ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভিক্ষুকের কাছে রেখে যাওয়া নবজাতককে দত্তক নিয়েছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক। আদালতের মাধ্যমে ডিসি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী শিশুটির অভিভাবক হয়েছেন। সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক রফিকুল বারী এই আদেশ দেন। বর্তমানে শিশুটি ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানার হেফাজতে রয়েছে। তবে আগামী বৃহস্পতিবার জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রবেশন অফিসার ভৈরবে এসে শিশুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসকের নিকট হস্তান্তর করবেন বলে জানান ভৈরবের ইউএনও।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় ভৈরবের ইউএনও লুবনা ফারজানা নিজে হাসপাতালে গিয়ে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স থেকে তার বাসায় নিয়ে আসেন। আদালতের আদেশ দেয়ার পর কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক তাকে নির্দেশ দিয়েছেন শিশুটিকে তার হেফাজতে আনতে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এক নারী ভৈরবে বাস থেকে নেমে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক ভিক্ষুকের কাছে শিশুটি রেখে টয়লেটে যাবার কথা বলে পালিয়ে যায়। ওই ভিক্ষুক একঘণ্টা পর স্থানীয় এক যুবক আশরাফুলকে ঘটনাটি জানায়। পরে সে ঘটনাটি ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানাকে অবহিত করে। তারপর ইউএনও'র নির্দেশে আশারাফুল এদিন রাত ১০টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের ডা. বুলবুল আহমেদের নিকট শিশুটি রেখে আসে। এরপর ইউএনও'র নির্দেশে শুক্রবার রাতেই পুলিশ এ ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করে। শিশুটি এখন সুস্থ আছে বলে জানান হাসপাতালের ডাক্তার বুলবুল আহমেদ।
জানা গেছে শিশুটি উদ্ধারের পর গত রোববার ইউএনও লুবনা ফারজানার নির্দেশে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে শিশুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে একটি আবেদন করেন। আদালতের বিচারক রফিকুল বারী ওইদিন রোববার কোনো আদেশ দেননি। এদিকে শিশুটি দত্তক নিতে ইউএনও এবং হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে কমপক্ষে ১০ জন আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান ইউএনও। এর মধ্যে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক সোমবার শিশুটিকে দত্তক নিতে আবেদন করেন। বিকেলে বিচারক তাকে দত্তক দেয়ার আদেশ প্রদান করেন। আদেশ পাওয়ার পর সোমবার রাতে শিশুটিকে ইউএনও লুবনা ফারজানা কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেন।
জেলা প্রশাসক সারোয়ার মুর্শেদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, 'আমি ও আমার স্ত্রী সুমনা আনোয়ারের আগেই ইচ্ছা ছিল কোনো শিশু পেলে দত্তক নিব। এরই মধ্য সুযোগ পেয়ে সোমবার আদালতে আবেদন করি। আদালত শিশুটি আমার কাছে দত্তক দিতে আদেশ দেন। আদেশটি পেয়ে আমি ও আমার স্ত্রী ভীষণ খুশি হলাম। আমার দুই বছরের একটি মেয়ে আছে। তার নাম সামিহা চৌধূরী। এখন আমার দুটি মেয়ে হলো। শিশুটিকে লালন-পালন করে মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করব।'