বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রুম্পার প্রেমিক সৈকত চার দিনের রিমান্ডে

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
রোববার রুম্পার প্রেমিক সৈকতকে আদালতে হাজির করা হয় -যাযাদি

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুম্পার 'অস্বাভাবিক মৃতু্য'র ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার কথিত প্রেমিক আব্দুর রহমান সৈকতের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

রোববার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। অন্যদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে শনিবার রাতে সৈকতকে আটক করে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ তাকে রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ২২ বছর বয়সি সৈকত আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিবিএর ছাত্র। সৈকত স্বীকার করেছেন, রুম্পা তার প্রেমিকা। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রুম্পার সঙ্গে তার কথা হয়। সৈকত একসময় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পরে সে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হয়।

উলেস্নখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে অজ্ঞাত মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হত্যার আলামত সংগ্রহ করেন। সুরতহালে পুলিশ গুরুতর কিছু ইনজুরি পায়। সংগৃহীত আলামত ফরেনসিকে পাঠায়। ওই ঘটনার পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে।

ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ড. সোহেল মাহমুদ জানান, নিহত তরুণীর হাত, পা, কোমরসহ শরীরের কয়েক জায়গায় ভাঙা ছিল। মৃতু্যর কারণ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে স্পষ্ট হবে। আর ভবন থেকে পড়ে মারা যাবার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা? তা জানতে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বৃহস্পতিবার রাতে রমনার ওসি নিহতের পরিচয় নিশ্চিতের তথ্য জানান। তিনি বলেন, 'নিহতের নাম রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা। তার বাবার নাম রোকন উদ্দিন। তিনি হবিগঞ্জ এলাকায় পুলিশ ইনসপেক্টর হিসেবে কর্মরত। রুম্পার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায় হলেও রাজধানীর মালিবাগের শান্তিবাগ এলাকায় থাকতেন'।

ঘটনার ছায়া তদন্ত করছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি দক্ষিণ বিভাগ)। ডিবি দক্ষিণের উপ-কমিশনার (ডিসি) রাজিব আল মাসুদ বলেন, 'ঘটনাটি চাঞ্চল্য ছড়ানোর পর ছায়া তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগ। আসলে সুইসাইড নাকি, হত্যা সেটা আগে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। তাছাড়া অন্যান্য আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্পষ্ট হবে মোটিভ।'

অন্যদিকে রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, যে স্থান থেকে মরদেহ আমরা উদ্ধার করেছি, তার আশপাশের কোনো ভবনে থাকত না নিহত রুম্পা। রুম্পা থাকত শান্তিবাগে। স্বভাবত, সন্দেহ জোরালো হয় যে, রুম্পা হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে সেটাও তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষ। রুম্পাকে হত্যার পর এখানে আনা হয়েছে, নাকি কোনো ভবন থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে অথবা উপর থেকে সে সুইসাইড করার উদ্দেশে লাফিয়ে পড়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। কিন্তু তাতে বিশেষ সাহায্য পাইনি। ঘটনা সংশ্লিষ্ট ফুটেজ মেলেনি। তবে ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে। কাউকে আটক না করলেও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আশা করছি, খুব দ্রম্নত পুরো ঘটনাটা স্পষ্ট হবে।'

৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

এদিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রুম্পার মৃতু্যর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ না করা হলে তারা রাস্তায় নেমে কঠোর আন্দোলন শুরু করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।

আন্দোলনকারী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আল হাসান সুমন বলেন, 'রুম্পার মৃতু্যর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবিতে গত তিন দিন ধরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে ও ক্যাম্পাসের ভেতরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে রুম্পার মৃতু্যর বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।'

তিনি বলেন, 'রুম্পার পরিবার জানতে চায় কিভাবে সে মারা গেছে। আমাদের সহপাঠীর কিভাবে মৃতু্য হয়েছে তা আমরা জানতে চাই। এটি আত্মহত্যা না কি খুন- এ বিষয়টি দেশবাসী জানতে চায়। গত তিন দিন পার হয়ে গেলেও সেই রহস্য এখনো উদঘাটন করা হয়নি।'

এ সময় আন্দোলনকারী মুখপাত্র এ শিক্ষার্থী বলেন, 'আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রুম্পার মৃতু্যর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করা হলে আমরা রাস্তায় নেমে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। এই সময়ের মধ্যে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা চলবে। ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79140 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1