শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরু বেশি, ক্রেতা কম

নতুনধারা
  ০৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০৮
ঝিনাইদহের 'যুবরাজ' এসেছে ঢাকার গাবতলীতে। এসেছে যুবরাজের বেশেই। গলায় তার রঙিন ঝুমঝুমি মালা। দুই শিং এ শোভা পাচ্ছে কাগজের রঙিন ফুল। শুধু তাই নয়, হাটের মাঝেও যাতে সে গরমে কষ্ট না পায় সেজন্য তার মাথার ওপর ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে বৈদু্যতিক পাখা। তার রাজসিক সম্মান বয়ে আনবে উচ্চমূল্য। ইতোমধ্যে যুবরাজের দাম চাওয়া হয়েছে ৪০ লাখ টাকা -যাযাদি

যাযাদি রিপোর্ট ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গরু-মহিষ-ছাগলসহ কোরবানিযোগ্য বিভিন্ন গবাদিপশুতে রাজধানীর স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠলেও সে তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা এখনো অনেক কম। এর ওপর কিছু সময় পরপরই পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন আকারের দেশীয় গরুবোঝাই ট্রাক ঢাকার হাটগুলোতে এসে ভিড়ছে। আসছে ভারতীয় ও মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে আনা বিপুল সংখ্যক গরুও। এ অবস্থায় গরুর খামারি ও ব্যাপারীরা অনেকে ভীষণভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। আজ-কালের মধ্যে ক্রেতার ভিড় না বাড়লে বড় ধরনের লোকসান দিয়ে তাদের গরু বেঁচতে হবে- কেউ কেউ এমন আশঙ্কাও করছেন। বুধবার সকাল থেকে বিকাল অবধি রাজধানীর একাধিক স্থায়ী হাট ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তবে হাট ইজারাদাররা বলছেন, রাজধানীতে বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির হাট শুরু হলেও সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে এখনো ঈদের ছুটি শুরু হয়নি। তাই ক্রেতারা এখনো কোরবানির পশু কিনতে হাটমুখী হননি। এর ওপর ডেঙ্গু আতঙ্কে অনেকেই আগেভাগে গরু-ছাগল কিনে বসতবাড়ি অপরিচ্ছন্ন করতে চাইছেন না। তবে কাল-পরশুর মধ্যে হাটে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে। এছাড়া এবার হাটে হাটে ঘুরে গরু-ছাগলের দরদাম করা লোকের সংখ্যা কম হবে বলে মনে করেন ইজারাদাররা। তাদের ভাষ্য, প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে বেশকিছু মানুষ পরিবারের একাধিক সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এক হাট থেকে আরেক হাটে ঘুরে কোরবানির জন্য পছন্দের গরু-ছাগল কিংবা অন্য কোনো পশু কেনেন। তরুণরা কেউ কেউ আবার দল ধরে এমনিতে বিভিন্ন হাটে ঘুরে বেড়ান। বিশাল আকৃতির গরু-ছাগল কিংবা উট-দুম্বা পেলে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। তবে এ বছর ডেঙ্গুর কারণে এ ধরনের দর্শনার্থীর সংখ্যা কমবে। তাতে হাটে ক্রেতার সংখ্যা বেশকিছু কম মনে হবে। কিন্তু প্রকৃত ক্রেতারা ঠিকই এরমধ্যেই কোরবানির পশু কিনবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ইজারাদাররা। তবে হাট সংশ্লিষ্টদের অনেকের ধারণা, ঈদের আগে ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও বিপুলসংখ্যক গরু অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা বন্যার কারণে গৃহস্থরা অনেকেই বাড়ির পালা গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া বন্যার্ত এলাকায় পানি নেমে যাওয়ার পরও গোখাদ্য সংকট এবং খড়-কুড়া-ভুসির দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় খামারিরাও বেশকিছু গরু সময়ের আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। ব্যাপারীরা ওই সব গরুই কোরবানির পশুর হাটে তুলেছেন। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় সীমান্তপথে ওপার থেকে গরু আসা বন্ধ থাকলেও এবার সে কড়াকড়ি বেশ খানিকটা শিথিল। সে কারণে ভারত থেকেও বিপুলসংখ্যক গরু আসছে। অথচ ডেঙ্গুর কারণে এবার বরাবরের মতো পশু কোরবানি দেয়ার আগ্রহ কম। সব মিলিয়ে বাজার পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হতে পারে। তবে ছোট দেশি গরুর দাম কিছু বেশি হবে বলে মনে করেন তারা। তাদের এ শঙ্কা যে একেবারে অমূলক নয়, তা গরুর ব্যাপারী, খামারি, হাটে গরু নিয়ে আসা গৃহস্থ ও ক্রেতাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ব্যাপারীরা জানান, অস্থায়ী হাটে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে পুশু বেচাকেনা শুরু হলেও কদিন আগেই তারা গরু নিয়ে এসেছেন। প্রতিবছর এ সময় তাদের বেশকিছু গরু বিক্রি হয়েছে। তবে এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। গত দুই-তিন দিনে অস্থায়ী পশুর কোনো হাটেই ১০-১২টির বেশি গরু-ছাগল বিক্রি হয়নি। বুধবার স্বল্পসংখ্যক যেসব ক্রেতা হাটে এসেছেন, তাদের বেশিরভাগই ছোট দেশি গরু দরদাম করছেন। আফতাবনগর হাটে গরু কিনতে আসা বনশ্রীর বাসিন্দা আসলাম শেখ জানান, তার স্ত্রী কদিন আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার সেবা-শ্রশ্রূষাতেই পরিবারের সদস্যরা সবাই ব্যস্ত। তাই শখ থাকলেও প্রতিবারের মতো তার দুই সন্তান এবার হাটে আসতে পারেনি। তার নিজেরও হাট ঘুরে ঘুরে দর কষাকষি করে গরু কেনার আগ্রহ নেই। তাই এবার ৬০-৭০ হাজার টাকার মধ্যে ছোট আকারের গরু কিনতে চাইছেন। পছন্দমতো গরু কিনতে না পারলে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ভাগে গরু কোরবানি নিয়ে ধর্মীয় নির্দেশনা পালন করবেন বলে জানা আসলাম শেখ। একই হাটে গরু কিনতে আসা উত্তর বাড্ডার ব্যবসায়ী ওলি উলস্নাহ জানান, গরু-ছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশুতে হাট এরইমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলেও বিক্রেতারা এখনো চড়া দাম হাঁকছেন। ক্রেতারাও এখন বাজার বোঝার চেষ্টা করছেন। তাই বেচাকেনা এখনো জমে ওঠেনি। তবে বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির পর থেকে হাট জমবে বলে মনে করেন তিনি। সবুজবাগের বাসাবো থেকে মেরাদিয়ার হাটে গরু কিনতে আসা এনামুল বলেন, 'হাটে এসেছি তিন ঘণ্টা হয়ে গেল। এখনো কিনতে পারিনি। ব্যাপারীরা আকাশছোঁয়া দাম চাচ্ছে। গত বছর যে গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার তার দাম এক লাখ টাকা হাঁকছে। চড়া দাম হাঁকায় ক্রেতারা গরু কিনছে না।' বৃষ্টি শুরু হলে ব্যাপারীরা পানির দরে গরু বেচে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল অবধি গাবতলী হাটে প্রায় অর্ধশত গরুভর্তি ট্রাক পৌঁছেছে। মূল হাট গরুতে পরিপূর্ণ। হাটের বর্ধিতাংশেও গরু রাখার জায়গা নেই। তাই ব্যাপারীদের অনেকে গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কের দুপাশে গরু বেঁধে রেখেছেন। অথচ এরপরও হাট ইজারাদারের প্রতিনিধিরা আমিনবাজার থেকেও গরুর ট্রাক ধরে এনে হাটে জড়ো করছেন। পাবনার গরুর ব্যাপারী দেলোয়ার জানান, দুই ট্রাক গরু নিয়ে তিনি ঢাকায় এসেছেন। তার ইচ্ছে ছিল আফতাবনগর কিংবা মেরাদিয়ার হাটে তিনি এসব গরু নিয়ে যাবেন। কিন্তু পথে গাবতলী হাটের ইজারাদারের লোকজন তাকে অনেকটা জোর-জবরদস্তি করে এখানে নিয়ে এসেছেন। অথচ তারা হাটের কোথায়ও গরু রাখার জায়গা করে দিতে পারেনি। হতাশ দেলোয়ারের ভাষ্য, মূল হাটেই ক্রেতা কম। হাটের বাইরে গিয়ে কে গরু কিনবে? এমন পরিস্থিতি থাকলে গরু নিয়ে অন্য হাটে চলে যাবেন বলে জানান দেলোয়ার। তিন দিন আগে নবাব, বাদশা ও জমিদার নামধারী তিনটি বিশাল আকৃতির গরুসহ ৫টি বড় গরু নিয়ে উত্তরার আসকোনার শিয়ালডাঙ্গা হাটে এসেছেন পাবনার আবু ইউসুফ। বিশালদেহী আস্ট্রেলিয়ান ক্রস গরুগুলো দীর্ঘদিন নিজে লালন-পালন করেছেন তিনি। তাই এক একটার বাহারি নামও দিয়েছেন। অথচ এখনো পর্যন্ত এসব গরুর দরদামই করেনি কেউ। আক্ষেপের সঙ্গে ইউসুফ বলেন, বিক্রি না হলেও ক্রেতারা অন্তত দরদাম করলেও তার কিছুটা ভালো লাগত। তবে এ নিয়ে হতাশ হলেও কম দামে গরু ছাড়বেন না বলে সাফ জানান তিনি। ইউসুফের দাবি, নবাব, বাদশা ও জমিদারের ওজন গড়ে ২০ থেকে ২৫ মণ হবে। এই তিনটি গরুর দাম চান তিনি ৮ লাখ টাকা করে। তবে এ তিনটি গরু ২২ থেকে সাড়ে ২২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারলেও খুশি তিনি। শিয়ালডাঙ্গা হাটের এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত ঘুরে দেখা গেছে, হাটে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। বিক্রেতারা গরু, ছাগল, ভেড়াসহ অন্যান্য পশুর পরিচর্যা করে সময় পার করছেন। তিন-চার দিন আগে থেকে হাটটি শুরু হলেও বুধবার বিকাল পর্যন্ত মোট ৬টি গরু ও ৩টি ছাগল বিক্রি হয়েছে এ হাটে। অথচ হাটে পশু রাখার সব জায়গা প্রায় পূর্ণ। এ হাটে গরু নিয়ে আসা চুয়াডাঙ্গার হাফিজুল জানান, মাঝেমধ্যে দু-একজন এসে ছবি তুলে নিয়ে গেছে। কেউ দাম পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেনি। তার দুটি গরু প্রায় একই রকম। প্রতিটির ওজন আনুমানিক ৬ মণ। প্রতিটির দাম ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চান তিনি। তবে পরিস্থিতি বুঝে ১ লাখ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হলে তা বিক্রি করে দেবেন। এ হাটের ইজারাদার হীরা আহমেদ রতন বলেন, ঢাকার মানুষ ঈদের এক-দুদিন আগে গরু কিনে। কারণ অধিকাংশ বাসাবাড়িতে বেশিদিন গরু-ছাগল রাখার মতো ব্যবস্থা নেই। শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে ক্রেতাদের চাপ বাড়বে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ জন্য পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অর্থিক নিরাপত্তাসহ সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি এসব স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে বলে দাবি করেন আহমেদ রতন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে