মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
রাসিক নিবার্চন

নেতাদের আস্থার সংকটে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল

রাজশাহী অফিস
  ২৪ জুন ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ জুন ২০১৮, ২৩:৪৬
মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নিবার্চনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে মেয়রপ্রাথীর্ করতে চেয়েছিলেন বিএনপির নেতারা। দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পযার্য় থেকে মিনুকে মেয়র পদে প্রাথীর্ হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাতে সম্মতি দেননি।

সিটি মেয়র ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ওপর আস্থা না থাকায় তাকে বাদ দিয়ে মিনুকে প্রাথীর্ করার চেষ্টা করছিলেন বিএনপির বিভিন্ন পযাের্য়র নেতারা। কিন্তু মিনু শেষ পযর্ন্ত তাতে রাজি না হওয়ায় মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলই আবারও দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে মিনু বলেন, ‘বুলবুল ছোটভাই, সে বতর্মানে মেয়র আছে। পঁাচ বছরের জন্য নিবাির্চত হলেও ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। এ অবস্থায় বুলবুলেরই মনোনয়ন পাওয়া উচিত।’

তবে মিনুর এ মন্তব্যে দ্বিমত রয়েছে নগর বিএনপির অনেক নেতার। তাদের দাবি, ‘মিজানুর রহমান মিনু মনে করছেন রাজশাহীতে এবার খুলনা সিটি নিবার্চনের মতো ফলাফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই তিনি ঝুঁকি নিতে চাননি। সম্প্রতি তার বাসভবনে স্থানীয় কয়েকজন নেতাদের সামনে এ ধরনের মন্তব্যও নাকি করেছেন মিনু।’

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিবার্চনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রাথীর্ এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিপক্ষে শক্ত প্রাথীর্ দেয়ার জন্য বিএনপিতে বেশ আগে থেকেই চেষ্টা চলছিল। এ ক্ষেত্রে বতর্মান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাইও করা হয়। মেয়র বুলবুল তার দেয়া প্রতিশ্রæতি পূরণে কতটা সফল হয়েছেন কতটা ব্যথর্ এসব বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়। সেইসঙ্গে মেয়রের দায়িত্ব পালনের সময় তার ব্যবহারে সাধারণ মানুষ বুলবুলের প্রতি খুশি নাকি নাখোশ এসব বিষয়ও দেখা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় বিভিন্ন পযার্য় থেকে এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে দলের হাই কমান্ড। সেইসঙ্গে বুলবুলই প্রাথীর্ থাকবেন নাকি বিকল্প কোনো প্রাথীের্ক দিলে ভালো ফল আসবে এ নিয়ে দলের বিভিন্ন পযাের্য় আলোচনা হয়েছে। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণের পর দলের হাই কমান্ড বুলবুলের থেকে এই মুহূতের্ মিনুকেই শক্ত প্রাথীর্ হিসেবে মনে করেন।

মিনু দীঘির্দনের মেয়র এবং সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে যে অবস্থান তৈরি করেছেন তাতে তিনিই ভালো ফল করবেন বলে মনে করে দলের হাই কমান্ড। সেইসঙ্গে দলের ভেতরে বতর্মানে যে বিভেদ তা বুলবুলের পক্ষে স্বাভাবিক করা যতটা কঠিন, মিনুর পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হবে। এ ছাড়াও বুলবুল প্রাথীর্ হলে নগর বিএনপির একটি বড় অংশ ভোটের মাঠে নিষ্কৃয় থাকবে। এসব বিবেচনায় বুলবুলের বদলে মিনুকে মেয়র পদে প্রাথীর্ হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপিতে মিনুকে পছন্দ করেন না এমন কয়েকজন নেতাও মত দেন মিনুকে মেয়রপ্রাথীর্ করার পক্ষে। অনেকেই মনে করেছিলেন এই প্রস্তাব পেয়ে মিনু আনন্দিত হবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে সেই প্রস্তাবে অসম্মতি জানান মিজানুর রহমান মিনু। তিনি মেয়রপ্রাথীর্ হতে চান না বরং বুলবুলকেই প্রাথীর্ করার পক্ষে মত দেন। শেষ পযর্ন্ত মিনু দলীয় মনোনয়ন না তুলে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকেই দলীয় মনোনয়ন উত্তোলন করান।

এদিকে গত সোমবার রাতে মিনু, বুলবুল এবং শফিকুল হক মিলন ঢাকায় দলের মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেও মিনুর অবস্থান ছিল বুলবুলের পক্ষে। আর এরই প্রেক্ষিতে আলোচনা শেষে বুলবুলকেই প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নিদের্শ দেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পরদিনই শুধুমাত্র বুলবুলের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন তোলা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং শফিকুল হক মিলন একসঙ্গে ঢাকায় যান বুলবুলের মনোনয়ন-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজ নেয়ার জন্য। ঐদিন রাতে দলের মহাসচিবের কাছে সাক্ষাৎকার দেন বুলবুল।

মিজানুর রহমান মিনু জানান, ‘আমি ১৭ বছর মেয়র থেকেছি। আর এই পদে যেতে চাই না। আমি সংসদ সদস্য হিসেবে নিবার্চন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে সেই ভোট করব। বুলবুল ছোটভাই, সে পঁাচ বছরের জন্য নিবাির্চত হলেও ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়নি। আমার বিশ্বাস সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে বুলবুলের জন্য কাজ করবে এবং আবারও তাকে নিবাির্চত করবে। মিনু দাবি করেন আগামীতে বিজয়ী হয়ে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নগরীর উন্নয়নে আরও ভালোভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে