শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিতি ও একটি চিরকুট

যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

দাদি ঘরে ঢুকে দেখেন, ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছে ১১ বছরের নিতির নিথর দেহ। ওই ঘর থেকে উদ্ধার হয় একটি চিরকুট। চিরকুটের প্রতিটি শব্দে গভীর অভিমানের সুর। পুলিশের ধারণা, চিরকুটটি মৃতু্যর আগে নিতিই লিখেছে। তবে এটা আত্মহত্যা, নাকি হত্যা, তা নিশ্চিত হতে আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এলাকাবাসী বলছেন, মা-বাবার বিচ্ছেদের পর নিতি কার কাছে থাকবে, এ নিয়ে ছিল দ্বন্দ্ব। নিতিকে মা-বাবা, নানা-নানি, কেউ নিতে চাননি বলে এক রকম বাধ্য হয়ে দাদি তাকে সঙ্গে রাখেন। এ নিয়ে সব সময় বিষণ্নতায় ভুগত মেয়েটি।

নিতি আক্তারের বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামে। স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত সে।

পুলিশ, নিতির পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর আগে আন্ধারুপাড়া গ্রামের মো. আল আমিনের সঙ্গে বিয়ে হয় ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনানী বাজারের ইয়াসমিন আক্তারের। বিয়ের চার বছর পর তাঁদের সংসারে নিতির জন্ম হয়।

২০১৪ সালে নিতির বাবা আল আমিন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এক বছর পর ২০১৫ সালে আল-আমিনের সঙ্গে নিতির মা ইয়াসমিনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

পরে নিতির মা আরেকজনকে বিয়ে করে স্বামী নিয়ে রাজধানী ঢাকায় চলে যান। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। নিতির বাবাও দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে রং মিস্ত্রির কাজ করেন।

বিচ্ছেদের পর মা-বাবা তাদের দ্বিতীয় সংসারে নিতিকে সঙ্গে রাখতে না চাইলে সে তিনানী বাজারে নানা-নানির কাছে থাকতে চায়। কিন্তু নানা-নানি রাখতে অপারগতা প্রকাশ করলে নিতির ঠাঁই হয় দাদি লাল বানুর কাছে।

এলাকাবাসী জানান, নিতি মা-বাবার স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত ছিল। বাবা মাঝে-মধ্যে খোঁজ-খবর রাখলেও মা কখনো খবর নিতেন না। দাদি ও নাতনি দুজনে বাজার করে নিজেরা রান্না করে খেতেন। দাদি ছাড়া নিতিকে ভালোবাসার কেউ ছিল না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দাদি ঘরের বাইরে ছিলেন। পরে ঘরে ফিরে তিনি দেখতে পান, ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না গলায় পঁ্যাচানো অবস্থায় ঝুলছে নিতির লাশ। এ দৃশ্য দেখে দাদি চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে নিতির লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ। তিনি বলেন, 'আমরা নিতির লেখা চিরকুট ও তার লেখাপড়ার খাতা মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, চিরকুটটি নিতিই লিখেছে। নিতির চিরকুটের লেখা ধরে তদন্ত চলছে।'

ওসি জানান, বুধবার নিতির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃতু্যর মামলা করা হয়েছে।

নিতির মৃতু্যতে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি কর্মকর্তা মাধবী রানী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'বিষয়টি সত্যি দুঃখজনক। শুধু শহর অঞ্চলে নয়, মফস্বল এলাকাগুলোতেও বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে। এতে শিশুরা মা-বাবার স্নেহ ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, বিবাহবিচ্ছেদসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দূর করতে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে।

নিতির ঘরে পাওয়া চিরকুটে লেখা ছিল, 'মা-বাবা তোমরা আমাকে ভালোবাস না। নানি-নানাও ভালোবাসে না। তোমরা কেউ আমার কথা মনে কর না, ভালোবাসও না। তাই তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃতু্যর জন্য কেউ দায়ী না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<90274 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1