বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
ঈদ কেনাকাটা

আজিজ সুপার মার্কেটে দেশি পোশাকের খোঁজ

এসএম মামুন হোসেন
  ২০ মে ২০১৯, ০০:০০
গ্রীষ্মের আরামদায়ক সুতিঁ পোশাকের কদর থাকছে ঈদ ফ্যাশনেও। দেশীয় ডিজাইনের রঙ-বেরঙের বিভিন্ন পোশাক ক্রেতাদের জন্য বাজারে এনেছেন ব্যবসায়ীরা। ছবিটি রোববার রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট থেকে তোলা -আমিনুল ইসলাম শাহীন

বিদেশি হাজারো ডিজাইন আর ফ্যাশনে দেশি পোশাকের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা তখনো কিছু দেশি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নানা রং ঢঙে দেশি ব্রান্ডকেই মানুষের সামনে তুলে ধরতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অতীতের মতো ভরপুর জৌলুস না থাকলেও এখনো এ ক্ষেত্রে নেতৃত্বের আসরে রয়েছে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট। এখানকার নামকরা বিপণিবিতানগুলো নিজেদের তৈরি পোশাকের পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের হাতে তৈরি পোশাকগুলোও শহুরে ক্রেতাদের মাঝে তুলে ধরছে। ফলে দেশি পোশাকের ক্রেতারা এ মার্কেটটিতেই বেশি ঢু মারছে।

রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত আজিজ সুপার মার্কেটের নিচ তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত মার্কেট থাকলেও তৃতীয় তলা পর্যন্ত ক্রেতাদের পদচারণায় এরই মধ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে। শুক্র ও শনিবার প্রচন্ড ভিড় থাকলেও রোববার ক্রেতাদের ঢল কিছুটা কম ছিল। তবে পাইকার ক্রেতাদের ভিড় সব সময়ই রয়েছে মার্কেটটিতে।

মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় এর নিচ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত উন্নত মানের বিভিন্ন দেশি পোশাক থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কোনোটিতে শুধু মেয়েদের পোশাক, আবার কোনোটিতে শুধু ছেলেদের, কোনোটি শিশুদের আবার কিছু রয়েছে ছেলেমেয়ে শিশুসহ পুরো পরিবারের সেট। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনেক স্টল দেশি পোশাকে নানা ধরনের আধুনিক নকশা ও ডিজাইনের মিশ্রণ করেছে। আবার কিছু স্টল শুধুমাত্র পাইকার বিক্রির জন্য।

আজিজ সুপারের দ্বিতীয় তলার একটি স্টল আব্রম্ন। এখানে গিয়ে দেখা যায় ছেলেদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্টসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি পোশাক থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পোশাকগুলোতে হাত দিয়ে দেখা যায় এর সুতার বুনন, রং সব কিছুতেই দেশি আবহ রয়েছে। গঠন শৈলীও অনেক উন্নত মানের। তবে কিছু পোশাকে বিদেশি স্টাইলও চোখে পড়ে। দামও তুলনামূলক কম। ৬শ' টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে অধিকাংশ পোশাক। দোকানের ম্যানেজার মো. রোকন খান বলেন, 'মানুষের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়েই দেশি পোশাককে দেশি ডিজাইনের পাশাপাশি বিদেশি ডিজাইনেও আবরণ দেয়া হয়েছে। এতে করে যারা নিরেট দেশি পোশাক পরতে আগ্রহী তাদের চাহিদা যেমন মেটে তেমনই যারা সবকিছুতে বিদেশি স্টাইল পছন্দ করেন তাদের চাহিদাও পূরণ হয়। তবে ডিজাইন যাই হোক কাপড় উৎপাদন থেকে শুরু করে সব কাজই আমাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই করা। ফলে ক্রেতা যেভাবেই নিক না কেন এটি দেশি পোশাক হিসেবেই সবার কাছে বিবেচিত।'

এ মার্কেটের তৃতীয় তলায় দেশিয়া স্টলে গিয়ে দেখা যায়, এখানে ছেলেমেয়ে শিশু-বৃদ্ধ সকলেরই পোশাক রয়েছে। পোশাকের মধ্যে সুতার কাপড় যেমন রয়েছে তেমনই আছে লিলেনের তৈরি পোশাকও। এর মালিক রবিন মুসফিক বলেন, 'এখন গরমের সময় হওয়াই ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় রেখে সুতি ও লিলেনকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এছাড়া দেশি পোশাকে সুতি কাপড়ের প্রাধান্য সব সময়ই বেশি থাকে।'

তবে এসব পোশাকের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকার নাম করা যেসব ব্রান্ড রয়েছে সেগুলোর কাপড়ও রয়েছে কিছু স্টলে। এর মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের তাত, জামদানি, ও হাতে করা নকশী কাজের কাপড়ও। বিসর্গ স্টলের নাসরিন এ বিষয়ে বলেন, 'আমরা মূলত দেশি ব্রান্ডের শাড়িই বেশি তুলে থাকি। তবে ঐতিহ্যগত টাঙ্গাইলসহ অন্য ব্রান্ডের পাশাপাশি আমাদের এখানকার পোশাকের বিশেষত্ব হলো আমাদের প্রায় প্রতিটি পোশাকেই হাতের কাজ রয়েছে। প্রতিটিতেই হাতে আঁকা ফুল, পাখির কাজ ছাড়াও কারচুপির কাচ বসানো শাড়িও আমাদের এখানকার কাপড়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আর এসব বিশেষ ডিজাইনের জন্য মানুষ আমাদের এখানকার কাপড় বিশেষভাবে পছন্দ করে থাকেন।'

আজিজ সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা একজন ডিনা আক্তার জুই বলেন, 'যতই বিদেশি পোশাক বাজারে আসুক না কেন দেশি পোশাক পরে যে আনন্দ পাই তা অন্য কোনো পোশাকে পাই না। ডিজাইনের পাশাপাশি পরতেও আরাম। তবে আমি ঐতিহ্যগতভাবে দেশি ডিজাইনের ভক্ত। এ কারণে প্রতি বছর ঈদে আজিজ সুপার থেকে পুরো পরিবারের জন্য দেশি ডিজাইনের কাপড় কিনে থাকি।'

আরেক ক্রেতা সুমি বলেন, 'আজিজ সুপারে আসি মূলত দেশি পোশাকের জন্যই। এখানে যত ধরনের দেশি পোশাক পাওয়া যায় তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। ফলে দেশি পোশাক মানেই এখনো আমার কাছে আজিজ সুপারকেই মনে হয়। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো দেশি পোশাকের সঙ্গে সুতি কাপড়ের একটি মিল রয়েছে। এই গরমে সুতি কাপড়ের দেশি পোশাক পরার মজাই আলাদা। যারা বিদেশি স্টাইল পরতে অভ্যস্ত তারা দেশি সুতি কাপড়ের আরামটাই উপলব্ধি করতে পারবে না।'

আজিজ সুপারের মেঘ ফ্যাশন হাউজের মালিক ও দীর্ঘদিন ধরে দেশি পোশাক নিয়ে কাজ করেছেন মো. সুমন। তিনি বলেন, 'সারা দেশে দেশি পোশাকের একটি নির্দিষ্ট ক্রেতা রয়েছে। যতই বিদেশি পোশাক আর ডিজাইনের কথা বলা হোক না কেন গ্রাম বাংলার সাদ গ্রহণ না করলে প্রাণ ভরে না এমন মানুষের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। এ কারণে গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা, যমুনা ফিউচার পার্কসহ আধুনিক মার্কেটগুলো যতই নামকরা বিদেশি ব্রান্ড বাজারে আনুক না কেন দেশি ব্রান্ডের একটি বাজার সব সময়ই থাকবে। তাই আজিজ সুপারের কদরও থাকবে। তবে আমাদের জন্য যেটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সেটি হলো সেকেলে ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে দেশি পোশাকের আধুনিকায়নের জন্য নতুন নতুন গবেষণা ও অনুসন্ধান। সেটি সঠিকভাবে করতে পারলে দেশি পোশাক নিজ বৈশিষ্ট্য-গুণেই বিদেশি পোশাককে বাজার থেকে হটিয়ে নিজের অবস্থান আরও শক্ত করতে সক্ষম হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50251 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1