বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর নীরব প্রতিবাদ

সাদা খাতা জমা দিলেন সুদীপ দাস

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
সুদীপ দাস

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (বিজেএস) পরীক্ষায় অংশ নিলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুদীপ দাস। তবে কোনো প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারেননি তিনি। শুধু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর আর পরীক্ষার ওএমআর সিটে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে পুরো এক ঘণ্টা সময় হলেই বসেছিলেন সুদীপ।

শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটায় শুরু হয় জুডিশিয়াল পরীক্ষা। আধা ঘণ্টা আগেই রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্র সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে হাজির হন সুদীপ। গেটের কাছে আসতেই তাকে ঘিরে ধরেন কৌতূহলী অনেক পরীক্ষার্থী। এ সময় অনেকেই তার সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত। এরপর গেট থেকে এক পরীক্ষার্থীর সহায়তায় তিনি পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন।

হার না মানা সুদীপ দাস বলেন, পরীক্ষা হলে শিক্ষক ও এক পরীক্ষার্থীর সহায়তায় পরীক্ষার ওএমআর সিট ও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। হল শিক্ষক খুবই আন্তরিক ও অমায়িক ছিলেন। তিনি বলেন, পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরে আনন্দিত হলেও হলের ভিতর পুরো এক ঘণ্টা মনোকষ্টে কাটিয়েছেন। প্রশ্নের উত্তর জানা সত্ত্বেও শুধু দৃষ্টিহীনতার কারণে লিখতে পারেননি। তবে কিছু সময় নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়েছে। পরক্ষণেই আবার মনে হয়েছে, তার এ লড়াইতো শুধু তার জন্য নয়। তার এ লড়াই তার অনুজদের জন্য। তিনি আরও বলেন, 'আমি হয়তোবা কখনো বিচারক হতে পারব না। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমার অনুজরা একদিন শ্রম্নতিলেখকের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নিতে অনুমতি পাবেন এবং তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিচারক হবেন।'

এর আগে, সুদীপ দাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শ্রম্নতিলেখকদের সহায়তায় আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এরপর ২০১৭ সালে ১১তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করেন। পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য প্রবেশপত্রও পান। কিন্তু শুধু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে পরীক্ষা দিতে পারেনি সুদীপ। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। ফের ২০১৮ সালে ১২তম সহকারী জজ নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করেন। যথাসময়ে প্রবেশপত্র পান। সেবার তিনি একজন শ্রুতিলেখকের জন্য আবেদন করেন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে (বিজেএস)। কিন্তু মৌখিকভাবে তার সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। তবে শ্রুতি লেখক না পাওয়ায় আবেদন বাতিল হলেও নীরব প্রতিবাদস্বরূপ ১২তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন সুদীপ দাস। শুক্রবার ১৩তম বিজেএস পরীক্ষা। এই পরীক্ষাতেও তিনি অংশ নেন। শ্রুতিলেখকের জন্য আবেদন করেছিলেন বিজেএসে। কিন্তু বিজেএস শ্রুতিলেখকের অনুমতি দেননি। হাইকোর্টেও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজিএস) ১৩তম পরীক্ষাসহ (নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত) সব ধরনের পরীক্ষায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য শ্রুতিলেখক চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট ওই রিট আবেদন কার্যতালিকা (কজলস্ট) থেকে বাদ (আউট অব লিস্ট) করে আদেশ দেন।

কথা হয় সুদীপ দাশের সঙ্গে। তিনি জানান, জন্ম থেকেই তিনি এক চোখে দেখতে পান না। ১০০ ওয়াটের টেবিল ল্যাম্প চোখের সামনে নিয়ে লেখাপড়া করতেন তিনি। বাল্বের প্রচন্ড তাপে মাথা গরম হয়ে যেত। মাথায় খুব যন্ত্রণা করত। কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায় তার দ্বিতীয় চোখটিও। তবুও তিনি লেখাপড়া থামাননি। তার পিতা রেলওয়ে কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র দাশ। স্কুলশিক্ষিকা মা মিরা দাশের দ্বিতীয় সন্তান সুদীপ। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা গ্রামে। তার পিতা প্রদীপ চন্দ্র দাস রেলওয়ের নিরীক্ষক ছিলেন। পিতার কর্মস্থল চট্টগ্রাম হওয়ায় সেখানেই সুদীপ দাসের লেখাপড়া। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের লতিফপুর আলহাজ আব্দুল জলিল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে উত্তর কাকতলী আলহাজ মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ২০১৪ সালে অনার্স ও ২০১৬ সালে মাস্টার্স শেষ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<74839 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1