বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ঈদ কেনাকাটা

বাজার মাতাচ্ছে মুম্বাই দিলিস্নর ঘারারা-সারারা

এস এম মামুন হোসেন
  ১৬ মে ২০১৯, ০০:০০
মোগল আমলের জনপ্রিয় পোশাকের অনুকরণে তৈরি আধুুিনক যুগের 'ঘারারা' পোশাক। তরুণীদের পছন্দের হাল ফ্যাশনের এ পোশাকটি পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর অভিজাত মার্কেটগুলোতে। ছবিটি বুধবার বসুন্ধরা সিটি শপিংমল থেকে তোলা -আমিনুল ইসলাম শাহীন

ঈদ আসবে কিন্তু দিলিস্ন-মুম্বাইয়ের বিশেষ আকর্ষণ থাকবে না তা-কি হয়? ঐতিহাসিকভাবেই এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সাংস্কৃতিক জগতের নেতৃত্ব দেয়া দিলিস্ন-মুম্বাইয়ের যে সম্পর্ক তার প্রকাশ প্রতিবছরের ঈদের বাজারে স্পষ্ট হয়। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তের ক্রেতাদেরও তাই চাহিদা থাকে দিলিস্ন-মুম্বাই থেকে কি এসেছে তার দিকে। এবারের ঈদে এ দেশের মানুষের জন্য আসা বিশেষ আকর্ষণ উপরের দিকে ছোট কিন্তু নিচের দিকে ক্রমেই প্রশস্ত হওয়া দুই পার্টের ঘারারা। সঙ্গে রয়েছে গতবারের সারারাও। ক্রেতাদের কাছে এরই মধ্যে এ দুটি পোশাক পেয়েছে বাড়তি কদর, মাতাচ্ছে ঈদের বাজার।

রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেটে এখন রং বেরংয়ের ঘারারা-সারারা চোখে পড়ছে। উপরের অংশ কটি স্টাইলের। গলা থেকে মাজার নিচ পর্যন্ত লম্বা। বেশিরভাগেরই হাতা কাটা। তবে দুই একটি আবার হাতা লম্বাও আছে। বিক্রেতারা বলছেন, দিলিস্ন-মুম্বাইয়ের ঘারারা মূলত হাতা কাটাই হয়ে থাকে। তবে এ দেশের মানুষের মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কিছু ঘারারার হাতা লম্বা করেও তৈরি করা হয়েছে। তবে বিক্রির দিক থেকে দুটিই চলছে সমানতালে। রং বেরংয়ের ঘারারা মধ্যে রয়েছে সুতি, জর্জেটসহ বিভিন্ন কাপড়ের। অনেকটিরই বুকের অংশে রয়েছে কাচ বসানো। অন্যগুলোতে জরি ও উজ্জ্বল কাপড়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঘারারার জন্ম রাজস্থানে হলেও এখন পোশাকটিতে মূলত দিলিস্ন ও মুম্বাইয়ের প্রাধ্যান্য পেয়েছে। এর নিচের পার্ট মূলত পাজামা স্টাইলের হলেও রয়েছে ভিন্নতা। হাঁটু বরাবর গিয়ে একটি গিটের মতো। এবং তার পরে বসানো হয়েছে কাচ বা পুথি। তবে হাঁটুর নিচের অংশ একেবারে স্বতন্ত্র। কুচি দিয়ে নামানো এ অংশ ব্যাপক প্রশস্ত। দুই দিকে ছড়ানো এবং ঢেউ খেলানো। এখানকার প্রশস্ততা এতটাই বেশি যে এর মধ্যে দুইজন মানুষকে একত্রে প্রবেশ করানো যাবে। বিক্রেতারা বলছেন নিচের অংশের এ প্রশস্ততাই ঘারারার বিশেষ আকর্ষণ। কিনতে আসা অনেককেই দেখা গেল এ অংশটি বারবার নেড়েচেড়ে দেখছেন। অনেকে আবার ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে দেখানোর জন্য। বাসায় কথা বলে তারপর কিনবেন বলে জানালেন কয়েকজন।

কাপড়ের মান, জিজাইন এবং সৌন্দর্যের উপর ভিত্তি করে দামেও রয়েছে ভিন্নতা। ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে একেকটি ঘারারা। দাম একটু বেশি হওয়ায় এটি মূলত উচ্চবিত্তদেরকে টার্গেট করেই তৈরি করা হয়েছে। ফলে সবশ্রেণির মানুষ চাইলেও এটি কিনতে পারছেন না। তবে দেশের মধ্যবিত্ত মানুষের কথা চিন্তা করে এরই মধ্যে কিছু দেশি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কিছুটা কম দামের ঘারারাও বাজারে এনেছে। যার দাম দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে চার হাজার টাকা।

অন্যদিকে দিলিস্ন-মুম্বাইয়ের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে গতবারের ঈদ বাজারে এসেছিল সারারা। এ পোশাকটি অনেকটা গাউনের মতো লম্বা। কিন্তু তিনটি পার্টে বিভক্ত। একেবারে নিচের পার্টটি গায়ের সঙ্গে লাগানো থাকে। মাঝখানেরটি বুকের মাঝ বরাবর ডিভাইডেড। এবং উপরের পার্টটি দু'হাতের পাশ দিয়ে নামানো। ডিজাইনের পুরোটাই উপরের পার্টেই করা। গত বছরের বিশেষ আকর্ষণ হলেও এবারের ঈদেও এটি চলছে বেশ। এটিরও দাম বেশ চড়া।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি স্টলেই উঠেছে মুম্বাই-দিলিস্নর ঘারারা। ক্রেতারাও এসে সবার আগে হাত দিচ্ছেন এটিতেই। দেখেই বুঝা যায় এরই মধ্যে ক্রেতাদের নজর কেড়েছে সদ্য বাজারে আসা এ পোশাকটি। বসুন্ধরা সিটির অর্নিমা ফ্যাশন স্টলের ম্যানেজার সুমন এ পোশাকের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, 'এবার দিলিস্ন ও মুম্বাইয়ের পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলছে ঘারারাই। ঘারারার বিশেষত্ব হলো এর নিচের পার্টের বিশেষ স্টাইল। অনেক প্রশস্ত এবং ঢেউ খেলানো এ অংশের জন্য আলাদা কদর পেয়েছে পোশাকটি। এছাড়া উপরের অংশে বিশেষ ধরনের কাচ বসানো। আবার কিছুতে জরি বসানোও রয়েছে। ফলে এটি একটি আলাদা কদর পেয়েছে। ক্রেতাদের অধিকাংশই এটি পছন্দ করছেন। তবে দামের বিষয়টি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু আমাদের দোকানের সব পোশাকই উচ্চ দামের। এখানে নিম্ন দামের কোনো পোশাকই নেই। আমাদের টার্গেটই উচ্চবিত্ত ক্রেতা।'

বসুন্ধরা সিটিতে ঈদের পোশাক কিনতে আসা একজন ক্রেতা ইমতিয়াজ রূপা বলেন, 'ঈদে দামি পোশাকই কিনে থাকি। এবার আজই প্রথম মার্কেটে এসেছি। অনেক পোশাকই দেখলাম। কোনটি কিনব এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে এবার মুম্বাইয়ের ঘারারাটা বেশ ভালো লেগেছে। আরও কিছুক্ষণ দেখবো। তারপর কিনবো।'

তবে রাজধানীর নিউ মার্কেটের পায়েল স্টলে গিয়ে দেখা যায় দেশি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বেশ ভালো মানের ঘারার বাজারে এসেছে। ক্রেতার আগ্রহও এখানেই বেশি। মূলত কম দামের কারণে দেশে তৈরি ঘারারাই কিনতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। তবে ডিজাইন এবং স্টাইলেও পিছিয়ে নেই এসব ঘারারা। বরং অনেক ক্ষেত্রে দেশি মিশেলের সংযোগ থাকায় এটি আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে।

পায়েল স্টলের বিক্রয়কর্মী শিমুল বলেন, ইন্ডিয়ানটি বাজারে আসেছে বেশ কিছুদিন। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় তা খুব বেশি চলছে না। এর বিপরীতে দেশে তৈরি ঘারার দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এবং ডিজাইনও ভালো পাওয়ায় মানুষ এটির দিকেই বেশি ঝুঁকছে।

এখানে ঘারারা কিনতে আসা একজন ক্রেতা পূর্ণিমা বলেন, 'ঈদে একটি দেশি এবং একটি বিদেশি পোশাক কিনে থাকি। দেশিটা কিনে ফেলেছি। কিন্তু বিদেশিটা এখনো কিনিনি। ভাবছি একটি ঘারারা কিনবো। তবে মুম্বাইয়ের ঘারারার দাম অনেক বেশি। ফলে দেশে তৈরি ঘারারাই কিনবো ভাবছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<49649 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1