শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
করোনাভাইরাস

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নেই কোনো দিক-নির্দেশনা

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

মরণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে জনসাধারণের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো তুলে ধরে গত কয়েকদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি সরকারের একাধিক প্রশাসন পত্রপত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিলেও এই রোগের ঝুঁকি এড়াতে শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কি করতে হবে, এর দিকনির্দেশনা দিয়ে জোরালো কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। অথচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, সংকটময় এই মুহূর্তে অন্যান্য যেকোনো সচেতনামূলক কার্যক্রমের চেয়ে এই বিষয়টি জনগণকে অবহিত করা জরুরি। কেননা; যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষ কিংবা শিশুর শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হলে করোনায় মৃতু্যঝুঁকি যেমন কমবে, তেমনি এই রোগে আক্রান্তদের দ্রম্নত আরোগ্য লাভের হার যথেষ্ট বাড়বে।

অন্যদিকে শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার ব্যাপারে সরকারিভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে সচেতন করা সম্ভব হলে ফেসবুক-টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিত্যদিনের গুজব ঠেকানোও সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাদের ভাষ্য, এ ব্যাপারে কোনো গাইড লাইন না থাকায় গত কয়েকদিন আগে থানকুনি পাতা খাওয়ার গুজবে দেশজুড়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধুমাত্র খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমে যেকোনো বয়সী মানুষ শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিবর্তন করতে পারে। এ ছাড়া কায়িক পরিশ্রম, ব্যায়াম ও মানসিক প্রশান্তি যেকোনো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অথচ এ ব্যাপারে দেশের অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ। আবার অনেকের এ ব্যাপারে সীমিত জ্ঞান থাকলেও দেশে করোনার বিস্তার ঘটার পর তারা তা মানবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। করোনার ঝুঁকি এড়াতে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলোর পাশাপাশি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সঠিক গাইড লাইন মানা হলে চলমান মহাদুর্যোগ অনেকটাই মোকাবিলা করা যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ফ্যামিলি মেডিসিন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা এবং শ্বাস-রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জাহাঙ্গীর কবির জানান, যাদের ইমিউনিটি সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বেশি, তাদের শরীরে কোনো ভাইরাস টিকতে পারে না। আর তাই যেকোনো ধরনের ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। আর এ জন্য সঠিক খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে হবে। চিনি জাতীয় সব ধরনের খাবার বন্ধ করতে হবে। কেননা; মানুষের শরীরে যেকোনো প্যাথজেন সুগারের কারণে বৃদ্ধি পায়। ভাইরাসটা হয়ত সরাসরি সুগার খায় না, কিন্তু যে প্যাথজেনগুলো ওই ভাইরাসে ব্যবহার করে, সেগুলোকে এই সুগার জাতীয় খাবার বৃদ্ধি করে। সুগার জাতীয় খাবার দেহে ইনফ্লামেশন তৈরি করে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার, কেমিকেল মেশানো খাবার এড়িয়ে চললে ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো থাকবে।

বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বাজারে মাস্কের দাম বেড়েছে। কিন্তু সুগার জাতীয় খাবারের বাজার ঠিকই আছে। ক্যান্ডি, কোক, ফান্টা, আইসক্রিম, চকলেট, চুইংগাম মানুষ প্রচুর খাচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছে না যে, এই জিনিসটা তার ক্ষতি করছে।

এ প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদরা বলেন, করোনাভাইরাসকে কাবু করার তেমন কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই বলেই এই ভাইরাসের হানা ঠেকাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। তাদের মতে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অনেকটাই আসে দৈনন্দিন খাবার থেকে। এ জন্য কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট- সবরকম খাবারই নিয়মিত খেতে হবে। দুগ্ধজাত ও দানা জাতীয় সবজির মধ্যে অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান বেশি থাকে বলে তাও শরীরে রোগ প্রতিরোধ

\হক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত চিনি বা লবণ মেশানো খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। তাই প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন- জাঙ্ক ফুড ও তেলে ভাজা খাবারে রাশ টানা জরুরি। খাঁটি ঘি ও মধু রোগ প্রতিরোধে খুব সাহায্য করে। হাফ বয়েল ডিমসহ আর্ধসিদ্ধ সব ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সজনে ডাটা ও সজনে ফুল এই আবহাওয়ায় ভাইরাস ঠেকাতে সক্ষম। সম্ভব হলে এগুলো খেতে হবে। টক দই, সবুজ শাকসবজি ও ফলে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। তাই যতটা সম্ভব তা বেশি বেশি করে খেতে হবে। শরীরের প্রয়োজন বুঝে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, কি ধরনের খাবার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং কোন খাবার খেলে তা বাড়ে- এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হলে আতঙ্কগ্রস্ত সাধারণ মানুষ তা মেনে চলবে। তবে এ ব্যাপারে সরকারকে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা; বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে গাইড লাইন দিতে পারলেও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকার বেতার-টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এ ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা চালালে সেটা দ্রম্নত দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছবে। তাই এ ব্যাপারে কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করে এ ব্যাপারে তড়িৎ উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করেন তারা।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের একটি বড় অংশের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট শক্তিশালী, তারা অনেকে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন।

অন্যদিকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের দাবি, শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে মানসিক চাপের একটি শক্তিশালী যোগসূত্র রয়েছে। তারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চাপমুক্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমরা যদি স্ট্রেসের (চাপ) ভেতর থাকি, তাহলে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল করে দেয়। অর্থাৎ এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। প্রতিদিন গভীর রাতঅবদি জাগলে মানসিক এবং শারীরিক অবস্থা ভালো থাকবে না। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ, করোনাভীতির এই দুঃসময় এখন সবার নিয়মিত দিনে অন্তত ৩০ মিনিটের দুটি সহজ ব্যায়াম করা দরকার। ১৫ মিনিট স্ট্রেচিং ও ব্রিদিং। আর সেই সঙ্গে পরিষ্কার বাতাসে ১৫ মিনিট জোরে হাঁটা। এ ধরনের ব্যায়াম আমাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায় এবং সেটা করোনা থেকে শুরু করে অন্য রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

গত ১০ মার্চ বিশ্বখ্যাত পত্রিকা 'দ্য নিউইয়র্ক টাইমস' এই করোনাভাইরাস-আতঙ্কের পটভূমিতে 'ক্যান আই বুস্ট মাই ইমিউন সিস্টেম?' (আমি কি আমার রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে পারি?) শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়েছে। মা-বাবা থেকে প্রাপ্ত জিনগত বৈশিষ্ট্য এ ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ভূমিকা রাখে। কিন্তু এর সঙ্গে আরও কিছু ব্যাপার আছে। দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমাতে হবে। ভালো ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, বিশেষত পরিমাণ মতো ভিটামিন ডি এবং নিয়মিত ব্যায়াম। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নির্মূলে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। সব মিলিয়ে দেহের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে। এই কয়েকটি পদক্ষেপ করোনাভাইরাস কাবু করার অন্যতম উপায়।

অথচ এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা না থাকায় রাজধানীর প্রতিটি জিম এক রকম বন্ধ হয়ে গেছে। খোলা মাঠ, পার্ক ও ফাঁকা রাস্তায় বিভিন্ন বয়েসি মানুষ আগে প্রাতঃভ্রমণে বের হলেও এখন তা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসকদের অভিমত, ঝুঁকি নিয়ে বাইরে বের না হলেও বাসা-বাড়িতেই ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া উচিত। এতে আমাদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যতটা বাড়বে, তা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অনেক সহায় হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94508 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1