলে খাতায় নাম, ঠিকানা লেইখা স্বাক্ষর নিতাছি। ফের মালমাল নিয়ে যাবার কালেও মালামালের তালিকা লেইখা নিতাছি।'

তিনি জানান, সোমবার দুটি প্রতিষ্ঠান মালামাল নিতে এসেছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো কাশেম গ্রম্নপ আর হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস।

সেখানেই কথা হলো কাশেম গ্রম্নপের নিরাপত্তাকর্মী জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০, ২১ ও ২২ তলায় কাশেম গ্রম্নপের কার্যক্রম ছিল। ভবনে আগুন লাগার পর তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গ্রেপ্তার হন মালিকের ছেলে তাসভিরুল। জামিনে বেরিয়ে তিনি ব্যবসার কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি এফআর টাওয়ারে থাকা অফিসিয়াল মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। আজও শ্রমিক ও মিস্ত্রিরা এসেছেন; এসি, ফ্রিজ, সোফাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খুলছেন। পরে সব একসঙ্গে নিয়ে যাবেন।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, 'আমগো স্যারের তো কোনো দোষ নাই। তিনি চারটি ফ্লোর কিনছেন বলেই কি আগুন লাগছে নাকি?'

এফআর টাওয়ারের জমি ও ১০টি ফ্লোরের মালিক এস এম এইচ আই ফারুকের রোজ ডে নামক কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার মনির হোসেন বলেন, 'এই যে ভবন বন্ধ; আমরা বইসা আছি। কোনো কাজ নাই। বেতন পাব কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নাই। বেতনই বা কে দেবে? মালিক তো জেলে। সে খবর আর কেউ নেয় না।'

তিনি বলেন, 'ভবনে আগুন লাগার সঙ্গে তো মালিকের কোনো সম্পর্ক নাই। আবার ভবন যে সম্পূর্ণ অগ্নিনির্বাপক শর্ত মেনে নির্মাণ করা হয়নি- সে দায়ও তো মালিক ফারুক স্যারের না। আগুন লাগছে ৮ তলার বায়িং হাউস থেকে। আর ভবন নির্মাণ করেছে রূপায়ন। ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ বন্ধের জন্য ফারুক স্যারই রাজউককে চিঠি দিয়েছে। থানায় জিডি করেছে। অথচ স্যারকেই জেলে যেতে হলো। মূল যে দুইপক্ষ দোষী তাদের কাউকেই পুলিশ ধরতে পারেনি।'

ভবন কবে নাগাদ খুলবে জানতে চাইলে মনির হোসেন বলেন, 'এখন ভবন খোলা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। স্যার জামিনে আগে বের হোক। সবগুলো তদন্ত কমিটির সামগ্রিক রিপোর্টের আলোকেই কার্যক্রম চালু করা হবে।'

গুলশান বিভাগের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এফআর টাওয়ারের ঘটনার তদন্ত ও এ সম্পর্কে কার কী দায়-দায়িত্ব তা তদন্তকারী ডিবি পুলিশ বলতে পারবে।'

এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ। ডিবি উত্তর বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, 'তদন্তের দায়িত্ব আমাদের। আর ভবনের দেখভাল করবেন লোকাল পুলিশ, সোসাইটির সিকিউরিটি বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন ও ভবন কর্তৃপক্ষ।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46448 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1