শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুষের মামলায় ডিআইজি মিজান গ্রেপ্তার

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
মিজানুর রহমান

ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় পুলিশের বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রোববার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস এই আদেশ দেন।

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ঘুষ লেনদেনের মামলায় ডিআইজি মিজানকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে। আদালত শুনানি নিয়ে মিজানকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। দুদকের আরেক মামলায় ডিআইজি মিজান গত ১ জুলাই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। রোববার মিজানকে কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়।

আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলায় মিজানের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। মিজান সম্পূর্ণ নির্দোষ। শুনানি শেষে মিজানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ এনে দুদকের বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ও ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে গত ১৬ জুলাই মামলা করে দুদক।

এই দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা সংস্থার পরিচালক ফানাফিলস্নাহ। মামলার এজাহারে বলা হয়, খন্দকার এনামুল বাছির কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। অভিযোগ আছে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুযোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে তার অবৈধভাবে অর্জিত ৪০ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন। ঘুষের ওই টাকার অবস্থান গোপন করেছেন।

একইভাবে ডিআইজি মিজানুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা হয়েও তার বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় অর্থাৎ অনুসন্ধানের ফলাফল নিজের পক্ষে নেয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে খন্দকার এনামুল বাছিরকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করেছেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় এনামুল বাছিরকে। ওই অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় গত ৯ জুন ডিআইজি মিজান ওই অনুসন্ধান থেকে বাঁচতে এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে। এর পরপরই দুদকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে খন্দকার এনামুল বাছিরের বক্তব্য গ্রহণ করে এবং পারিপার্শ্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে ঘুষ নেয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পায়। এরপর ১৩ জুন পরিচালক ফানাফিলস্নাহর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে।

অনুসন্ধান দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য গ্রহণ, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ ও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে। তাতে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ডিআইজি মিজানুর রহমান একটি বাজারের ব্যাগে করে কিছু বইসহ ২৫ লাখ টাকা খন্দকার এনামুল বাছিরকে দেয়ার জন্য রাজধানীর রমনা পার্কে আসেন। সেখানে কথাবার্তা শেষে একসঙ্গে বেরিয়ে শাহজাহানপুর এলাকায় যান। এরপর খন্দকার এনামুল বাছির ২৫ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি নিয়ে তার বাসার দিকে চলে যান। একইভাবে ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ডিআইজি মিজান একটি শপিং ব্যাগে করে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে রমনা পার্ক যান। সেখানে আলাপ আলোচনা শেষে দুজনে যান শান্তিনগর এলাকায়। শান্তিনগরে এনামুল বাছির ব্যাগটি নিয়ে চলে যান। দুদকের কাছে এ ঘটনার প্রযুক্তিগত প্রমাণের পাশাপাশি চাক্ষুষ সাক্ষীও রয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, এনামুল বাছির ও মিজানের কথোপকথন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাছির তার ছেলেকে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে আনা-নেওয়ার জন্য ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছে একটি গাড়িও দাবি করেন। বিষয়টি তিনি দুদকের বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেন।

ডিআইজি মিজান ও বাছির দুজনই বেআইনিভাবে দুটি পৃথক সিম ব্যবহার করে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই সিম দুটি ডিআইজি মিজানের দেহরক্ষী মো. হৃদয় হাসান ও আরদালি মো. সাদ্দাম হোসেনের নামে কেনা। সিমের সঙ্গে বাছিরকে একটি স্যামসাং মোবাইল সেটাও কিনে দেন মিজান। ওই দুটি নম্বরের মাধ্যমে মিজান ও বাছির নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। দুদক বলছে, ডিআইজি মিজান অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে সংরক্ষণ করেছেন এবং পরে সেগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধান দল বলেছে, অনুসন্ধানকালে বিশেষজ্ঞ মতামত, প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের বক্তব্য, অডিও রেকর্ডে উভয়ের কথোপকথন ও পারিপার্শ্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে প্রমাণ হয়েছে। নিজে অভিযোগের দায় থেকে বাঁচার জন্য ডিআইজি মিজানুর রহমান অসৎ উদ্দেশ্যে ঘুষ নিতে এনামুল বাছিরকে প্রভাবিত করেছেন।

ডিআইজি মিজানের সরবরাহ করা অডিও রেকর্ডের সূত্র ধরে দুদকের পরিচালককে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার তথ্য একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই ওই সব গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে মিজান দাবি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় দুদক ঘুষের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে পরিচালক ফানাফিলস্নাহর নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এনামুল বাছিরকে।

এনামুল বাছির দুদকে যে বক্তব্য জমা দিয়েছেন, তাতে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তার অভিযোগ, যে প্রক্রিয়ার ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়েছে, তা যথাযথ নয়। এছাড়া পরীক্ষার জন্য তার কোনো 'স্যাম্পল ভয়েস' নেয়া হয়নি বলেও উলেস্নখ করেন বাছির। তার দাবি, তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।

ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুন করা ওই মামলায় ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় মিজান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মিজানুর রহমানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ভাগনে পুলিশের এসআই মাহমুদুল হাসান ও ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<59312 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1