শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেটের ফাঁদে কাঁচা চামড়া ব্যবসা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
বিক্রির জন্য রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার সড়কে জমিয়ে রাখা চামড়া -যাযাদি

রহস্যজনক কারণে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার অস্বাভাবিক দর পতন ঘটায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কাঁচা চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররাও পড়েছেন মহাবিপাকে। এছাড়া যেসব মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ব্যয় জোগাড়ের অন্যতম উৎস কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকা, ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনকারীরা এবার চোখে রীতিমতো অন্ধকার দেখছেন। কাঁচা চামড়ার অস্বাভাবিক এ দর পতনের জন্য ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো নানা ধরনের বেস্নইম গেমে মাতলেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ তুলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের ভাষ্য, চলমান সংকট সামাল দিতে সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয়ায় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এর নেপথ্যে প্রভাবশালী বিশেষ মহলের সূক্ষ্ণ কারসাজি রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটই সরকারকে নানামুখী চাপে ফেলে এ ধরনের এলোমেলো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করায় কাঁচা চামড়ার বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এমনকি এ শিল্পে বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা। তবে চামড়ার দরপতন নিয়ে গত সোমবার থেকেই বিভিন্ন মহলে বিশেষ সিন্ডিকেটের কথা উচ্চারিত হলেও সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেননি।

যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট হয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হবে। সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কারসাজি হয়ে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে বাজার পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, কাঁচা চামড়া পাচার রোধে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক রাখলেও চলমান পরিস্থিতির দ্রম্নত উত্তোরণ না ঘটলে চোরাকারবারিদের সামাল দেয়া কঠিন হবে। সাধারণ ব্যবসায়ীরাও পাচারকারীদের দলে যোগ দেবে। কাঁচা চামড়ার বাজারের চলমান অস্থিতিশীলতা এ শিল্পের ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে চলমান সংকট সামাল দিতে সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয়ায় সিদ্ধান্ত নিলেও এ নিয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কাঁচা চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী, আড়তদাররা এ বিষয়টিকে স্বাগত জানালেও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা উৎপাদন শিল্প ও প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা এতে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, কাঁচা চামড়া রপ্তানি হলে দেশে এসব শিল্পের কাঁচমালের সহজলভ্যতা কমে যাবে, তাতে হুমকির মুখে পড়বে পুরো শিল্প।

দেশের চামড়াজাত পণ্য উপাদনের সঙ্গে জড়িত শিল্প দেশীয় চামড়ার ওপরই নির্ভরশীল। ফলে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিলে তাদের শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার অ্যান্ড লেদারগুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দিলজাহান ভুইয়া।

তিনি বলেন, 'আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলেছি। দেশের চামড়া দিয়ে আমরা বড়জোর তিন থেকে চার মাস চালাতে পারি। বাকি সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। এর ওপর কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিলে এ খাত ধ্বংস হয়ে যাবে।'

বাংলাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া কখনো রপ্তানি না হলেও এক সময় ওয়েট বস্নু (আংশিক প্রক্রিয়াজাত) চামড়া রপ্তানি হতো। দেশীয় শিল্প সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে নব্বইয়ের দশকে তাও রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দিলে তা চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের ওপর আঘাত হয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন দিলজাহান ভুইয়া।

এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের অর্থ সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমাদের প্রচন্ড আর্থিক সংকট চলছে। ব্যাংক-ঋণও পাচ্ছি না। আমরা যদি সিন্ডিকেটই করব, তাহলে পানির দামের চামড়া কিনবো না কেন? আসলে আমাদের কাছে অর্থ নেই।'

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এর মাধ্যমে এ শিল্পের কতটা লাভ বা ক্ষতি হবে সেটা বিবেচনা করা জরুরি। চামড়ার বাজারে ধস কেন সেটা বিচার না করে হুট করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকরী হবে করা হয় তাহলে ট্যানারিগুলো পর্যাপ্ত চামড়া কোথায় পাবে? এতে এ শিল্পের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে কি না সেটা বিবেচনা করতে হবে।

এদিকে কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, 'সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এতে আমরা লাভবান হব। তবে এই ঘোষণা আগেই আসা উচিত ছিল।'

তার দাবি, বহু বছরের বকেয়া জমতে জমতে ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের পাওনা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। গত তিন বছরে এ নিয়ে দেড় ডজন মামলাও হয়েছে। কিন্তু বকেয়া টাকা আদায় করা যায়নি। তাই তারা বিনিয়োগও করতে পারছে না। এ জন্য এবার চামড়ার দাম কম। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে চামড়ার দাম আরও কমে যাবে।

এখন সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেয়ায় পাইকার ও আড়তদাররা কতটা লাভবান হবেন- সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও টিপু বলেন, আগে চামড়া রাস্তায় পড়ে থাকত, ন্যায্য দামে বিক্রি হতো না। এখন আড়তদাররা ট্যানারির কাছে বিক্রির আশায় বসে না থেকে নিজেরাই সেটা রপ্তানি করবে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের দাবি করেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের কয়েক বছরের বকেয়া বাবদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা পাওনা। ঈদের আগে তারা 'অল্প কিছু' টাকা দিলেও তা দিয়ে খুব বেশি চামড়া কেনা সম্ভব হয়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত আগে জানালে এবং কোরবানির আগে বকেয়া পরিশোধে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিলে এ অবস্থা হতো না।'

আড়তদারদের পাওনা বকেয়া থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, 'আমরা যদি তাদের বকেয়া টাকা না দিয়ে থাকি, তাহলে তারা ব্যবসা করছে কীভাবে।' তিনি দাবি করেন, ২০১৭ সালের আগে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা চামড়া ব্যবসায়ীদের শতভাগ বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছেন। এখন সাভারে স্থানান্তরের ফলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ট্যানারি উৎপাদনে যেতে পারেনি। তাই কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কিছু টাকা বকেয়া হয়েছে। কিন্তু সেজন্য তো চামড়ার দাম কমিয়ে দেয়ার কারণ নেই।

পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'আড়তদাররা সস্তায় কাঁচা চামড়া কেনার জন্য সিন্ডিকেট করে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের ঠকাচ্ছে। তারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে চামড়া কেনে। আমাদের কাছে যখন বিক্রি করে তখন সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করতে চাইবে।' সরকারের সিদ্ধান্ত ট্যানারি শিল্পের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ট্যানারি মালিক সমিতির এই নেতা।

এদিকে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার অ্যান্ড লেদারগুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের শঙ্কার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আভাস দেন।

তিনি বলেন, 'আমরা রপ্তানির ঘোষণা দিয়েছি। দেখি না, যদি দেখি স্থানীয় শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাহলে রপ্তানি স্স্নো করে দেব।'

সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, 'রপ্তানি করতে আমরাও যে খুব উৎসাহী তা নয়। আমাদের লক্ষ্য মানুষ যেন ন্যায্য দাম পায়।' এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'সিন্ডিকেট' করে চামড়ার দাম কমালে কাঁচা চামড়া রপ্তানির বাজার যে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে, সেই হুঁশিয়ারি ব্যবসায়ীদের আগেই দেয়া হয়েছিল। আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছিলাম, মনোপলি যেন না হয়। মনোপলি হলে বাজার উন্মুক্ত করে দিতে হবে। আমরা সেটাই করেছি।'

ঈদের এক দিন পর চামড়া যখন একবার বা দুইবার হাতবদল হয়ে গেছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব কি না- এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি মন্ত্রীর কাছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে রপ্তানি শুরু করার পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, 'একদম স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব না। তবে লবণ দিয়ে চামড়া রেখে দিলে রপ্তানি করা যাবে।'

এদিকে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না পেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচা চামড়া রাস্তা ফেলে দেয়া ও মাটিতে পুঁতে ফেলার বিস্তর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।

আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, বিক্রি করতে না পেরে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লাখখানেক কোরবানির পশুর চামড়া সড়কে ফেলে দিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর আতুরার ডিপো, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট এলাকা থেকে এসব চামড়া সরিয়ে পুঁতে ফেলার কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।

আড়তদাররা বলছেন, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় চট্টগ্রামের বেশির ভাগ আড়তদার এবার চামড়া কিনতে পারেননি। যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া বিক্রি করতে পেরেছেন, তারাও বড় অঙ্কের লোকসান করেছেন বলে দাবি করেছেন।

সিসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উত্তর জোনের মনিটরিং টিমের প্রধান ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের (পশ্চিম ষোলশহর) কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, আড়তদাররা টাকার অভাবে এবার চামড়া কিনতে পারেনি। আতুরার ডিপো, মুরাদপুর রোড ও বহদ্দারহাট মোড়ে হাজার হাজার চামড়া পড়ে আছে। এসব এলাকায় প্রায় ৭০ ট্রাকের মতো চামড়া হতে পারে। সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ পিস চামড়া নষ্ট হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতি এবার সাড়ে পাঁচ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর মধ্যে চার লাখ গরুর, এক লাখ ১২ হাজার ছাগল, ১৫ হাজার মহিষ ও ১৫ হাজার ভেড়ার চামড়া। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমিতির নেতারা বলছেন, তারা লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশের মতো চামড়া সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

তাদের হিসাবে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা প্রায় ১৫ শতাংশ চামড়া বিক্রি হয়নি। আর জেলার দূরবর্তী এলাকায় থাকা প্রায় ২৫ শতাংশ চামড়া এসে পৌঁছাবে আরও কয়েক দিন পর।

এবার চট্টগ্রামে ১০-১৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হতে পারে বলে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের কয়েক বছরের বকেয়া পাওনা প্রায় ৫০ কোটি টাকা। তার মধ্যে ঈদের আগে অল্প কিছু টাকা তারা দিয়েছে। টাকার অভাবে চামড়া কেনা সম্ভব হয়নি।'

'সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত আগে জানালে এবং কোরবানির আগে বকেয়া পরিশোধে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিলে এ অবস্থা হতো না।'

যশোর: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাট জমেনি। পানির দরে বিক্রি হয়েছে পশুর চামড়া। প্রতি পিস গরুর চামড়ায় একশ থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকায় চামড়া কিনে বিপাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে রাজারহাটে সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার বসে। এ হাটে যশোর ছাড়াও খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বড় বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন। এবারের ঈদ হয় সোমবার। ফলে মঙ্গলবার ছিল ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাট। প্রথম হাট যেমন জমজমাট থাকে অন্য বছর, এবারের চিত্র তার পুরোটাই উল্টো। প্রত্যাশার এক-তৃতীয়াংশ চামড়াও ওঠেনি এদিন।

চাটমোহর (পাবনা): পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে এবার মৌসুমে চামড়া ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েছেন। তারা পানির দরে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এতে তাদের হাজার হাজার টাকা পুঁজি হারিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মহাজনরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়েছে।

সীতাকুন্ড: সীতাকুন্ডে পানির দামে চামড়া বিক্রি করেছেন কোরবানিদাতারা। কেউ কেউ অবশ্য কম দামে বিক্রি না করে মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করেছেন। আবার চামড়া কিনে ব্যাপক লোকসানের শিকার হয়েছেন অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী। লোকসানের জন্য তারা সরকারদলীয় সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। স্থানীয়রা জানান, ঈদের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চামড়ার চাহিদা দেখা গেলেও দুপুরের পর পরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সকালের দিকে ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গ্রাম ঘুরে গরুর চামড়া কেনেন গড়ে এক হাজার টাকায়।

নওগাঁ: নওগাঁয় কোরবানির পশুর চামড়া কিনে লোকসানে পড়েছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। বেশি দামে চামড়া কিনে অস্থায়ী চামড়া হাটে বিক্রি করতে গিয়ে তারা সংকটে পড়েছেন। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, চামড়ার হাটে বড় চামড়া ব্যবসায়ীরা না আসায় চামড়ার দাম কমে গেছে। অপরদিকে কোরবানিদাতারা চামড়ার দাম পাননি। অনেকে আবার ছাগলের চামড়া ফড়িয়াদের বিনা মূল্যে দিয়ে দিয়েছেন।

রাজশাহী (তানোর): রাজশাহী অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন মানুষ। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের এবার চামড়া কেনা নিয়ে অনেকটা অনীহা ছিল শুরু থেকেই। ক্রেতাশূন্যতায় অনেক গ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছেন মানুষ। ঈদের দিন পার হয়ে রাত গড়ালেও দেখা মেলেনি একজন ক্রেতারও। পরে বাধ্য হয়ে মানুষ পানির দরে চামড়া তুলে দিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে। এ চিত্র শুধু গ্রামেই নয়, রাজশাহী মহানগরীসহ জেলা শহর এমনকি পুরো উত্তরবঙ্গে।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর): দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় আবারো কোরবানির চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। এতে মাথায় হাত পড়েছে চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। তারা গ্রাম থেকে চামড়া কেনার পর ওই চামড়া আর মহাজনের কাছে বিক্রি করতে পারেননি। এতে করে মোটা অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার গরুর চামড়া ৪০ টাকা বর্গফিট দাম নির্ধারণ করলেও ওই দামে মহাজনেরা চামড়া কিনছেন না।

চাঁদপুর: এক লিটার পানির দামের চেয়েও কমে চাঁদপুরে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। তাও আবার এসব চামড়ার বেশির ভাগ কিনছেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা। এখানে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা খুবই কম। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চাঁদপুর শহরের অনেক বাসাবাড়ির সামনে কোরবানির পশুর চামড়া পড়ে থাকতে দেখা যায়। চাঁদপুর শহরে সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে অনেকের পশু কোরবানির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিক ওই সময় কিছু ভ্রাম্যমাণ মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনতে দেখা গেছে।

বড়াইগ্রাম (নাটোর): নাটোরের বড়াইগ্রামে এবার কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বেহাল দশা দেখা গেছে। স্বল্প দামে কেনার ক্রেতাও পাওয়া যায়নি। অনেকেই বিক্রি করতে না পেরে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62304 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1