শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফেনীতে নুসরাত জাহান হত্যার বিচার শুরু

যাযাদি ডেস্ক
  ২১ জুন ২০১৯, ০০:০০
নুসরাত জাহান রাফি

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় ১৬ আসামির বিচার শুরু হয়েছে; যার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে আগামী ২৭ জুন।

ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালের বিচারক মামুনুর রশিদ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহাম্মেদ বলেন, মামলার ১৬ আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে আদালত তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে। এ ছাড়া আগামী ২৭ জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।

বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা এই শুনানি হয়। শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহাম্মেদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, আদালত বাদী ও আসামিপক্ষের সব আইনজীবীর বক্তব্য শুনেছে। আসামিপক্ষ জামিনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে। বাদীপক্ষ এর বিরোধিতা করে যুক্তি দেখায়। সব শুনে আদালত বিচার শুরুর আদেশ দেয়।

'২৭ জুন নুসরাতের ভাই মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান, নুসরাতের বান্ধবী নিশাত ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি সাক্ষ্য দেবেন।'

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত গত ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে মৃতু্যশয্যায় নুসরাত বলে গেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রের ১৬ আসামি হলেন ১. সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা ২. নূর উদ্দিন ৩. শাহাদাত হোসেন শামীম ৪. সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম ৫. সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের ৬. জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ ৭. হাফেজ আবদুল কাদের ৮. আবছার উদ্দিন ৯. কামরুন নাহার মনি ১০. উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা ১১. আবদুর রহিম শরীফ ১২. ইফতেখার উদ্দিন রানা ১৩. ইমরান হোসেন ওরফে মামুন ১৪. মোহাম্মদ শামীম ১৫. মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন এবং ১৬. মহিউদ্দিন শাকিল।

এই মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অন্য পাঁচজনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে পিবিআই। আদালত সেটা অনুমোদন করে।

এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় তার ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সাইবার আইনে মামলা হওয়ার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভিযোগ গঠনের শুনানি: পিপি হাফেজ আহাম্মেদ বলেন, বেলা ১১টায় সব আসামিকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে করে জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এ সময় অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামি ও তাদের আইনজীবীরা, বাদিপক্ষের আইনজীবী, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং মানবাধিকার নেত্রীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

'রাষ্ট্রপক্ষ মামলার নথি আদালতে উপস্থাপন করে অভিযোগ গঠনের জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেন। আসামিদের আইনজীবীরা এই মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনালে অভিযোগ গঠনের বৈধতা বিষয়ে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা মামলার ধারার (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৪ (১) ও ৩০ ধারা) বিষয়ে আদালতের আপত্তি জানান।

পরে আসামিরা তাদের বক্তব্য শুনতে বিচারকের কাছে আর্জি জানান। আদালত একে একে ১৬ আসামির বক্তব্য শোনে। তাদের মধ্যে ১২ আসামি ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দি প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তাদের আবেদন মামলার নথিতে সংযুক্ত করে। পরে আসামিদের পক্ষে আইনজীবীদের বক্তব্য শোনে আদালত। আইনজীবীরা আসামিদের পক্ষে জামিন আবেদন করলে আদালত নামঞ্জুর করে।'

বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, 'আসামিপক্ষ হত্যার উপকরণ কেরোসিনকে দাহ্য পদার্থ নয় বলে জানালে বাদীপক্ষ তাদের যুক্তি তুলে ধরে। বাদীপক্ষ এই সাত সাক্ষীর ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দির বিষয়টিও আদালতে তুলে ধরে।

আদালতে বাদীপক্ষ এই মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আসামি করার জন্য আবেদন করে। বিচারক বাদীপক্ষকে অবগত করেন, 'ইতোপূর্বে সাইবার ক্রাইম ট্রাইবু্যনালের একটি মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। ওই মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে। নুসরাত হত্যা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা যেহেতু অভিযোগপত্রে ওসিকে আসামি করেননি, সে জন্য এ অবস্থায় ওসিকে এই মামলায় যুক্ত করার উপায় নেই।'

আসামিপক্ষের আইনজীবী হানিফ মজুমদার বলেন, 'মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাপ প্রয়োগ করে আসামিদের জবানবন্দি নিয়েছেন। আদালতে আসামিদের জামিন আবেদন করলেও আদালত এতে সাড়া দেয়নি। আসামিরা ন্যায় বিচার পাননি। এ জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<54579 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1