মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে অনুপ্রবেশ বেড়েছে কঠোর নজরদারিতে বিজিবি

প্রায় প্রতিদিনই ভারত থেকে অবৈধ পথে প্রবেশ করছে নারী-পুরুষ ও শিশু। চলতি মাসে দুই শতাধিক অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে বিজিবি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
  ২২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ঝিনাইদহের সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা। প্রায় প্রতিদিনই ভারত থেকে অবৈধ পথে প্রবেশ করছে নারী-পুরুষ ও শিশু। চলতি মাসে দুই শতাধিক অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড (৫৮ বিজিবি)। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। যাদের কাছে কোনো দেশেরই বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা নেই। তাদের কেউ দুই বছর, কেউ পাঁচ থেকে দশ বছর পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে বসবাস করছিলেন। অনেকে এর থেকে বেশি সময় ধরে সেদেশে বসবাস করছেন বলে আটককৃতরা জানিয়েছে।

সম্প্রতি ভারত সরকার সেদেশের আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশ করে। সেখানে নাম না থাকায় নির্যাতনের ভয়ে তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছেন বলে জানিয়েছে বিজিবি ও জেলা প্রশাসন। তবে এ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি করছে বিজিবি।

আটককৃতদের ভাষ্য, তাদের নির্যাতন করে, মালিকরা টাকা দেয় না ঠিকমতো। কিছু বললেই মালিক-মহাজনরা বলেন তোমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছ, তোমাদের টাকা কীসের। তোমরা চলে যাও, তোমরা মুসলমান, হিন্দুস্থানে থাকতে পারবা না। গেল এক মাসের বেশি সময় ধরে এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রায়ই ওই দেশের পুলিশ মারধর করে।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী জলুলী, পলিয়ানপুর ও খোসালপুর সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। চলতি নভেম্বর মাসে ৭৫ নারী, ৬৪ পুরুষ ও ৬৪ জন শিশুকে আটক করেছে বিজিবি। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আটক করেছে চারজনকে।

এরমধ্যে শুধু মহেশপুর থানার মাধ্যমে ১৫৭ অনুপ্রবেশকারীকে আদালতে পাঠিয়েছে। সব থেকে বেশি অনুপ্রবেশকারীকে আটক করে চলতি মাসের ১৩ নভেম্বর ৩৩ জন এবং ১৪ নভেম্বর ৪৯ জনসহ মোট ৮২ জনকে।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ ৫৮-বিজিবি অতিরিক্ত পরিচালক লে. কর্নেল কামরুল হাসান জানান, দিনে ও রাতে বিভিন্ন সময় তারা অনুপ্রবেশকারীদের আটক করছেন। এখন পর্যন্ত যারা এদেশে এসেছে তাদের বেশির ভাগই মুসলমান। তারা জানিয়েছে মূলত এনআরসি বা ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আতঙ্কে ভারত ও বাংলাদেশি দালালদের মাধ্যমে সীমান্ত ক্রস করছেন। বিষয়টি হেডকোয়াটারকে জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, অনেকেই আছেন যারা অনেক বছর আগে এদেশে সহায়সম্বল বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন, অনেকেরই পারিবারিক আত্মীয়স্বজন কিংবা কিছু সম্পদ এদেশে আছে। তো যাদের কিছু নেই তারা কোথায় থাকবেন, কি খাবেন, কি করবেন- এটা তো ভাবার বিষয়ই। তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর সতর্ক অবস্থানে আছেন।

মহেশপুর সীমান্তের মাটিলা মসজিদের ইমাম নুরুন নবী জানান, সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লোক আসে ভারত থেকে। অনেক সময় তারা সীমানা ক্রস করে বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কেউ ধরা পড়ে কেউ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এরা মূলত এক শ্রেণির দালালদের মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে।

অবশ্য স্থানীয়রা বলছেন, বিজিবি যে কজনকে আটক করেছে অনুপ্রবেশকারী তার কয়েকগুণ বেশি। যারা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে এদেশে প্রবেশ করেছেন। তবে, খালিশপুর ৫৮ বিজিবির উপ-অধিনায়ক কামরুল হাসানের দাবি, তারা কঠোর নজরদারি করছেন। সেক্ষেত্রে চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রবেশের সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুল আলম বলেন, যারা আটক হচ্ছে তাদের পরিচয় নিয়ে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ বাগেরহাট ও খুলনা এলাকার। তারা দুই দশক হলো ভারতে গিয়ে কাজ করছিলেন। সেখানে এনআরসি ঝামেলায় চলে আসছেন। তাদের বাংলাদেশে আত্মীয়স্বজন রয়েছেন।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের মানবাধিকারকর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, সম্প্রতি ভারত সরকার সেদেশের প্রকৃত নাগরিকদের তথ্য বের করতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করে। সেখানে নাম না থাকায় নির্যাতনের ভয়ে এসব অনুপ্রবেশকারী বর্ডার পার হয়ে বাংলাদেশে চলে আসছেন। তারা যদি এ দেশ থেকে চলেই যায় তাহলে এখন আবার অবৈধভাবে ফিরে আসছেন কেন?

তিনি বলেন, 'আমাদের একটা ঘনবসতি দেশ। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এভাবে যদি আবার ভারত থেকে মানুষ চলে আসে তাহলে আমাদের আরও একটা সমস্যা সৃষ্টি হবে। তারা অনেকেই সম্পত্তি বিক্রি করে চলে গিয়েছিল। এখন ফিরে এসে তারা কর্মসংস্থান না পেয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া যারা ভারত থেকে আসছে তারা কোনো মারাত্মক রোগের জীবাণু বহন করছে কিনা এটাও দেখার বিষয়।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নারী-পুরুষ ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত অঞ্চলে আটক হচ্ছেন। আটককৃতরা দাবি করছেন তারা বাংলাদেশের নাগরিক। কারাগারে পাঠানোর পর তাদের সাথে তিনি কথা বলেছেন। তাদের ভাষ্য, তারা পাসপোর্টবিহীন ভারতে ছিলেন। ওখানে কোনো বাসাবাড়ি বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সম্প্রতি ওখানে তাদের কিছু লোকজন খোঁজ করছেন। এছাড়া যারা তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন তারা বলেছেন তাদের আর রাখতে পারবেন না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা ভারতের স্থানীয় দালাল ধরে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন। তিনি তাদের বক্তব্য যাচাই করেছেন, তারা বাংলাদেশের নাগরিক কি না। তারা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে গিয়েছিলেন বলে যোগ করেন এই জেলা প্রশাসক।

উলেস্নখ্য, ঝিনাইদহে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা রয়েছে ৫৭ কিলোমিটার, এর মধ্যে কাঁটাতারবিহীন এলাকা রয়েছে প্রায় ১১ কিলোমিটার। কাঁটাতারবিহীন এলাকা দিয়েই বেশি অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে বিজিবি ও পুলিশ জানিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<76574 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1