শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মৌসুমের রেকর্ড বৃষ্টিতে পানি থইথই খুলনা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
টানা বৃষ্টিতে শনিবার তলিয়ে যায় খুলনা নগরীর বাস্তুহারা সড়ক -যাযাদি

পুরো বর্ষা মৌসুমে খুলনায় খুব একটা ভারী বৃষ্টি হয়নি। বর্ষাকালে রাত-দিন সমানতালে মুষলধারে বৃষ্টি দেখা খুব কম মিলেছে। তবে কাগজে-কলমে শরতের প্রথম রাত থেকে বর্ষার সেই বর্ষণঘাটতি কাটাতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছিল খুলনার প্রকৃতি। পুরো বর্ষাকালের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে খুলনা নগরের অধিকাংশ এলাকা। অল্প সময়ের মধ্যে অতিবর্ষণে খুলনার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

খুলনা আবহাওয়া অফিস বলছে, শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এরপর থেমে থেমে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মৌসুমে খুলনায় এটাই এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের ঘটনা। কাল রোববারও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি।

এদিকে বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সকালের দিকে রাস্তায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা খুবই কম ছিল। কর্মজীবী মানুষ যারা বের হয়েছিলেন, বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা বা ইজিবাইক না পেয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের।

গতকাল সকাল থেকে খুলনার স্থানীয় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়া এবং বৃষ্টিতে ভোগান্তির ছবি পোস্ট করতে থাকেন।

শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের শিববাড়ি

মোড়, শান্তিধাম মোড়, রয়েল মোড়, বাইতিপাড়া, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, পিটিআই মোড়, সাত রাস্তার মোড়, শামসুর রহমান রোড, আহসান আহমেদ রোড, দোলখোলা, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, ময়লাপোতা, বড় বাজার, মির্জাপুর রোড, খানজাহান আলী রোড, বয়রা, মুজগুন্নী, খালিশপুর, দৌলতপুর, নতুনবাজার, পশ্চিম রূপসা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, বাবুখান রোড, লবণচরাবান্দা বাজারসহ প্রায় সব এলাকার রাস্তায় পানি আটকে ছিল। এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। অনেক এলাকার ভবনের নিচতলা পানিতে ডুবে যায়।

দেখা গেছে, খালিশপুর, বৈকালী ও দৌলতপুরের সড়কের পাশের অধিকাংশ দোকান বন্ধ। যারা দোকান খুলেছেন, তারা পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে বা টুলের ওপর বসে কেনাবেচা করছেন।

খুলনার বিভিন্ন সড়কে জাল নিয়ে মাছ ধরতেও দেখা গেছে অনেককে। সড়কে মাছ ধরছিলেন নগরের বাস্তুহারা কলোনির বাসিন্দা রফিক। তিনি জানান, চিংড়ি, তেলাপিয়াসহ বেশ কিছু মাছ পেয়েছেন।

নগরের মুজগুন্নী এলাকার এসএস ওয়ার্ল্ড শিশুপার্কের সামনে প্রায় হাঁটুপানির মধ্যে দাঁড়িয়ে দোকানদারি করছিলেন চা বিক্রেতা বেবি বেগম। তিনি বলেন, 'সকালে দোকান খুলেই দেখি দোকানের মধ্যে প্রায় হাঁটুপানি জমেছে। উপায় না দেখে পানিতে দাঁড়িয়েই কেনাবেচা করছি। বৃষ্টি আর না হলে ওই এলাকার পানি সরতে কমপক্ষে তিন-চার দিন লাগবে।'

দুপুরের দিকে মুজগুন্নী এলাকার বাস্তুহারা কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব ছোট-বড় সড়কই পানিতে তলিয়ে আছে। ঘরের মধ্যে পানি উঠে গেছে। ওই কলোনির বাসিন্দা শেখ দুলাল জানান, একটু বৃষ্টি হলেই কলোনির সব সড়ক তলিয়ে যায়। আর মূল সড়ক ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে সংস্কার না করায় এবং খাল ও নালাগুলো দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি নামতে দেরি হয়। তা ছাড়া খালিশপুরের দিকের চারটি ওয়ার্ডের সব পানি বাস্তুহারা দিয়েই নামে। এ কারণে ওই এলাকায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা থাকে।

দুপুর পর্যন্ত নগরে ছিল কমসংখ্যক ইজিবাইক ও রিকশা। ইজিবাইকচালক আরিফুজ্জামান বলেন, ইজিবাইক নিয়ে একটু বেশি পানির মধ্যে গেলেই মোটরে পানি উঠে নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে বৃষ্টি থামার পর তিনি ইজিবাইক নিয়ে বের হয়েছেন। যেসব এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে, ওই সব এলাকায় তিনি যাচ্ছেন না।

খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, খুলনার মেয়র দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় এক বছর হয়ে গেল। তিনি নির্বাচনী ইশতেহারে জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তারপরও খুলনার মানুষ জলাবদ্ধতা সমস্যায় ভুগছে। এ দায় কে নেবে! খুলনা মহানগরীর নিষ্কাশন সমস্যার বাধা হিসেবে চিহ্নিত ২২ খাল। সেই ২২ খাল পুনরুদ্ধার ও খনন ছাড়া নগরের খুলনার জলাবদ্ধতার নিরসন অসম্ভব।

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির-উল-জব্বার বলেন, নগরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। খালের অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য নেয়া প্রকল্পগুলোয় চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পরামর্শক নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা সমস্যা থেকে নগরের মানুষ মুক্ত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62819 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1