যাযাদি রিপোর্ট
জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রেপ্তার হওয়া ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমসহ (জি কে শামীম) অন্যদের সংশ্লিষ্টতায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের তলব করা হয় বলে দুদক জানিয়েছে।
সোমবার দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাদের তলব করা হয় বলে সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগ নিশ্চিত করেছে। যাদের তলব করা হয়েছে তারা হলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্সের (এনডিই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউন মোস্তাফিজ এবং এম জামাল অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন। তাদের ১৬ জানুয়ারি সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, 'ঠিকাদার জি কে শামীমসহ অন্যান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।'
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর 'শুদ্ধি অভিযান' শুরু হলে প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে একে একে গ্রেপ্তার হন কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান) ও তারেকুজ্জামান রাজীব।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের অপকর্মে সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাংসদ, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের নাম উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো-কান্ডে জড়িতদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দুজনকে দলে যুক্ত করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।
অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র?্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ইতিমধ্যে ২০টি মামলা করে দুদক দল।
দুদকের অনুসন্ধান দলের তালিকায় গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অন্তত ২৫ জন প্রকৌশলীর নাম আছে। তাদের মধ্যে গণপূর্তের সাবেক ৩ প্রধান প্রকৌশলীসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আছেন। ইতিমধ্যে তাদের ১২ জনকে দুদক কার্যালয়ে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১২ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।