বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইন-ফেসবুক ঘেঁটে কাটছে গৃহবন্দি জীবন

যাযাদি রিপোর্ট
  ৩১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

রামপুরার বাসিন্দা মো. মামুন চাকরি করেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কোনো রকমে নাস্তা সেরে দৌড় দেন অফিসে। অফিসের কাজ শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। এমন ব্যস্ত জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

কাজের পেছনে ছুটে বেড়ানো যে মামুনের ঘরে বসে অলস সময় কাটানো বা মোবাইল-ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করা সব থেকে বিরক্তিকর লাগতো- করোনাভাইরাস আতঙ্কে তিনি এখন প্রায় গৃহবন্দি। সংসারের টুকিটাকি কেনাকাটা ছাড়া খুব একটা বাইরে যান না। কর্মব্যস্ত জীবন ছেড়ে গৃহবন্দি জীবনে বিরক্তির ফেসবুক আর অনলাইন ঘেঁটেই সময় কাটছে তার।

শুধু মামুন নন সবার মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ইতোমধ্যে সরকার ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করতে বলেছে।

আতঙ্কে অতি প্রয়োজন ছাড়া বেশিরভাগ লোকই ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। ফলে দিনের ঝলমলে সূর্যের আলোতেও অনেকটাই জনমানবহীন যান্ত্রিক ঢাকা। সকাল থেকে রাত অবধি ঢাকা চষে বেড়ানো কর্মব্যস্ত মানুষগুলো নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের গৃহবন্দি করে রেখেছেন।

অনেকটাই নিঃসঙ্গ এ জীবনযাত্রায় কর্মব্যস্ত মানুষগুলোর একটি বড় অংশ ফেসবুক, ভাইবার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে অলস সময় পার করছেন। সেইসঙ্গে করোনা পরিস্থিতি জানতে ঢুঁ মারছেন বিভিন্ন অনলাইনে।

নিজেকে ইন্টারনেট দুনিয়ায় বন্দি রাখার পাশাপাশি কেউ কেউ ছোট বাচ্চাদের গৃহবন্দি রাখতে হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল ফোন। বাইরের আলোবাতাসে খেলাধুলার সুযোগবঞ্চিত শিশুরাও মোবাইল ঘেঁটে কার্টুন দেখে ঘরের মধ্যে সময় পার করছে।

রোববার রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা মামুন বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজের পেছনে ছুটে বেড়াই। সেই আমি এখন নিজে ঘরে বন্দি থাকছি। আমার দুটি ছোট বাচ্চা আছে। ওদের নিয়েই যত চিন্তা। ওদের কথা মাথায় রেখে নিজেকে সব সময় নিরাপদ রাখার চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, সকালে অফিসে যাওয়া এবং রাতে বাসায়ে ফিরে বাচ্চাদের কিছুটা সময় দেওয়াটাই ছিল আমার জীবন। কিন্তু এখন সারাক্ষণ ঘরে থাকি। ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে একটুও ভালো লাগে না, সময় কাটতে চায় না।

'যে ফেসবুককে আমি বিরক্তির মনে করতাম, এখন বেশিরভাগ সময় সেই ফেসবুকই ঘাঁটি। এছাড়া ইমোর মাধ্যমে আত্মীস্বজন ও পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি। গত এক সপ্তাহে যে পরিমাণ সময় ইন্টারনেটে থেকেছি, আমার মনে হয় গত ছয় মাসেও এতো সময় আমি ইন্টারনেটে থাকিনি' বলেন মামুন।

মিরাজ নামের বেসরকারি একটি কোম্পানির এক্সিকিউটিভ বলেন, এখন অফিস নেই। লম্বা ছুটি পেয়েছি। চাইলে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে পারতাম। কিন্তু বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় দেখে আর যাইনি। নিজেকে অনেকটাই গৃহবন্দি করে ফেলেছি। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হই না। এই আতঙ্কের বন্দি জীবনে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করেই বেশিরভাগ সময় পার করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, 'আমার তিন বছরের একটি ছেলে আছে তাকে প্রায় এক মাস ঘরের বাইরে বের করিনি। ঘরের বাইরে বের হওয়ার জন্য ছেলের আবদারের শেষ নেই। কিন্তু করোনার ভয়ে ছেলেকে বাইরে বের করিনি। সব সময় টিভিতে কার্টুন চ্যানেল ছেড়ে রাখি ছেলের দেখার জন্য। মাঝে মধ্যে কার্টুন দেখার জন্য মোবাইলও দেই। জানি এগুলো বাচ্চাদের জন্য ভালো নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনো উপায়ে ছেলেকে ঘরে বন্দি রাখাই সেভ।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94727 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1