বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বইমেলা প্রতিদিন

মেলায় সেলফি জ্বর

নতুনধারা
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:২৩

ফয়সাল খান বইমেলা যেন এক মিলনমেলা। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন অথবা লেখক-পাঠক মিলে একাকার হওয়ার জায়গা। সেই একাকার হওয়ার স্মৃতি মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করছেন আগত পাঠক-দর্শনার্থীরা। এমন দর্শনার্থীও আছেন যারা প্রিয়জনের সঙ্গে মেলায় ঘুরে বই দেখা বা কেনার চেয়ে সেলফিই তুলছেন বেশি। তবে পছন্দের লেখকের সঙ্গে বা প্রিয় বই কেনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টকারীর সংখ্যাও কম নয়। লেখক ও প্রকাশকরা বলছেন, এক সময় পাঠকরা লেখকের অটোগ্রাফ নিতে চাইতেন, সময়ের ব্যবধানে সেই পাঠক-দর্শনার্থীরাই মেলায় এসে সেলফি বা ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ বেশি সময় দিচ্ছে। তাই সবাই চায় নিজেদের ছবি বা সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিতজনদের সঙ্গে শেয়ার করত। বইমেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। পছন্দের স্টল, প্যাভিলিয়ন বা দর্শনীয় স্থাপনার সামনে নিজের ছবি তুলে সংরক্ষণ করছেন তারা। এতে মেলার আনন্দ আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন দর্শনার্থীরা। মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় সবগুলো ফটক খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠক-দর্শনার্থীরা দল বেঁধে মেলায় প্রবেশ করেন। শুরুতেই বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানে ছুটে যান তারা। সরেজমিন মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দেখা যায় মূল প্রবেশদ্বারের সামনের ফটক দিয়ে প্রবেশ করেই বেশিরভাগ দর্শনার্থী চলে যাচ্ছেন 'সংগ্রাম' চত্বরে। কেউবা বিকাশের ফটো স্টুডিও, লেখক বলছি মঞ্চ, উদ্যানের লেকের পাড়, মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ এবং পছন্দের স্টলে চলে যাচ্ছেন। এসব জায়গায় অনেককেই প্রিয়জনের সঙ্গে ছবি বা সেলফি তুলতে দেখা গেছে। এসব ছবি আবার তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শেয়ার করছেন কেউ কেউ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়মা কানিজ শিমু ও সারমিন আক্তারের সঙ্গে। তারা জানান, সুযোগ পেলেই বান্ধবীদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসেন। বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থাপনার সামনে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, যেসব বন্ধুরা আমাদের সঙ্গে আসতে পারেনি, তাদের সঙ্গে মেলার আনন্দটা ভাগ করে নিতে চাই। সবাই এসব ছবি দেখে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এতে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগটা আরও দৃঢ় হয় বলে জানান তারা। 'গৌরব' চত্বরে স্বামীর সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখা গেছে ঢাকা জজ কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী জান্নত নূরকে। আলাপকালে তিনি বলেন, 'দুজন (স্বামী-স্ত্রী) দুই পেশায় থাকার কারণে একসঙ্গে মেলায় আসা হয়। হঠাৎ করে একসঙ্গে মেলায় এসেছি, তাই এই স্মৃতি ধরে রাখতে কিছু ছবি তুলে নিলাম।' তাছাড়া দল বেঁধে বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলছেন অনেকেই। অনেক পাঠক পছন্দের লেখকের হাত থেকে বই নিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে গ্রন্থরাজ্য প্রকাশনীর প্রকাশক রাজিব দত্ত যায়যায়দিনকে বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবই বদলেছে। সবার হাতে স্মার্টফোন থাকায় ছবি বা সেলফি তুলে অমর একুশে গ্রন্থমেলার স্মৃতি ধরে রাখেন। মূল মঞ্চের আয়োজন : গতকাল বিকালে অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মোহাম্মদ আলী খান রচিত ডাকটিকিট ও মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক আতাউর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাবেক সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার ও কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ। গ্রন্থের লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন মোহাম্মদ আলী খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। প্রাবন্ধিক বলেন, ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে যেসব মানুষ একে অন্য থেকে বিচ্ছিন্ন থাকত, তারা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন বোধ করছিল। এই প্রয়োজনবোধ থেকেই জন্ম হয়েছিল সংবাদ আদান-প্রদানের ব্যবস্থা আর সেটারই পরিণামে ভূমিষ্ঠ হয় প্রাথমিক ডাক-ব্যবস্থা। তিনি বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি বিধায় স্বভাবতই বাংলাদেশের ডাকটিকিট ও মুদ্রায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি প্রাধান্য পাওয়ারই কথা, সেটাই ঘটেছে। ডাকটিকিট ও মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু গ্রন্থটিতে লেখক চিত্রাদি সহকারে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। লেখক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের ডাকটিকিট ও মুদ্রার ইতিহাস নিয়ে লিখিত এ গ্রন্থ আমার লেখক জীবনের পরম গর্বের বিষয় হয়ে থাকবে। আমরা আশা করব, শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিসংবলিত ডাকটিকিট প্রকাশিত হবে। সভাপতির বক্তব্যে ফজলে কবির বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিসংবলিত ডাকটিকিট ও মুদ্রা নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশের এ উদ্যোগ অত্যন্ত শ্রমসাধ্য ও প্রশংসনীয়। ডাকটিকিট ও মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের লেখক মোহাম্মদ আলী খান প্রচুর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এই সচিত্র গ্রন্থটি রচনা করেছেন, যা সব শ্রেণির পাঠকের কাছেই সমাদর পাবে বলে আমার বিশ্বাস। নতুন বই : মঙ্গলবার মেলার দশম দিনে ১৫২টি নতুন গ্রন্থ এসেছে। পার্ল পাবলিকেশন্স এনেছে রামেল ইয়ামীনের কাব্যগ্রন্থ এখানে 'কেউ নেই, খেয়া প্রকাশনী এনেছে কর্নেল মো. রাব্বি আহসানের 'কসমিক লাইফ', শিশু গ্রন্থকুটির এনেছে ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থের 'হ্যালো মি. গাবলু', পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে শাহরিয়ারের 'বেসিক আলী-১২', সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের 'উপন্যাস ত্রয়ী', বদিউর রহমানের 'ড্রীম গার্লস', অবসর এনেছে নাবিল মুহতাসিমের 'জুয়নবিদ্যা', মহি মুহাম্মদের 'ভাড়াবউ', সাত ভাই চম্পা প্রকাশনী এনেছে খালেক বিন জয়েন উদ্‌দীনের 'বঙ্গবন্ধু ও শেখ রাসেল', ঐতিহ্য থেকে এসেছে মিজান মালিকের কাব্যগ্রন্থ 'গল্প ছাড়া মলাট' কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ : কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি সোহরাব পাশা, রহিমা আখতার কল্পনা, শিহাব শাহরিয়ার এবং অনিকেত শামীম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহফুজুর রহমান, অনন্যা লাবনী পুতুল এবং শহিদুল ইসলাম নাজু। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, রথীন্দ্রনাথ রায়, শফি মন্ডল, সালমা চৌধুরী, মো. রেজাউল করিম ও শুভ্রা দেবনাথ। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সমস্বর'। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার (তবলা), মো. হাসান আলী (বাঁশি), মো. দেলোয়ার হোসেন (দোতারা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড)। লেখক বলছি : মঙ্গলবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সুহিতা সুলতানা, তাপস রায়, মাহবুব ময়ূখ রিশাদ ও সাঈদ আজাদ। আজকের আয়োজন : আজ বুধবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১১তম দিন। মেলা চলবে যথারীতি বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অনুপম হায়াৎ রচিত বঙ্গবন্ধু ও চলচ্চিত্র শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাজেদুল আউয়াল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোরশেদুল ইসলাম ও মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হঠাৎ ভেঙে পড়ল মোবাইল ফোনের অস্থায়ী টাওয়ার মেলায় গ্রামীণফোনের একটি অস্থায়ী টাওয়ার ভেঙে পড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে টাওয়ারটি ভেঙে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য আতঙ্ক দেখা দেয়। বাংলা একাডেমির বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রণ বিভাগের পরিচালক ও মেলা উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব জালাল আহমেদ বলেন, 'দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে মেলা প্রাঙ্গণে অস্থায়ী ভিত্তিতে দুটি সিগন্যাল টাওয়ার বসিয়েছে গ্রামীণফোন। বিকাল ৪টার দিকে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে খাবারের স্টলের পাশে স্থাপিত টাওয়ারটি হঠাৎ ভেঙে পড়ে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।'?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে