বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রেলের মাসিক টিকিট বিক্রি কমাতে সিন্ডিকেটের ফন্দি

নতুনধারা
  ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
কমলাপুর রেলস্টেশনে মাসিক টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন -যাযাদি

যাযাদি রিপোর্ট

বিনা টিকিটে ভ্রমণ বন্ধে মাসিক (মান্থলী) টিকিট বিক্রিতে উৎসাহিত করার কথা থাকলেও উল্টো তা কমিয়ে আনতে রেলের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে তারা উপরি আয়ের নানা ফন্দি এঁটেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যাত্রীরা মাসিক টিকিট কিনতে হয়রানির শিকার হলে তারা তা কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। পরে তারা অনেকে বিনা টিকিটে রেলে চড়ে টিটিকে (টিকিট চেকার) ৪০/৫০ টাকা ধরিয়ে দেন। যা রেলের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট ভাগাভাগি করে নেন। তাই স্টেশনের বুকিং সহকারীসহ অন্যরা মিলে মান্থলি টিকিট বিক্রিতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।

সরেজমিনে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মাত্র একটি কাউন্টারে মাসিক টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তা-ও শুধুমাত্র সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা ১২টা এবং বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই সাড়ে সাত ঘণ্টা। এছাড়া প্রতি মাসের টিকিটের জন্য প্রতিবার ছবি দিতে হয়। এতে এক একটি মাসিক টিকিট কাটতে দীর্ঘ সময় লাগে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে গিয়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এতে তারা অনেকেই মান্থলি টিকিট কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন।

মাসিক টিকিট বিক্রির বিষয় নিয়ে গতকাল কথা হয় ভুক্তভোগী যাত্রী ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর ডেপুটি সেক্রেটারি শাহ মো. মোকছেদুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাজীপুর থেকে নিয়মিত ট্রেনে এসে অফিস করেন। তাই প্রতি মাসে মাসিক টিকিট কাটেন। প্রতিবার ছবি দিয়ে টিকিট কাটতে কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এজন্য অফিস ছুটি নিতে হয়। কেননা নির্দিষ্ট সময় টিকিট বিক্রির কারণে অফিস ছুটির পরে ভিড় আরো বাড়ে তাই সে সময়ও টিকিট কাটা সম্ভব হয় না বলে তিনি জানান।

ভুক্তভোগী অপর যাত্রী মোকছেদ মিয়া বলেন, ঢাকা থেকে গাজীপুর অথবা নরসিংদী পর্যন্ত যেখানেই যান মাসিক টিকিটের দাম ৪৫০ টাকা। বিনা টিকিটে রেলে ভ্রমণে আগ্রহী নয় বলেই মাসিক টিকিট কাটেন। তবে মাসিক টিকিট কাটায় এত বিড়ম্বনার কারণে অনেকেই এ টিকিট কাটা ছেড়ে দিয়েছেন। তারা টিটিকে (টিকিট চেকার) ৪০/৫০ টাকা দিয়ে রেগুলার আসা-যাওয়া করছেন। কিন্তু সে টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হয় না বলেই এ মাসিক টিকিট কাটেন বলে জানান মোকছেদ মিয়া।

আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের ফার্স্ট অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আবু ইউসুফ জানান, গত রোববার সকাল ১১টা থেকে তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে দুপুর ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়ায় তিনিসহ কয়েকশ' যাত্রী টিকিট কিনতে পারেননি। এ সময় তারা দলবদ্ধ হয়ে স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হকের কাছে গেলে তিনি বুকিং সহকারী সালাউদ্দিনকে টিকিট কাউন্টার চালু করার নির্দেশ দেন। তবে বুকিং সহকারী তাতে সাড়া দেননি। বরং স্টেশন ম্যানেজার কেন, আরও ঊর্ধ্বতন কেউ নির্দেশ দিলেও তিনি আর টিকিট দিবেন না বলে যাত্রীদের সাফ জানিয়ে দেন। এতে কয়েকশ' যাত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যান।

তবে ভুক্তভোগীদের বক্তব্যের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন রেলের অতিরিক্ত মাহাপরিচালক মো. মিয়াজাহান। তিনি বলেন, জনবল সংকটের কারণে সারাদিন কাউন্টার খোলা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া সারা মাস ভিড়ও থাকে না। মাসের প্রথম সপ্তাহে একটু ভিড় থাকে। তাই এখন থেকে ভিড় থাকলে সারাদিন মাসিক টিকিটের জন্য কাউন্টার খোলা রাখা হবে বলে তিনি জানান। এছাড়া প্রতি মাসে ছবি যাতে না দিতে হয় সেজন্য ডিজিটাল সিস্টেম করা হচ্ছে। একবার মাসিক টিকিট কাটলেই আর পরের বার ছবি দিতে হবে না।

তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালের প্রবিধানমালা অনুযায়ী ঢাকা ডিভিশনে ২১১টি টিকিট কাটার জন্য বুকিং সহকারীর পদ ছিল। অথচ বুকিং সহকারী আছে ১৫১ জন। পুরনো প্রবিধানমালা অনুযায়ী ৬০ জন বুকিং সহকারী কম রয়েছে। তখন ঢাকার আশপাশে প্রতিদিন ৮টি ট্রেন চলাচল করত। তখন প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হতো। এখন ৩৭টি ট্রেন চলাচল করে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। বিক্রি বাড়লেও জনবল বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এমনকি জনবল সংকটের কারণে প্রায় একশ' স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, ১৯৮৫ সালের রেলের অর্গানোগ্রামে জনবল সংখ্যা ৪০ হাজার ১১২। এর মধ্যে পদ শূন্য রয়েছে ১৬ হাজার ২৩০টি। শূন্য পদের মধ্যে ১৩ হাজারই কারিগরি অতি প্রয়োজনীয় পদ। যাদের দরকার হয় ট্রেন চালাতে।

জানা গেছে, ২০১১ সালে একটি পৃথক রেল মন্ত্রণালয় গঠনের মাধ্যমে রেলকে গণপরিবহণের নিরাপদ বাহন হিসেবে তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের পর থেকে রেলে হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। বর্তমানে ৪৫টি চলমান প্রকল্পে খরচ করা হচ্ছে ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আসছে নতুন কোচ এবং ইঞ্জিন। কিন্তু জনবল সংকটের বিষয়টি কবে নাগাদ সমাধান সম্ভব তা বলতে পারছে না কেউ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78382 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1