শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণ আদায়ে অর্থমন্ত্রীর ব্যবস্থাপত্রের কঠোর সমালোচনা মেননের

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন -যাযাদি

নয় শতাংশ সরল সুদে খেলাপি ঋণ পরিশোধের যে সুযোগ সরকার দিয়েছে, তার সমালোচনা করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

শীর্ষ ঋণখেলাপিরা এখনও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে রয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী।

তিনি বলেছেন, 'এই শাসনামলে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই খেলাপি ঋণের ব্যাপারে আমরা এরশাদ আমলে খুব সোচ্চার ছিলাম। যারা তখন খেলাপি ঋণের শীর্ষে ছিলেন এখনও এই সরকারে তারা শীর্ষ স্থানে রয়েছেন। অনেক বড় বড় কর্তাব্যক্তি তারা।'

রুশ বিপস্নবের নেতা ভস্নাদিমির ইলিচ লেনিনের ১৪৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নৌকা প্রতীক নিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জয়ী ঢাকা-৮ আসনের সাংসদ মেনন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এর বাইরে দীর্ঘদিন আদায় করতে না পারা যেসব ঋণ ব্যাংকগুলো অবলোপন করেছে, তার পরিমাণ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপন করা এ মন্দ ঋণ যুক্ত করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা।

সম্প্রতি নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নয় শতাংশ সরল সুদে এই ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়ার কথা জানান।

এই সুযোগ নিয়ে যারা ঋণ শোধ করতে না পারার 'যৌক্তিক' কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন, তাদেরকে মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে ১২ বছরে ওই টাকা পরিশোধের সুযোগ দেয়া হবে।

ওয়ার্কার্স পার্টি ঢাকা মহানগর কমিটি আয়োজিত 'রাষ্ট্র, বিপস্নব ও বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতা' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, 'খেলাপি ঋণের ভারে সমস্ত ব্যাংক নুয়ে পড়েছে। আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিপূর্ণ নৈরাজ্যের মধ্যে চলে গেছে। তারল্য সঙ্কট রয়েছে, বিনিয়োগের অর্থ ব্যাংকগুলোর নেই। এই যখন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তখন আমাদের অর্থমন্ত্রী খেলাপি ঋণের রাহু থেকে মুক্তির জন্য ব্যবস্থাপপত্র ঘোষণা করলেন।

'ব্যবস্থাপত্রটি হচ্ছে, বড় বড় ঋণখেলাপি যারা, তাদেরকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এবং ৯ শতাংশ সুদ ধরে ১২ বছরের সময় বেঁধে দিয়েছেন।

\হএর মধ্যে কতবার রিশিডিউল হবে সেটা তিনি বলেননি। এই ব্যবস্থাপত্রটা বিশেষ করে যারা বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ী, তাদের জন্য।'

তিনি বলেন, 'সাধারণ ব্যবসায়ী বা মানুষ যখন ঋণের রিশিডিউল করতে চান তখন কিন্তু তাকে ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়। আর এমনই ঋণ নিয়ে একজনকে সুদ দিতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ।

'তাহলে সোজা কথা আমি ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়ে যাব। খেলাপি হয়ে গেলেই তো আমার সুবিধা, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১২ বছরে ৯ শতাংশ হারে সুদ দেব। নিয়মিত সুদ দিলে তো ১৩ শতাংশ দিতে হবে।'

তাহলে এ অর্থনীতি কার জন্য- প্রশ্ন রেখে তিনি মেনন বলেন, 'যারা কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সেই ঋণ ফেরত দিচ্ছেন না এবং ঋণের টাকা বিদেশে পাচার করছেন, এই রাষ্ট্রটা তাদের জন্য।'

রাষ্ট্রের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'এই রাষ্ট্রটি একেবারেই লুটেরা পুঁজিপতিদের। এ কথা শুনলে হয়তো আমাদের যারা শাসন করছেন বা সরকারে রয়েছেন, তারা রাগ করতে পারেন।

দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা এবং এর বেশির ভাগটাই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে মন্তব্য করে মেনন বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠিন শর্তারোপের কারণে খেলাপি ঋণের টাকা বিদেশে বিনিয়োগ না করে সেখানে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছেন খেলাপিরা। পত্রিকা খুলে দেখেন বিদেশে সেকেন্ড হোম করার জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে।'

'এই যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এগুলো কার স্বার্থে গরিব মানুষ বা একজন কৃষক যখন ঋণ নিয়ে ঋণ ফেরত দিতে পারছে না, তখন হাতকড়া পরিয়ে জেলে নেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশ, রাষ্ট্র এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে।'

পুঁজিবাদের নয়া উদারনীতিবাদী ব্যবস্থায় কেবল ইউরোপ নয়, বিশ্বজুড়ে দক্ষিণপন্থার উত্থান ঘটছে বলে মনে করেন এ বামপন্থি নেতা।

'সর্বশেষ যে উত্থানটি আমাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো ধর্মীয় উগ্রবাদ। আমরা আইএস, তালেবান দেখেছি। পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন তারা নির্মূল হয়নি। রোববার ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কায় যা ঘটেছে তা গণহত্যা জাতীয় ঘটনা। এর পেছনে কী, কোন উত্তেজনা আমরা জানি না।

'যা-ই থাকুক না কেন, এই পৃথিবী আর বাসযোগ্য থাকছে না। এই গ্রহ বাঁচবে কি না এখন এটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। লেনিন বলেছিলেন সভ্যতা পুঁজিবাদের হাতে নিরাপদ নয়। তার প্রমাণ হচ্ছে এসব ঘটনা, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয়। এসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পৃথিবী আজ ধ্বংসের কিনারে চলে গেছে।'

ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি আবুল হুসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শফিকুজ্জামান ও ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটবু্যরোর সদস্য সুশান্ত দাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<46452 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1