'বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রাখাইনের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো উপায়ে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।'
শনিবার (১৯ অক্টোবর) ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী-বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার, সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে এই বৈঠক। বৈঠকে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে কিভাবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়, সে বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলার জন্য বিশ্বব্যাংককে জোরালো ভূমিকা রাখতে বলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভব প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ জন্য বিশ্বব্যাংককে বলেছি, তাদের (রোহিঙ্গা) নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে বলেছি।
'কোনো অল্টারনেটিভ অ্যাকশন নেই, শুধু তাদের ফিরিয়ে নেন। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বব্যাংক বিশ্ববাসীর সঙ্গে আলাপ করে একটা পজেটিভ সিদ্ধান্ত নেবে। মিয়ানমার তাদের নিয়ে যাবে, কিন্তু কবে নিয়ে যাবে; সেই টাইমলাইন চাই আমরা। আশা করি, দ্রম্নত এই টাইমলাইন আসবে।'
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পাঠাতে হলে সবার সাপোর্ট নিতে হবে। তবে এখনো কেউ আপত্তি করেনি যে, তারা (রোহিঙ্গা) যাবে না। যারা মেটার করে তারা বড় ফ্যাক্টর। তাদের সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানোর বিষয়ে সবাই একমত।
মুস্তফা কামাল বলেন, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হলে এখন তার উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে। কক্সবাজারসহ ওই এলাকার পুরো পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এতে আমাদের সামাজিকভাবে ও জলবায়ুগত চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।
'আমাদের সামাজিক বন্ধনসহ যেসব ক্ষতি হচ্ছে, তা ডলার বা টাকার অংকে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তাই রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাবে- এটাই আমাদের প্রধান চাওয়া।'
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো উন্নয়ন সহযোগীর এ খাতে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি আমরা ভাবছি না। আমরা ভাবছি, তাদের প্রত্যাবাসনের কথা, কারণ, প্রত্যাবাসন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আশা করি, বিশ্বব্যাংক সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের একটা সুন্দর সমাধানের পথ দেখাবে। এ বিষয়ে বিশ্বসম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। এতে চীন, ভারত ও জাপান প্রত্যেকে একেকটি বড় ফ্যাক্টর। ফলে তাদের বাদ দিয়ে কিছু করা যাবে না। তারা সব কিছু আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন বা অনুদান নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমরা কোনো কথা আগে বলিনি, এবারও বলা হয়নি। এটা বিশ্বব্যাংক নিজেরাই করে থাকে, আমাদের চাওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গাদের ফেরাতে কাজ করবে।