শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গারা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি: প্রধানমন্ত্রী

যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সোমবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা গেস্নাবাল ডায়ালগ-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মারক তুলে দেয়া হয় -ফোকাস বাংলা

জোরপূর্বক বাস্তুচু্যত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রম্নত এ সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়কে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সোমবার ঢাকা গেস্নাবাল ডায়লগ-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, 'আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এ অঞ্চলের জন্যও নিরাপত্তার হুমকি।'

বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে সাত লাখই এসেছে ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন শুরু হওয়ার পর।

মিয়ানমার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই দফা চেষ্টা করেও রোহিঙ্গাদের কাউকে রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি।

রোহিঙ্গা সংকট ব্যাপকতার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরেছেন।

রোহিঙ্গাদের অনিশ্চয়তা যে আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিতে যাচ্ছে সেটি গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও তুলে ধরেছিলেন তিনি।

ঢাকা গেস্নাবাল ডায়ালগে শেখ হাসিনা বলেন, 'এ অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষা করতে গেলে আমি মনে করি এ সমস্যার (রোহিঙ্গা) আশু সমাধান হওয়া প্রয়োজন। বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিষয়টি অনুধাবন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।'

আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।

'আমি মনে করি, আমাদের এ অঞ্চলের প্রধান শত্রম্ন দারিদ্র্য। আমরা যদি সবাই একযোগে কাজ করি তাহলে অবশ্যই দারিদ্র্যকে জয় করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি। সে কারণেই আমাদের এক হয়ে কাজ করা দরকার, যেন আমাদের এ অঞ্চলের মানুষগুলোর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি, অগ্রগতি আমরা নিশ্চিত করতে পারি।'

সমুদ্র তীরবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমুদ্রের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, 'ভারত মহাসাগর দিয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ অতিক্রম করেছে, যা এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতিসমূহের জ্বালানি ও রসদের জোগান দেয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত মহাসাগরকে ঘিরে মোট ৪০টি উন্নয়নশীল দেশের অবস্থান। সেখানে বাস করে বিশ্বের জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ। বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে আছে ছয়টি দেশ। আরও কয়েকটি দেশ যেমন- নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর যদিও বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত নয়, তবুও তাদের অর্থনীতিতে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।'

সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও এর মাধ্যমে 'সুনীল অর্থনীতির' টেকসই উন্নয়নের জন্য সমুদ্র তীরবর্তী দেশগুলোর মধ্যে সহায়তাপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ ও সমতাপূর্ণ সম্পর্ক অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর এলাকার নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরসনে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এসব এলাকায় জলদসু্যতা, সশস্ত্র ডাকাতি, উপকূলবর্তী ও সামুদ্রিক এলাকায় সন্ত্রাসী আক্রমণ, মানবপাচার, অস্ত্র ও মাদক পাচারের মত অপ্রথাগত নিরাপত্তা ঝুঁকি বিদ্যমান। এসব অপ্রথাগত নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরসনে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

সামুদ্রিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত আহরণ ও নানা দূষণ এ এলাকার সামুদ্রিক পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, শুধু বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর নয়, বিশ্বের সকল সাগর-মহাসাগরই আজ এই দ্বিবিধ সমস্যায় আক্রান্ত। প্রতি বছর বিশ্বের সাগর-মহাসাগরগুলোতে যোগ হচ্ছে আট মিলিয়ন টন পস্নাস্টিক বর্জ্য। দূষণ ও সামুদ্রিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত আহরণ সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানকে বিনষ্ট করছে। পৃথিবীর সামগ্রিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে মানুষের জীবন-জীবিকা।

আমি বিশ্বাস করি কোনো একক দেশের পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এখানে সকলে মিলে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।

এসব সমস্যা সমাধানে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব জোরদার করতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, 'উন্নয়ন কৌশল হিসেবে আমরা দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সুরক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো বিষয়সমূহকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি।

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ 'উন্নয়নের বিস্ময়' হিসেবে অভিহিত হচ্ছে মন্তব্য করার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রম্নত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর অন্যতমও বলেন তিনি।

বাংলাদেশের প্রায় ৯৪ ভাগ মানুষ এখন বিদু্যৎ পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠিত করেছি। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা নয় কোটিতে উন্নীত হয়েছে। সারাদেশে পাঁচ হাজার ৮০০টি ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পর আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ এমডিজি অর্জনের পর আমরা এসডিজি বাস্তবায়নে বিশেষ তৎপর।

তিনি বলেন, 'দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালে ৪১.৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৮ সালে হয়েছে ২১ শতাংশ। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে নিয়ে আসব। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।'

বাংলাদেশের প্রতিটি প্রকল্প গ্রহণের সময় পরিবেশ রক্ষার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে 'বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস (বিস) এবং ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) যৌথভাবে তিনদিনব্যাপী এ সংলাপের আয়োজন করেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সামির স্মরন এবং বিসর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আবদুর রহমান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75165 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1