বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষ গড়ার কারিগর সেই শিক্ষকরা এখনো রাস্তায়

অবস্থানের ১৫তম দিন
যাযাদি রিপোটর্
  ২৪ জুন ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ জুন ২০১৮, ২৩:৪৫

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ব্যস্ত রাস্তা। সড়ক উন্নয়নের কাজ চলায় যানবাহনের গতিও ধীর। এর মধ্যেই ব্যস্ত নগরবাসীর ছুটে চলা। তবে নগরবাসীর ছুটে চলার মাঝে সবার দৃষ্টি গিয়ে ঠেকছে প্রেসক্লাবের ঠিক বিপরীত দিকে। পলিথিন বিছিয়ে বসে আছেন একদল মানুষ। এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ১০ জুন থেকে তারা এখানে লাগাতার অবস্থান কমর্সূচি পালন করেছেন। মূল সড়কেই পলিথিন পিছিয়ে শুয়ে-বসে লাগাতার কমর্সূচি পালন করছেন মানুষ গড়ার এ কারিগররা। পাশেই রাখা আছে তাদের ব্যাগ-ব্যাগেজ, গামছা-লুঙ্গি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে গত ১৫ দিন ধরে তারা খেয়ে না খেয়ে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এখানেই অবস্থান করছেন।

শিক্ষকদের দাবি আদায়ে লাগাতার কমর্সূচিতে অংশ নেয়া কুড়িগ্রামের হাজিপাড়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক আলী আকবর বলেন, ‘সবাই বলে আমরা (শিক্ষকরা) নাকি মানুষ গড়ার কারিগর। আর সেই আমরাই আজ দাবি আদায়ে রাস্তায় পড়ে আছি। আমাদের দিকে দেখার কেউ নেই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এখানে অবস্থান করছি। বছরের পর বছর ধরে আমরা বেতন পাই না, পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এ অভাবের জীবনেও এখানে এসে আন্দোলন করতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাকা তো বেশি নেই, এর মধ্যেই হোটেলে খেতে হয়। এক বেলা খাই, এক বেলা খাই নাÑ এভাবেই রাস্তার পাশে অসহায় মানুষের মতো রাত কাটাচ্ছি আমরা। ২০০০ সালে থেকে একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করি কিন্তু এখনো বেতন পাইনি। জীবিকার তাগিদে শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষি কাজ করি। আমাদের ছাত্ররাও আজ ভালো ভালো জায়গায় কাজ করছে। আর আমরা মানুষ গড়ার কারিগর রাস্তায় বসে আছি এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছি।’

আন্দোলনে অংশ নেয়া আরেক শিক্ষক গোলাম মোস্তফা এসেছেন দিনাজপুর থেকে। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে এসেছি, আমাদের তো এমনিতেই অভাব, এর মধ্যে আবার ১৫ দিন ধরে এখানে অবস্থান। থাকা-খাওয়ার ঠিক নেই। হোটেলে খাওয়ারও পযার্প্ত টাকা নেই। এর মধ্যে অলি-গলির হোটেলে গিয়ে ২০-৩০ টাকার মধ্যে খাচ্ছি। এক বেলা খাই অন্য বেলা না খেয়ে থাকি, আর রাস্তায় পলিথিনের ওপরেই ঘুমাই। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পযর্ন্ত শিক্ষকরা এভাবেই থাকবে। মানুষ গড়ার কারিগররা এভাবেই রাস্তায় বসে আছে, যেন আমাদের কেউ দেখার নেই।’

স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তির দাবিতে গত ১০ জুন থেকে ২৪ জুন, রোববার পযর্ন্ত ১৫তম দিনেও লাগাতার অবস্থান কমর্সূচি পালন করছেন তারা। মুষলধারে বৃষ্টি মধ্যে প্রতীকী অনশন পালন করেছেন তারা। শুধু তাই নয়, পরিবারের সদস্য ছাড়া ঈদুল ফিতরের নামজ এখানেই আদায় করেছেন।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কমর্চারী ফেডারেশনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, সরকারি হিসাব মতে সারাদেশে ৫ হাজার ২৪২টি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি) কমর্রত প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কমর্চারীকে এমপিওভুক্তির দাবিÑ গত ৫ জুন অনশন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন উপস্থিত হন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আমাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রæতি দেন। ২০১৮-১৯ প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী এমপিওভুক্তির বাস্তবায়নের জন্য কোনো অথর্ বরাদ্দ রাখা হয়নি।

রোববার শিক্ষকদের অবস্থান কমর্সূচিতে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার, সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভূষণ রায় উপস্থিত হলে শিক্ষকদের মাঝে প্রাণচঞ্চল্য ফিরে আসে। সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, রোববারের মধ্যে প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। আর তা না হলে সোমবার সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকরা অনশন কমর্সূচি শুরু করবেন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে