অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় আট হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) 'রিপোর্ট অন গেস্নাবাল ট্রান্সফ্যাট এলিমিনেশন ২০১৯' শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এ সময় বলা হয়, ট্রান্সফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যা বিশ্বজুড়ে মৃতু্যর সবচেয়ে বড় কারণ। ডবিস্নউএইচওর মতে ২০১০ সালে বাংলাদেশে উচ্চ ট্রান্সফ্যাটের গ্রহণের কারণে প্রায় আট হাজার মানুষের মৃতু্য হয়েছে।
ডবিস্নউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়, খাবারে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করছে না। তবে সম্প্রতি দেশটি ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে ভারতের মতো ধাপে ধাপে কাজ শুরু করেছে। ভারত ২০২২ সালের মধ্যে ভোজ্য তেল ও এ জাতীয় পণ্যে ট্রান্সফ্যাটের সীমা ৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে কাজ করছে। এর বাইরে বিশ্বের ছয়টি দেশ ২০১৮ সালে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নিষিদ্ধ করেছে। আরও ২৫টি দেশ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ) একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা পরবর্তী দুই বছরে কার্যকর হবে। খাদ্যপণ্য থেকে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতিশ্রম্নতিকে স্বাগত জানিয়ে ডাবিস্নউইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস অ্যাডহোম গেবেব্রেসাস বলেন, 'বিশ্বজুড়ে খাবারে শিল্প-উৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটের নির্মূল কার্যক্রম গতিশীলতা পাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ২৮টি দেশে বসবাসরত বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ এর ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে।' কিন্তু এখনো বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ ট্রান্সফ্যাটের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে ডাবিস্নউএইচও বাকি দেশগুলোতে ট্রান্সফ্যাট নির্মূল কার্যক্রমকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী ২০২৩ সালের মধ্যে খাবারে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের জন্য গত বছর ডাবিস্নউইচও 'রিপেস্নস' প্যাকেজ চালু করে। ইতোমধ্যে এই প্যাকেজ বাস্তবায়নে দেশগুলোকে সহায়তা দিতে একটি মডিউল প্রকাশ করেছে। মডিউল অনুসারে, বিএসটিআই ও বিএফএসএর মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এটা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, 'আমাদের খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের ক্রমাগত ও অপ্রয়োজনীয় উপস্থিতির ফলে হাজারো প্রাণ হুমকির মুখে পড়ছে। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং বিএসটিআই ও বিএফএসএকে দ্রম্নত সম্ভব প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।' খাবারে ডবিস্নউএইচও নির্ধারিত মোট ফ্যাটের সর্বোচ্চ ২ ভাগ ট্রান্সফ্যাট সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে, দিন দিন মৃতু্য ঝুঁকি আরও বাড়বে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।