শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে এলে মনে হয় নিজের বাড়িতে এসেছি : শীর্ষেন্দু

নতুনধারা
  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সোমবার রাজধানীর বাংলামোটরে বাতিঘর সাহিত্যকেন্দ্র আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে ভক্তদের অটোগ্রাফ দেন -যাযাদি

যাযাদি রিপোর্ট

দুই বাংলার তুমুল জনপ্রিয় লেখক পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এরই মাঝে এক সাহিত্য অনুষ্ঠানে এদেশ নিয়ে নিজের ভালোবাসা জানাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, 'আমি যখনই বাংলাদেশে আসি, তখনই নিজের বাড়িতে এসেছি বলে মনে হয়।'

সোমবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে বাতিঘর সাহিত্য কেন্দ্র আয়োজিত 'আমার জীবন, আমার রচনা' শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তারা নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন লেখককে।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে লেখক বলেন, 'বহুবার বাংলাদেশে এসেছি, কখনো বাংলাদেশ এলে আরেক দেশে এসেছি বলে মনে হয়নি। সব সময় মনে হয় নিজের দেশেই আছি।'

ময়মনসিংহের আদিনিবাস নিয়ে বলতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বলেন, 'ময়মনসিংহে গিয়েছিলাম, আগের মতো আর নেই। সেখানে আমাদের কাঁচামাটির বাড়ি ছিল। সেইগুলো এখন ইটের বাড়ি হয়ে গেছে। বাড়ির সামনে বড় মাঠ ছিল, সেই মাঠ নেই। জমিদার বাড়ি ছিল, জমিদার বাড়িও ঠিক নেই। একটি স্কুল ছিল সেটি খুঁজে পেয়েছিলাম।'

'ছোটবেলায় আমরা যে ব্রহ্মপুত্রে গোসল করতাম, সাঁতরিয়ে বেড়াতাম সেটি এখন চর হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র এখন একটি অসুস্থ নদ। দূরে আমাদের একটি পাকা বাড়ি ছিল, সেটি এখন হসপিটাল হয়ে গেছে।'

শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শীর্ষেন্দু বলেন, 'আমি ছেলেবেলা থেকেই দুরন্ত ছিলাম। মা আমাকে সামলাতে পারতেন না। সারাদিন খালি ছোটাছুটি করে বেড়াতাম। ছোটবেলায় আমাকে নুনো বলে ডাকত সবাই। আমি অনেক দুষ্ট ছিলাম। অন্য কেউ দুষ্টুমি করলেই বলত, ওই দেখ, ছেলেটা ওর (নুনো) মতো দুষ্টুমি করছে।'

নিজের পাঠাভ্যাস গড়ে ওঠা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'ছেলেবেলায় আমার দুটি নেশা ছিল। একটি খেলা, আরেকটি পড়ার নেশা। ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িতে কোনো ভেরিফিকেশন ছিল না। যা ইচ্ছে করত, তাই করতাম। সেই সময় এলাকায় বইয়ের তেমন দোকান ছিল না। দূর থেকে বই এনে পড়তে হতো। পড়ার নেশাটা আমার ছোটবেলা থেকেই ছিল।'

আলোচনার এক পর্যায়ে বাংলাদেশে সাহিত্যের পাঠক নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বাংলাদেশে পাঠকের সংখ্যা প্রায় ৫-৭ গুণ বেশি। অনেকদিন আগে আমি বাংলাদেশে এসে লঞ্চে করে যাচ্ছিলাম। লঞ্চে একটি বাচ্চা দৌড়ে এসে আমার সামনে বই নিয়ে বলল, সই করে দেন। আমি বললাম, এই লঞ্চে তুমি বই কোথায় পেলে? সে আমাকে বলল, কেন, লঞ্চের ভেতর বইয়ের দোকান আছে। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম।'

'একটি বাড়িতে বেড়াতে গেলাম, সেখানে এক কাজের ছেলে একটি বই নিয়ে এসেছে আমার অটোগ্রাফ নিতে। সেও বই পড়ে বলে জানতে পারলাম। আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশে বইয়ের পাঠক সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের

তুলনায় অনেক বেশি।'

তবে একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশে বইয়ের কালোবাজারি প্রসঙ্গে নিজের অসন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, 'বাংলাদেশে বইয়ের পাইরেসি হচ্ছে। বই বিক্রি হচ্ছে ঠিকই, অথচ আমরা আগের তুলনায় টাকাটা কম পাচ্ছি।'

এরপরে লেখক হয়ে ওঠার পেছনের গল্প জানতে চাইলে এ ঔপন্যাসিক বলেন, 'ছেলেবেলা থেকেই বঙ্কিমের (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) বইটা বেশি পড়তাম। সেখান থেকেই আমার ভাষার দখল আসতে শুরু করল। এরপর থেকে লেখালেখিও শুরু করলাম। তবে পরিবার থেকে ১৬-১৭ বছর বয়সে কুচবিহারের বোর্ডিংয়ে আমাকে পাঠানো হলো। তখন থেকেই ভালোভাবে লেখালেখি শুরু করি। ১৭ থেকে ১৮ বছর আমার বোর্ডিংয়ে কেটেছে, সেই সময় আমার মাথায় লেখার বাই চাপল। চেষ্টা করতে করতে একটি গল্প ছাপা হলো। এরপর থেকে নিয়মিত হয়ে গেলাম। এটা আমার কল্পনারও অতীত ছিল।'

'তবে আমার লেখার পাঠক ছিল না শুরুতে। তারা আমার লেখা রিফিউজ করেছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না, পাঠকের সঙ্গে কোথায় আমার সুর মিলছে না। পাঠকের সঙ্গে আমার একটা দূরত্ব ছিল। আমার উদ্দেশ্য ছিল একটাই, পাঠক চাই। মানুষের কাছ থেকে রেসপন্স পাওয়ার জন্যই আমি লিখতাম। আমি বুঝতে পারতাম, তারা আমাকে বুঝতে পারছে না। তবে আমার কপাল ভালো, আমার লেখালেখি শুরু ৭ বছর পর, যারা আগে আমার লেখা গ্রহণ করেনি, তারাই সেগুলো আবার পড়তে শুরু করল এবং একটি একটি করে আমার বইয়ের এডিশন বের হলো। কপাল ভালো যে, আমি কবরস্থান থেকে উঠে আসতে পেরেছি।'

বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গে লেখাকে পেশা হিসেবে নেয়ার মতো বাস্তবতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে লেখাকে পেশা হিসেবে নিলে চলবে না। বিদেশে লেখককে চাকরি করতে হয় না। তাদের বইয়ের বিরাট বাজার রয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে লেখাটাকে পেশা হিসেবে নেয়া বিপজ্জনক। তবে সমরেশ বাবু (সমরেশ মজুমদার) এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। আমি নেইনি। অর্থ উপার্জন করার জন্য আমি কখনো লিখব, এটা চিন্তাই করিনি। এক্ষেত্রে সুনীল (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) অনেক রয়্যালটি পেয়েছে। ও অনেক বেশি লিখত। সুনীল রাতে লিখত না, শুধু সকালে লিখত। এতেই ওর এত লেখা।'

'ছোটবেলা থেকেই আমি বুঝতাম আমার দ্বারা কিছুই হবে না। আর আমার দ্বারা যদি কিছু না-ই হয়, অন্তত লেখালেখিটা করি। তবে এটাও চিন্তা করেছিলাম, লেখাকে ক্যারিয়ার করা যায় না। এটাকে পেশা হিসেবে নিলে মুশকিল। কেউ পেশা হিসেবে নিলেও আপস করা যাবে না। পাঠক সেটা কীভাবে নেবে, এটা তাদের ব্যাপার।'

অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন লেখকের কাছে লেখার পস্নট নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি অবৈতনিকভাবে লিখি। কোনো কিছু ভেবে লিখতে পারি না। এক লাইন দিয়েই শুরু করি। পরে লেখা হয়ে যায়। আমি সবসময় রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করি। আমার বন্ধু চাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, মাছবিক্রেতা, এদের সঙ্গেই আমি বেশি বেশি মিশি, কথা বলি। কোথাও মারামারি হচ্ছে দেখলে আমি দাঁড়িয়ে পড়ি এবং হাঁ করে মানুষের কথাগুলো শুনে আমার ভালো লাগে। তাদের কথাগুলো দিয়েই এক লাইন পাওয়া গেলে লেখা হয়ে যায়।'

'একটা লাইন যদি মাথায় আসে, তবেই সেটা হয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে আমার ধ্রম্নব পদ। তুলো টান দিতে থাকলে যেমন সুতোর মতো বেরিয়ে আসতে থাকে, একটি লাইন থেকেও ঠিক সেভাবেই লেখা শুরু হয়। সেই লাইনটি হচ্ছে বিচ। এরপর ওই লাইনই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে।'

অনেকে সমাজ বাস্তবতা, রাজনীতি নিয়ে লিখতে বলেন। সে প্রসঙ্গে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, 'আমি একটি বিষয় নিয়েই লিখি, বাস্তবতা। আর তা থেকেই শূন্যমার্গে উঠে যাই। সেটা আমার স্বভাব। তবে এত যে লিখতে পারব, কখনো এটা ভাবিনি।'

একের পর এক বহুল আলোচিত উপন্যাসের জনক নিজের বিভিন্ন শিল্পকর্ম নিয়ে বলতে গিয়ে জানান, 'পার্থিব' উপন্যাসের পেছনের গল্পটা আমি কী লিখব বুঝতে পারছিলাম না। মাথা খুঁড়ে মরছিলাম, কী লিখব। একটি লাইন ঠিক করে, পরে পাঁচটি অধ্যায় লিখলাম। একটির সঙ্গে আরেকটির মিল নেই। গল্প শুরু ৬ নম্বর থেকে। এটি এক নম্বরের রেফারেন্স। অনেকেই আমার ৫ খন্ড পড়লে মনে করবে, এটি পাগলামি। তবে এ উপন্যাসের 'ধ্রম্নব' চরিত্রটাকে আমার মনে হয়েছিল ভিলেন। সেই চরিত্রটা কীভাবে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল, সেটা বুঝলাম না। এই চরিত্রটা ছক্কা মেরে দিয়েছে। আমি অনেক চরিত্র নিয়ে উপন্যাস লিখতে ভালোবাসি। যেমন, মানবজমিনের সজলের মধ্যে খানিকটা আমি আছি।'

সাহিত্য থেকে সিনেমা বানানো বিষয়ে লেখকের মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'অনেক সাহিত্য নিয়ে সিনেমা হয়েছে, তবে সাহিত্যকে সিনেমায় আনা কঠিন। এটি সিনেমায় আনা সম্ভব নয়। পথের পাঁচালীতে যা আছে, এর চিত্রায়ণ সম্ভব নয়। আমার উপন্যাস থেকেও ৩০-৩৫টি সিনেমা হয়েছে। আমার 'পাতাল বউ' থেকে সিনেমা হয়েছে। অনেক কিছুই বাদ দিয়েছে।'

ছোটদের জন্যও বেশ অনেক রচনা লিখেছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সেগুলোতে বিভিন্ন রকম মজার চরিত্র নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এরকমই তার বিখ্যাত কিছু কাজ আছে চোর, ভূত এসব নিয়ে। এ ধরনের চরিত্রের ব্যাপারে আগ্রহের কথা জানতে চাইলে মজা করে তিনি বলেন, 'চোর নিয়ে আমার আকর্ষণ অনেকদিনের, তবে আমি চোর নই। চোরদের প্রতি দুর্বলতা আছে তা-ও নয়। আমার ঘরেও চুরি হয়েছে। চোর আমার মেয়ের ঘরে ঢুকে মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করে নিয়ে গেছে। এই চোরকে আমরা ধরতে পারিনি, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ধরার চেষ্টা করেও কিছু পাইনি। তবে আমার বাসায় চোর ঢুকলে ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো রিঅ্যাক্ট করব না, নির্মমও হতে পারব না। তার মানে- আমি চোরকে সমর্থন করছি তা নয়।'

'ভূত নিয়ে আমি লিখেছি। আমার লেখা পড়ে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আমাকে ফোন করে বলে, আমাদের অনেক ভূতের ভয় ছিল। আপনার ভূতের ওপর লেখা বই পড়ে, আমাদের ভয় কেটে গেছে।'

ছোট গল্প লেখার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে জনপ্রিয় এ লেখক বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই আমি অনেক জায়গায় ঘুরেছি। মাইলের পর মাইল হেঁটে গ্রামের জীবনটাকে কাছ থেকে দেখেছি। এসব নিয়েই আমি ছোট গল্প লিখেছি। গাঁয়ের মানুষরা আমাকে লেখক হিসেবে চেনে না, দাদা হিসেবে চেনে। গ্রামে ঘুরে ঘুরে আমার বিশাল জনগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, আমি সেসব মানুষকে নিয়েই লিখেছি। আমি পলিস্ন নিয়ে অনেক লেখালেখি করি, কারণ এটা আমার চেনা। তবে আমি উপন্যাসগুলোতে কঠোর বাস্তবতার ভেতর দিয়ে গেলেও কাউকে মেরে ফেলি না। প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। চট করে আমি কাউকে মেরে ফেলি না। অনেক পথ চলার পর একজন নায়িকার নতুন একজন প্রেমিকের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করি। ট্র্যাজেডির রাজা শরৎচন্দ্র। আমি ওই পথে হাঁটার চেষ্টাও করি না।'

এরপর বাংলাদেশে কাদের লেখা ভালো লাগে অনুষ্ঠান থেকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপন করা হলে গুণী এ লেখক বলেন, 'বাংলাদেশে অনেকের লেখাই আমার ভালো লাগে। এর মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ আছেন, মিলন (ইমদাদুল হক মিলন) আছেন। বাংলাদেশে যে মানুষটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছেন, তিনি হলেন- আল মাহমুদ। এত শক্তিমান কবি পশ্চিমবঙ্গেও কম আছেন।'

শেষের দিকে অনুষ্ঠান বিভিন্ন প্রশ্নের দিকে মোড় নেয়। এরই এক পর্যায়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের প্রেম প্রসঙ্গে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি বলেন, 'আমি কখনো প্রেম করতে পারিনি। অনেককে ভালোবেসেছি, কিন্তু তারা কেউ আমাকে ভালবাসেনি। একটি চিঠিও পাইনি। দয়া করে একজন মহিলা এলেন, আমাকে বিয়ে করলেন। তবে অনেক পরে একজন এসেছিল আমাকে ভালবাসতে, কিন্তু সেটি আর হয়নি।'

অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ পর্যায়ে জীবন নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে কি না জানতে চাইলে জনপ্রিয় এ লেখক বলেন, 'আমার জীবনে কোনো আক্ষেপ নেই। এর চেয়ে বেশি আমার হওয়ার কথা ছিল না। আমি সাধারণ মানুষ। এভাবেই থাকতে চাই। টাকাপয়সার জন্য আমি কখনো লেখালেখি করিনি। আমার লেখা মানুষের তরঙ্গ পাচ্ছে কি না, সেটাই আমার কাছে মূল বিষয় ছিল।' বাংলানিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67157 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1