শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদেরই ছাড়িয়ে গেল রাজউক

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
বুধবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলপ্রকাশ হয়। প্রত্যাশিত সাফল্য পেয়ে এভাবেই আনন্দ-উলস্নাসে মেতে ওঠে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা -যাযাদি

উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে শতভাগ পাস করেছে। শুধু তাই নয়, ১ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী 'এ' পস্নাস পেয়েছেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে। যা গত চার বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।

এমন ফলাফলে কলেজ ক্যাম্পাসে বইছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। আনন্দ ভাগাভাগি করতে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসেছেন কলেজ প্রাঙ্গণে। পাস করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রাজউকের বর্তমান শিক্ষার্থীরাও।

আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণার আগে থেকেই ঢোল নিয়ে রাজউক মডেল কলেজ মাঠে হাজির হন শিক্ষার্থীরা। দুপুর পৌনে ১টায় কলেজ প্রাঙ্গণে নোটিশ বোর্ডে ফলাফল টাঙিয়ে দেয়ার পর থেকেই দেখা মেলে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর খুশির বন্যা।

প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, ২০১৯ সালে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ১ হাজার ৫৮৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছেন। পাসের হার শতভাগ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ বেড়েছে ৩৬৭টি।

দুপুর ২টার কিছু আগে মাঠে নেমে আসেন প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম।

তিনি বলেন, 'বিগত চার বছরের তুলনায় এবার রাজউক কলেজের ফলাফল সর্বোচ্চ। হয়তো ঢাকার সব কলেজগুলোর মধ্যে আমরা সেরা।'

তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল এটি। তবে ভালো ফল করার চেয়ে জরুরি ভালো মানুষ হওয়া। আশা করছি, ভালো করা শিক্ষার্থীরা সুন্দর মানুষ হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।'

রাজউক কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি নেতৃত্ব দেয়া, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রমাণ করার অনুপ্রেরণাও দেয়া হয় বলে বক্তৃতায় উলেস্নখ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী আনিসা মেহরিন বলেন, 'নিজের চেষ্টা, শিক্ষকদের সহায়তা আর বাবা-মায়ের পাশে থাকার কারণেই এই ফলাফল করতে পেরেছি।' নিজেকে আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, 'পড়ালেখার কোনো বিকল্প নেই। ভালো ফল করতে নিজেকে কষ্ট করতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।'

সন্তানদের ভালো ফলাফলের এই আনন্দে যখন অভিভাবক ও শিক্ষকরাও শরিক হন তখন সেই আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অনেক অভিভাবকের চোখে দেখা যায় আনন্দাশ্রম্ন। তবে প্রত্যাশিত ফল করতে না পারায় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই।

মেয়ের ভালো ফলাফলের আনন্দ প্রকাশ পাচ্ছিল মা সৈয়দা মেহরুবা আহমেদরে চোখেমুখেও। তিনি বলেন, মেয়েকে সবসময় ভালোটাই শেখানোর চেষ্টা করছি। আজ ওর এই ফলাফলে আমি সত্যি আনন্দিত।

বিজ্ঞানের ছাত্র সাইফ ইকবালও পেয়েছেন জিপিএ-৫। তবে দেশের কোথাও পড়ার ইচ্ছা নেই জানিয়ে সাইফ বলেন, 'বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। এজন্য ফলাফলে খুশি। এখন বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করব।'

কলেজের একপাশে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল মেহেরুননেসা মনি নামে একজন অভিভাবকের সঙ্গে। তার খুশির মাত্রাটা যেন একটু বেশি। এক সঙ্গে দুই মেয়ে পাস করেছে তার। শুধু পাসই নয়, দুজনই জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

তিনি বলেন, 'কলেজের পাশাপাশি টিউশনি, কোচিং থেকে শুরু করে যা যা করা দরকার ওদের জন্য তাই করেছি। আজ আমি সফল হয়েছে। ভীষণ আনন্দিত আমি।'

তার ছোট মেয়ে সাফিনা আফরিন আবৃত্তি জানালেন, 'বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছি, প্রকৌশলী হতে চাই।'

ঢাকায় গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ রোদের তাপ ছিল বেশ। রোদের সঙ্গে পালস্না দিয়ে ড্রাম, ঢোল নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠা তরুণরা কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়। একে একে বাড়ির পথে পা বাড়াল সবাই। কারণ, এই ফলাফল হাতে নিয়েই যেতে হবে অনেক দূর। তবে যাওয়ার আগে তাদের উচ্ছ্বাস প্রেরণা দিয়ে গেল নতুনদের।

জিপিএ-৫ ও পাস, দুটোই

কমেছে ভিকারুননিসায়

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৯৯ দশমিক ৩২ ভাগ, যা গত বছর ছিল ৯৯ দশমিক ৭৮ ভাগ। এ ছাড়া এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৭৫ জন, যা গতবার ৯৫৭ জন। ফলে এ বছর জিপিএ-৫ এবং পাসের হার দুটিই কমেছে ভিকারুননিসায়।

বুধবার দুপুরে নিউ বেইলি রোড ক্যাম্পাসে চলতি বছরের এইচএসসির ফলাফলের তথ্য জানান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগম।

ফেরদৌসী বেগম বলেন, 'এবার আমাদের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১,৯২৫ জন, যার মধ্যে পাস করেছে ১৯১২ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১,৩৮৩ জন, মানবিক থেকে ২৫৮, ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ২৮৪ জন অংশ নেয়। এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৯৭ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ১৯, ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ৬৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ রেজাল্টকে আমি কখনো প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা হিসেবে মনে করি না। অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বা ভালো করতে পারেনি। ফলে পাসের হার একটু কমেছে।'

এদিকে যারা ভালো ফলাফল করেছেন, তারা আনন্দের বাঁধভাঙা জোয়ারে ভাসছেন। নেচে, গেয়ে, জয়ধ্বনি দিয়ে তারা প্রকাশ করেছে জীবনের আনন্দময় এ মুহূর্তটিকে। শিক্ষক শিক্ষিকা, স্কুলের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও যোগ দেন এই উচ্ছ্বাস, আনন্দে।

উচ্ছ্বাসের মাঝেও চিন্তা

সামনে বড় লড়াই

শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা ছিল বুধবার সকাল থেকেই। কখন তারা পাবে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল। দুপুর ১টার দিকে মিলল সেই ফল, শেষ হলো উৎকণ্ঠা।

অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদেরও মাঝে দেখা মিলল উচ্ছ্বাস। কলেজ প্রাঙ্গণেই নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে পড়েন তারা।

তবে জিপিএ ৫ এর চেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো জায়গায় ভর্তি হওয়ায়ই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত বলছেন শিক্ষকরা।

এ জন্য শিক্ষার্থীরা বলছেন, সামনের ভর্তি যুদ্ধজয় করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া মহিমা আলম লোপা বলেন, মা-বাবা শিক্ষক সবার সহযোগিতায় কাঙ্ক্ষিত ফল 'এ'-পস্নাস পেয়েছি। আমার কষ্টের ফল পেয়েছি।

মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা তার। জানালেন, এখন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার লড়াইয়ে নামতে হবে। এটা নিয়েই তার বড় চিন্তা।

এই ছাত্রীর মা বলেন, 'আনন্দের ভাষা নেই। আমার মেয়ে অনেক কষ্ট করেছে। তার প্রতিদান সে পেয়েছে। মেয়ের ইচ্ছা ডাক্তার হবে।'

ফলাফল সম্পর্কে মতিঝিল আইডিয়ালে স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, 'আমাদের ছাত্রীরা বরাবরই ভালো ফলাফল করে। এবারও ভালো করেছে। তাদের সাফল্যেই আমরা সন্তুষ্ট।'

তবে জিপিএ-৫ এর চেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো জায়গায় ভর্তি হওয়ায়ই এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত উলেস্নখ করে তিনি বলেন, কারণ- সেখানে লাখ লাখ শিক্ষার্থী একসঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। এ জন্য কারও নির্ভর না হয়ে সব পাঠ্যবই পড়তে হবে।

মানবিক বিভাগের তাসফিয়া তাজিন জানান, 'জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি খুবই খুশি, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তিনি বলেন, এখন ভালো জায়গায় ভর্তির পালা। প্রধান চয়েজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।'

ঢাকা কলেজে পাসের

হার ৯৯.৫৩ শতাংশ

গত বছরের তুলনায় এবার ঢাকা কলেজে পাসের হার বেড়েছে। গত বছর এইচএসসিতে ঢাকা কলেজে পাসের হার ছিল ৯৭.৬২ শতাংশ আর এবার ৯৯.৫৩ শতাংশ।

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা কলেজ থেকে ১২৮৫ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয় ১২৭৬ পরীক্ষার্থী। জিপিএ- ৫ পেয়েছে ৬৯১ শিক্ষার্থী।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯১৭। যার মধ্যে কৃতকার্য ৯১৫ আর অকৃতকার্য হয়েছে ২ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৩৮ পরীক্ষার্থী।

বাণিজ্য বিভাগ থেকে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯৭, যার মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ১৯২ আর অকৃতকার্য হয়েছে ৫ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৪ পরীক্ষার্থী।

মানবিক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭১, যার মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ১৬৯ আর অকৃতকার্য হয়েছে ২ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯ পরীক্ষার্থী।

ফলাফলের বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের এমন ভালো ফলাফলের পেছনে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী প্রত্যেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা রয়েছে। আমরা সবাই একটা টিম হয়ে কাজ করেছি, যার কারণে এমন ফলাফল। ছাত্রদের ঝরেপড়া রোধ তথা শতভাগ পাসের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<58704 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1