শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদাকে মৃতু্যর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২৫ মে ২০১৯, ১০:১৯
রাজধানীর গুলশানে শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -যাযাদি

সরকার 'ছলচাতুরি' করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে মৃতু্যর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসা না দিয়ে 'তিলে তিলে মৃতু্যর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে'। খালেদার জামিনে বাধা দিয়ে তাকে সরকার কারাগারে আটকে রাখতে চাইছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আপনারা দেখেছেন যে, কীভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে দুটি মামলায়। যেটার সাথে সাথে জামিন হওয়ার কথা। সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল প্রথমে বলল যে, উনি অসুস্থ, পরে বলল যে, উনি আরেকটা কাজে ব্যস্ত। সেখানেও সরকার ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। 'সরকার ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে দেশনেত্রী যে মুক্তি, তার আইনগত যে প্রাপ্যতা সেটাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিলম্বিত করছে এবং আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। আজকে জনগণের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এভাবে আটক রেখে, তাকে চিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে মৃতু্যর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।' 'আমাদের কাছে যেটা মনে হয়েছে, যেটা বিশ্বাস করতে চাই না, তারা (সরকার) কী দেশনেত্রীকে এইভাবে বিনা চিকিৎসায় কারাগারের মধ্যেই মেরে ফেলতে চায়, তাকে হত্যা করতে চায়?' প্রশ্ন করেন তিনি। খালেদার জামিন আটকে সরকার তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসার সুযোগ দেয়া না হলে যে কোনো ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী হতে হবে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির সঙ্গে বিএনপির সংসদে যোগদানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, আমাদের, দলের স্বার্থে সংসদে গেছি। বেগম জিয়ার মুক্তি তো কনডিশনাল হবে না, আইনগতভাবে হবে। জামিনে মুক্তি তার পাপ্য। আমরা সেটা চাই। বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি দেশের বাইরে ছিলাম। গতকালই আমি আপনাদের চ্যানেলে দেখলাম আপনরাই বলছেন যে, দুজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। খালেদা জিয়া কেমন আছেন? বিএসএমএমইউতে চিকিসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে বলে দাবি করেছেন একদিন আগেই বিদেশ থেকে ফেরা বিএনপি মহাসচিব ফখরুল। তিনি বলেন, আগে ছিল ম্যাডামের বাম শোল্ডার ফ্রোজেন, এখন তার ডান শোল্ডার ফ্রোজেন হতে যাচ্ছে। একুয়েট পেইন হচ্ছে তার। তার হাতগুলো নাড়াতে পারছেন না। পা তিনি সোজা থাকলে বাঁকা করতে পারছেন না। তিনি এখন কারও সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। তাকে টয়লেটে যেতে হলেও সাহায্য নিতে হয়। আমরা যতটুকু জেনেছি যে, তার মাসলগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, অকেজো হয়ে যাচ্ছে। তার যে রিউমেটিকস আর্থারাইটিস যেটা আছে সেটাও অনেক বেড়ে গেছে। দেশনেত্রীর শরীর-স্বাস্থ্য এত খারাপ হয়ে গেছে যে, উনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। আমরা আগেও বলেছি তিনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভোগছেন। আমার কাছে যে তথ্য আছে এখন তিনি ইনসুলিন নিচ্ছেন। ইনসুলিন নেয়ার পরও তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিএসএমএমইউতে যে কক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন রয়েছেন, তার পরিসর ছোট বলেও জানান ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বার বার বলছি, তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। তিনি বাইরে থেকে চিকিৎসা করতে চান, সেই সুযোগটাও তাকে দেয়া হচ্ছে না। 'হেলথ বুলেটিনের' দাবি খালেদার স্বাস্থ্যের নিত্যকার তথ্য জানাতে সরকারের প্রতি দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। তার নেত্রীর স্বাস্থ্যের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, এই কথাগুলো বলছি এই কারণে যে জনগণের জানা উচিত, নেত্রীর অবস্থা কেমন। ফখরুল বলেন, প্রতিদিন যে খবরগুলো পাচ্ছি দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে, আমরা উদ্বিগ্ন। এটা তো তাদের দায়িত্ব ছিল প্রতিদিন একটা করে হেলথ বুলেটিন দেয়া। সরকারের কাস্টডিতে আছেন তিনি। এটা ডিমান্ড করে যে, উনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে তারা জানাবে। সেটা তারা জানায় না। আত্মীয়-স্বজনদের নিয়মিত দেখা করাও তারা এলাউ করে না। আগে ৭ দিনে দেখা করতে দিত, এখন ১৫দিনেও দেয়া হয় না। আমরা দু'একবার দেখা করেছি, সেই সুযোগটাও দেয়া হয় না। উনি তো সাধারণ কেউ নন। উনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধী দলের নেতা এবং এদেশে স্বাধীনতার ক্ষেত্রে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, বলেন তিনি। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী ও আবদুল কাইয়ুম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে