বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুদুকে চুয়াডাঙ্গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা, বাড়িতে হামলা

ঢাকায় মামলা, ঢাবিতে ছাত্রলীগের হুশিয়ারি
যাযাদি ডেস্ক
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:১৬
চুয়াডাঙ্গায় শামসুজ্জামান দুদুর বাড়িতে ভাঙচুরকৃত আসবাবপত্র -যাযাদি

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর চুয়াডাঙ্গার পৈতৃক বাড়িতে দুই দফা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে জেলা ছাত্রলীগ। তাকে জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। গত বুধবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি শামসুজ্জামান একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে 'উসকানিমূলক মন্তব্য' করার প্রতিবাদে জেলা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ বুধবার রাতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পরে শামসুজ্জামানের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা হয়। শামসুজ্জামানের ভাই ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্‌বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের দুটি অংশ বুধবার রাতে দুই দফা হামলা চালিয়ে বাড়ির আসবাব ভাঙচুর করেছে। হামলার সময় পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে রাত সাড়ে আটটার দিকে শহরের কবরী রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে রূপ নেয়। ছাত্রলীগের সভাপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শাহাবুল হোসেনসহ বিভিন্ন নেতা বক্তব্য দেন। তারা শামসুজ্জামানকে চুয়াডাঙ্গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এ সময় শামসুজ্জামানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি শহীদ হাসান চত্বর থেকে দলীয় কার্যালয়ে ফেরার পথে শামসুজ্জামানের বাড়িতে হামলা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। অন্যদিকে, একই রাতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিফ হোসেনের নেতৃত্বে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আসাদুল হক বিশ্বাসের বাড়ির সামনে থেকে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শামসুজ্জামানের বাড়ির সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ইমরান আহমেদ, পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলমসহ দলীয় নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তারা শামসুজ্জামানকে চুয়াডাঙ্গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান। সমাবেশ শেষে শামসুজ্জামানের বাড়িতে ফের হামলার ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। শামসুজ্জামানের বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাই লাল সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুলস্নাহ ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুলস্নাহ বলেন, বিএনপি নেতা শামসুজ্জামানের বাড়িতে কয়েকটা চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দ্রম্নত পুলিশ সেখানে পৌঁছানোয় বড় ধরনের কিছু হয়নি। শামসুজ্জামানের বাড়িতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিফ হোসেন বলেন, শামসুজ্জামান সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। শুধু চুয়াডাঙ্গা কেন, বাংলাদেশের কোথাও তার থাকার অধিকার নেই। মিছিলে হাজার হাজার মানুষ ছিল। সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে কেউ ভাঙচুর করলে করতেও পারেন। শামসুজ্জামানের 'উসকানিমূলক' বক্তব্যের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার আবার চুয়াডাঙ্গা শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দুদুর বিরুদ্ধে মামলা এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন যুবলীগের এক নেতা। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি করেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ। আদালতের পেশকার জনি খন্দকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আদালত সূত্র বলছে, আদালত মহিউদ্দিন আহমেদের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। তিনি আদালতকে বলেছেন, বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শামসুজ্জামান দুদু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেন। বিএনপি নেতার ওই বক্তব্য ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, শামসুজ্জামান দুদুর এই বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেন মামলার বাদী যুবলীগের নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ। বাদীপক্ষের আইনজীবী ফিরোজুর রহমান বলেন, বাদী মহিউদ্দিন আহমেদ যে মামলা করেছেন সেই মামলায় আজই আদালত আদেশ দেবেন। ছাত্রলীগের হুশিয়ারি অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেতা শেখ হাসিনাকে নিয়ে কেউ ধৃষ্টতা দেখালে 'তার পিঠের চামড়া থাকবে না' বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান। বিএনপিকে একটি 'ষড়যন্ত্রকারী দল' হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন তিনি। ১৫ আগস্ট নিয়ে কটূক্তি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে গ্রেপ্তার ও বিএনপির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক ছাত্র সমাবেশে আল নাহিয়ান খান এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এই কর্মসূচির আয়োজন করে। ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, 'শামসুজ্জামান টক শোতে বড় বড় কথা বলেন। তাকে বলব, টক শোতে বড় কথা না বলে পারলে রাজপথে এসে মোকাবিলা করুন। তার বিরুদ্ধে জেলায় জেলায় মামলা শুরু হয়ে গেছে। শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে ছাত্রলীগ মাঠে থাকবে।' ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিট থেকে শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এই সমাবেশ থেকে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। বুধবার রাতে কাউন্সিলের মাধ্যমে হওয়া ছাত্রদলের কমিটিকে 'নিশি কমিটি' হিসেবে আখ্যা দেন সমাবেশের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ 'দাঁতভাঙা জবাব' দেবে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে