বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের পলেস্তারা খসে শিশুসহ আহত ১০

নতুনধারা
  ১৩ জুন ২০১৯, ০০:০০
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে বুধবার সকালে শিশু ওয়ার্ডে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে -যাযাদি

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্তরা খসে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশুরোগী ও তাদের স্বজনরা রয়েছেন। বুধবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর আহতদের হাসপাতালের নতুন ভবনের সার্জারি ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ভবন থেকে শিশু ওয়ার্ড সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে সাতটার দিকে রোগী ও তাদের অভিভাবকরা অনেকের ঘুম ভাঙ্গার আগ মুহূর্তে হঠাৎ বিকট শব্দে শিশু বিভাগের ৪নং ওয়ার্ডের ছাদের বড় একটি অংশ খসে পড়ে। এ সময় ৭ জন শিশু রোগী ও ৩ জন অভিভাবক আহত হন। তাদের মধ্যে দুই শিশু রোগীর অবস্থা গুরুতর। এ সময় শিশুর অভিভাবকরা দিকবিদিক ছুটোছুটি করতে থাকেন। আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েন পুরো শিশু বিভাগের রোগী, তাদের অভিবাবক ও সেবিকারা।

আহত রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে রয়েছেন সুমাইয়া (১২), ইসমাইল (৫), ইমাম উদ্দিন (৫ মাস), রাসেল (১৬ মাস), বাদশা (৩৫), রাফি (আড়াই বছর), পারুল বেগম (৪৭), রোজিনা আক্তার (২০) ও মো. ইব্রাহিম (৫০)। ঘটনার পর ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স ও রোগীদের অন্য স্বজনেরা মিলে তাদের উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং পরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন।

শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স নিলুপা আক্তার বলেন, সকাল পৌনে সাতটার দিকে তিনি একা ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন। হঠাৎ বিকল শব্দে তার সামনেই ছাদ থেকে বিশাল খন্ডের পলেস্তারা খসে টুকরো টুকরো হয়ে রোগীদের ওপর পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে ওয়ার্ডে থাকা অর্ধশতাধিক রোগী ও তাদের স্বজনেরা দিগ্বিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। তখন আহত রোগী ও স্বজনদেরও উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসেনি। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী ইয়াছিন আরাফাতের বাবা মো. বাদশা বলেন, তিনি বাইরে থেকে কলা কিনে এনে অসুস্থ ছেলেকে কোলে নিয়ে খাওয়াচ্ছিলেন। এ সময় তার ডান হাত ও মাথার পাশ দিয়ে আট-দশ কেজি ওজনের একটি পলেস্তারা খসে পড়ে। তার হাতে পড়ার কারণে ছেলের মাথায় লাগেনি, না হলে ছেলের মাথা ফেটে যেতে পারত।

বাদশা জানান, তিনি চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছেন। চিকিৎসক এলে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ছেলেকে নিয়ে চলে যাবেন। এখানে আর এক মুহূর্তও থাকার ইচ্ছা তার নেই। বাদশা বলেন, 'আমার অসুস্থ বাচ্চাকে এখানে সুস্থ করতে এনেছিলাম; চোখের সামনে মারার জন্য নয়।'

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, শিশু বিভাগে সরকারিভাবে মোট ২৮টি বেড রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে দেড়শত রোগী ভর্তি থাকে। বুধবার শিশু বিভাগে মোট রোগী ভর্তি ছিল ১২০ জনের মতো। এর মধ্যে যে ওয়ার্ডের ছাদের অংশ খসে পড়ে সেখানে ৭১ জন শিশু ভর্তি ছিল।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. খলিল উল্যাহ জানান, ভবনটিতে শিশু বিভাগ ছাড়াও, পুরুষ মেডিসিন, ফার্মেসি বিভাগ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎকদের চেম্বার ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০০৮ সাল থেকেই শিশু বিভাগের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত ১৫ বরেরও বেশি সময় এভাবে পলেস্তরা খসে পড়ে। এতে শিশু রোগী ছাড়াও নার্স ও ডাক্তারও আহত হন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের দিকে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

শিশু বিভাগের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস। এ সময় জেলা প্রশাসক বুধবারের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে শিশু ওয়ার্ড সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে যত দ্রম্নত সম্ভব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন শেড নির্মাণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53318 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1