বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরিতে ১০% প্রতিবন্ধী কোটা চালুর উদ্যোগ

নূর মোহাম্মদ
  ১৫ জুন ২০১৯, ০০:০০

দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী, অটিস্টিকদের জন্য পৃথক কোটা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য সারাদেশে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক কর্মরত রয়েছে, এর জরিপ চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। জরিপে তাদের কাজের ধরন ও পরিধি এবং চ্যালেঞ্জগুলো তুলে আনা হচ্ছে। এ পরিসংখ্যান পাওয়ার পর নতুন একটি আইন করার উদ্যোগ নেয়া হবে। সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে দশ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধীর জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ প্রতিবন্ধী/অটিস্টিক ব্যক্তি বা শিশু কর্মরত রয়েছে, তাদের কাজের ধরন ও পরিধি জানার জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে জরিপ চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় মারফত দেশের সব প্রতিষ্ঠান-প্রধানদের কাছে কর্মরত প্রতিবন্ধী/অটিস্টিকের সংখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন) শাহীন আখতার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/শিল্প সেক্টরে কর্মরত অটিস্টিক/প্রতিবন্ধী শ্রমিকের সংখ্যা এবং কর্মপরিধি সংক্রান্ত তথ্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন। বর্তমানে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এতিম ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের নিয়ম থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অটিস্টিক/প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধ্যকতা নেই। বেসরকারি কলকারখানাগুলোতে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অটিস্টিক/প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট কোটা সংরক্ষণ করা গেলে দেশের বিপুল সংখ্যক অটিস্টিক/প্রতিবন্ধীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অটিস্টিক/প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র ও কর্মের ধরন চিহ্নিত করার জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কলকারখানায় কর্মরত অটিস্টিক/প্রতিবন্ধী শ্রমিক/কর্মচারীদের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। এজন্য 'ডেভেলপমেন্ট টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড (ডিটিসিএল) নামে সঙ্গে সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি চুক্তি হয়েছে। ডিটিসিএলের মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহদাতাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য সব প্রতিষ্ঠান-প্রধানকে অনুরোধ করা হয়।

এ ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কে এম আলী আজম যায়যায়দিনকে বলেন, সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনার জন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের সামাজিক নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে এ উদ্যোগ। এ জরিপ শুধু তাদের চাকরি নয়, কর্মস্থলে তাদের কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়, সেটাও জানা যাবে। এর ফলে ভবিষ্যতে শ্রমজীবী প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে সারাদেশের বাছাই করা বড় ৭০টি শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অটিস্টিক শ্রমিকদের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। এরমধ্যে গার্মেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস, কটন, টেক্সটাইল, চা বাগান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, করপোরেট অফিস, তথ্যপ্রযুক্তি খাত, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং খাতের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রতিবন্ধীরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, সহকর্মীরা তাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করে, আর্থিক বৈষম্য হয় কি না, হলে কী ধরনের বৈষম্য, অফিসে তার পরিচয় কীভাবে বলা হয়, অফিসে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কী ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয়, এমন ১২টি তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার কথা রয়েছে।

এ ব্যাপারে জরিপ চালানো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আবুল হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ছকে তথ্য সংগ্রহ করছি। এরপর এগুলো যাচাই-বাছাইয়ে কাজ করব। চলতি মাসেই আশা করি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারব। তিনি বলেন, আমরা শুধু জরিপ এবং প্রতিবেদন জমা দেয়ার কাজটি করছি। এ প্রতিবেদনের আলোকে মন্ত্রণালর পরবর্তীতে পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর জন্য সিদ্ধান্ত নেবে।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর গোলাম ফারুক যায়যায়দিনকে বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের চিঠি আমরা পেয়েছি। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রশাসনে কতজন প্রতিবন্ধী/অটিস্টিক কর্মরত রয়েছে তা জমা দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিকরা সমাজ বা দেশের বোঝা নয়, এ উদ্যোগের মাধ্যমে তা অনেকটা প্রমাণ করা যাবে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আওতায় ভবিষ্যতে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের সন্তানরাও যাতে এ কোটার আওতায় আনা যায়, এ জরিপের আরেকটি অন্যতম উদ্দেশ্য।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহীন আখতার বলেন, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চাকরিতে কোটাসহ প্রতিবন্ধী, অটিস্টিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সমাজে পিছিয়ে পড়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রতিবন্ধীদের জন্য ১৯৯৯ সালে ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা পরবর্তীতে জেপিইউএফ-এ পরিণত হয়। অটিজমসহ এনডিডি (নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার) আক্রান্তদের চিকিৎসাসহ যাবতীয় অধিকারের সুরক্ষা আইনের আওতায় আনতে ২০১৩ সালে 'ডিজএবিলিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাক্ট' ও 'দ্য ন্যাশনাল নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার প্রটেকশন ট্রাস্ট অ্যাক্ট' করা হয়। এছাড়াও অটিজম আক্রান্ত শিশুদেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক, কাউন্সিলিং ও অন্যান্য সেবা এবং সহায়ক উপকরণ দেয়া হচ্ছে। দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় মোট ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে ২৪ লাখ প্রতিবন্ধী সেবা গ্রহণ করছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ ১৫টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করে অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল সমস্যাজনিত শিশুদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। অটিজম আক্রান্তদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষায় নিউরো- ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন ও সেখানে তিন হাজার একশ' কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রত্যেক শিশু ও ব্যক্তিকে 'প্রিভিলেজ কার্ড' দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ কার্ডের মাধ্যমে হাসপাতাল, চিকিৎসা, কেনাকাটা, শিক্ষা, গাড়ি পার্কিংসহ সবক্ষেত্রে তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53658 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1