শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন

যাযাদি ডেস্ক
  ২১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
হতদরিদ্র মানুষকে বিচলিত করে সর্বগ্রাসী ক্ষুধা। বর্তমান সময়ে সে ক্ষুধা নিবারণকে বিলম্বিত করছে ব্যাপক বন্যা। তাই ত্রাণের জন্য মরিয়া হয়ে ছুটে এসেছেন বৃদ্ধা। চলৎশক্তি হারিয়েছেন বলে এসেছেন মেয়ের কোলে চড়ে। জামালপুরের বেলগাছা গ্রামে যমুনার তীর থেকে তোলা ছবি -ফোকাস বাংলা

দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার্ত ও পানিবন্দি মানুষের দুঃখদুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। জীবন বাঁচাতে তারা ঘরের চালে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দোতলায় কিংবা উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। কুড়িগ্রাম ও ময়মনসিংহে ৩ শিশুর পানিতে ডুবে করুণ মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। বন্যায় রেল লাইনসহ যোগাযোগব্যবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।

আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রমে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। সেই সঙ্গে বেড়েছে দুর্ভোগ। এখনো ঘরে ফিরতে পারছে না বন্যা দুর্গতরা। গত ১০ দিনে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বানভাসিদের জন্য অপ্রতুল ত্রাণের কারণে হাহাকার দেখা দিয়েছে। বিশাল এলাকাজুড়ে বন্যা হওয়ায় জনপ্রতিনিধিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। তারা বন্যাকবলিত সবার কাছে পৌঁছতে পারেননি। এদিকে শুক্রবার সকালে বন্যার পানিতে পড়ে সীমা খাতুন নামে দেড় বছরের একটি শিশু মারা গেছে। সে উলিপুর পৌরসভার খাওনারদরগা গ্রামের ভাটিয়াপাড়ার সাদেক মিয়ার কন্যা। ৮নং ওয়ার্ডের পৌর কমিশনার সোহরাব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে গত ১০ দিনে পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ জনে। জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার ফলে ৫৭টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় দুই লাখ পরিবারের ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে প্রায় দুই লাখ। ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর। বন্যায় ৫শ কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কিলোমিটার বাঁধ ও ৪১টি ব্রিজ/কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬৪ হাজার মানুষ ১৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি। বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করছেন।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম): কুড়িগ্রামের গোটা চিলমারী উপজেলা বন্যার পানিতে ভাসছে। লক্ষাধিক মানুষ দেড় সপ্তাহব্যাপী পানিতে বন্দি অবস্থায় রয়েছে। বন্যার্ত মানুষের দুঃখদুর্দশা চরমে উঠেছে। সপ্তাহব্যাপী বিদু্যৎ সরবরাহ না থাকায় বন্যার্তদের দুরবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। জীবন বাঁচানোর জন্য অনেকেই ঘরের চালে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দোতলায় ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। বাড়িঘরে পানি ওঠার ফলে ধনী-গরিব একাকার হয়ে পড়ছে। বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার গবাদি পশু মারা গেছে। উপজেলার রমনা এলাকায় রেললাইন ভেঙে গিয়ে রেল যোগাযোগ ও উপজেলার প্রধান সড়কসহ সকল রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে।

চরভদ্রাসন (ফরিদপুর): ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার চার ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ হতে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য গাজীরটেক ইউনিয়নের ৪০ পরিবার ছাড়া পানিবন্দি পরিবারের সঠিক কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।

সরেজমিনে শনিবার সকালে উপজেলার চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের চর গেপালপুর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘুরে দেখা যায় ঘরবাড়ী ছেড়ে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে কেউ নৌকাযোগে আবার গবাদি পশু নিয়ে কেউ ছুটছে পানি ভেঙে। সকলেরই গন্তব্য উঁচু কোনো নিরাপদ আশ্রয়। কেউ আবার মাচাপেতে তার ওপরই রান্নাবান্নার কাজ সারছেন। বানের পানিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা। ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

শিবালয় (মানিকগঞ্জ): যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এর প্রভাব পড়েছে পদ্মাতেও। পানিতে ভরে উঠেছে শাখা নদী ইছামতি, কালিগঙ্গা, ধলেশ্বরী। পস্নাবিত হচ্ছে জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদী পাড় ও নিম্নাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। এদিকে, পদ্মা-যমুনায় অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি ও প্রবল স্রোতে স্পর্শকাতর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরি-লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে সহস্রাধিক পরিবহন। এতে উভয় ঘাটে স্থায়ী যানজট সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তি বাড়ছে।

বগুড়া: বগুড়ায় যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ সেমি পানি কমে এখনো তা বিপদসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, বাঙালী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। শনিবার দুপুরে বাঙালীর পানি বিপদসীমার প্রায় ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে যমুনার পানি কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, যমুনার পানি বিপদসীমার নিচে নামতে আরও ৩/৪দিন লাগবে। গত দু'দিনে যমুনার পানি কমেছে প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার। আর গাইবান্ধার বাঁধভাঙা পানির কারণে বাঙালী নদীর পানি আরও ২/১দিন বাড়তে পারে। যমুনার পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। এদিকে, বন্যার্তদের মধ্যে সরকারি ত্রাণের বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন ত্রাণ বিতরণ করছে।

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বাড়ি ফেরার পথে বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুর করুণ মৃতু্য হয়েছে। ২০ জুলাই শনিবার দুপুরে উপজেলার আমতৈল ইউনিয়নের চকেরকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন চকেরকান্দা গ্রামের হযরত আলীর পুত্র জিহাদ হুসাইন (৯) ও আয়ূব আলীর পুত্র তানজিদ (৬)। উভয়ে একে অপরের চাচাতো ভাই।

নিহতদের স্বজনরা জানায়, নিহত দুই শিশু স্থানীয় বাজারে মাথার চুল কাটতে আসে। চুল কাটা শেষে বাড়ি ফেরার পথে পানির স্রোতে একজন ভাসিয়ে নিতে থাকলে অপর একজন সহযোগিতা করতে গেলে সেও পানিতে ভেসে যায়। পরে স্থানীয়রা মাছ ধরার জালের মাধ্যমে দুটি মৃত দেহকে উদ্ধার করে।

টাঙ্গাইল: যমুনা নদীর টাঙ্গাইল অংশে গত ক?য়েক?দি?নে অস্বাভা?বিক হা?রে পা?নি বৃ?দ্ধি পে?লেও শনিবার সকাল থেকে কমতে শুরু করেছে। ফলে পানিবাহিত রোগব্যাধি বাড়তে শুরু করেছে। এখনো পর্যস্ত উপদ্রম্নত এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। জেলা-উপজেলা প্রশাসন থেকে পানীয় জল ও কোনো প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়নি।

জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যানুযায়ী শনিবার সকাল পর্যন্ত বন্যায় জেলার ৬টি উপজেলার নদী তীরবর্তী ৩৪টি ইউনিয়নের ২১০টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ২টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা সম্পূর্ণ পস্নাবিত হয়ে প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে- টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও মির্জাপুর।

চলতি বন্যায় এ পর্যন্ত এক হাজার ৩৩০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ২১ হাজার ৯৭৪টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন হাজার ৩৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। চারটি ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার ৬টি উপজেলার ১০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ৮৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। ১৬টিতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যার্তদের সাহায্যার্থে জেলায় মোট ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ভূঞাপুরে এবং ২টি গোপালপুরে। এইসব আশ্রয় কেন্দ্রে দুই হাজার চারশ লোক আশ্রয় নিয়েছে। তবে বন্যা দুর্গত এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৬৫ টন চাল ও নগদ তিন লাখ টাকা ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59200 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1