শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এক কেজি শসার দাম ৫০ পয়সা দিশেহারা কৃষক

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

বাজারে একটা মোটামুটি মানের মাস্কের দাম গড়ে ৪০ টাকা। আর ৫২ কেজি ওজনের এক বস্তা শসার দাম পাইকাররা বলছেন মাত্র ৩০ টাকা। তাও কিনতে চাইছেন না অনেকেই। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসায় হঠাৎ করেই এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পড়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের শসাচাষিরা। দর নামতে নামতে কেজি প্রতি মোটে ৫০ পয়সা হওয়ায় এক বস্তা শসা বেচেও একটা মাস্ক কিনতে না পারার এমন পরিস্থিতিতে সরকারের নজর দাবি করে দুই শতাধিক কৃষক মানববন্ধন করেছেন।

সোমবার (৩০ মার্চ) সকালে বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ী বাজারের পাশে কৃষকরা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে কৃষকরা ক্ষেত থেকে আর শসা তুলবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কৃষকরা জানান, ঝাড়বাড়ী এলাকার প্রায় ২শ' একর জমিতে ৩ শতাধিক কৃষক শসার আবাদ করেছেন। বর্তমানে শসার উৎপাদন মৌসুম। এখানকার শসা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে যান চলাচল বন্ধ থাকায় শসা বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।

তারা জানান, পাইকাররাও বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে না পেরে শসা ক্রয় করছেন না। কয়েকদিন আগে যেখানে শসার দাম ছিল কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা সেখানে এখন শসার দাম নেমে এসেছে মাত্র ৫০ পয়সায়। এরপরও ব্যবসায়ীরা শসা ক্রয় করছেন না। ফলে শসা জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে জমি থেকে শসা তুলে গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হবেন বলে দাবি করেন তারা। তাই করোনা পরিস্থিতিতে কৃষকদের দিকে নজর দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাপক পরিমাণে শসা আবাদ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি শসা আবাদ হয় শিবরামপুর, পলাশবাড়ী ও শতগ্রাম ইউনিয়নে। এসব এলাকা শসার গ্রাম হিসেবে পরিচিত। আর এখানকার উৎপাদিত শসা জেলার চাহিদা মিটিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাক শসা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠান।

এলাকার শসাচাষি খসিবুল ইসলাম জানান, প্রতি বিঘা শসা উৎপাদনে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পাইকাররা ৩০ টাকা বস্তা করে দাম দিচ্ছেন, যা দিয়ে আমাদের শ্রমিকদের মজুরিও হচ্ছে না। আমরা বউ-বাচ্চা নিয়ে খেটেখুটেও পয়সা পাচ্ছি না। পাইকাররা শসা নিয়ে ৩ দিন পর টাকা দিচ্ছেন। তাই আমরা শসা তুলব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সাকিল হাসান নামে আরেক শসাচাষি বলেন, ৪ বিঘা জমিতে শসা লাগিয়েছি। এতে আমার এক লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন এত কম দাম হলে কীভাবে আমার খরচ উঠাব? ব্যবসায়ীরা নিজ খেয়ালখুশিমতো দাম দিচ্ছেন।

তৌহিদুল ইসলাম নামে আরেক চাষি বলেন, আমাদের দিকে সরকারও তাকায় না। কৃষকের কোনো মূল্য নাই, বাজারের নিয়ন্ত্রণ নাই। এক বিঘা জমিতে শসা আবাদ করতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ। আর এখন বাজারে যে দাম তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরিও হচ্ছে না।

মেহেদি হাসান বলেন, আমরা শসা বিক্রি করে যে মাস্ক কিনব সেই টাকাই পাওয়া যাচ্ছে না। এক বস্তা শসা বিক্রি করে একটি মাস্কের দাম হচ্ছে না। এখন আপনারাই চিন্তা করেন আমরা কোথায় আছি।

আবুল হোসেন বলেন, শসা আবাদ করতে জমিতে খেটে আমার জীবন চলে না অবস্থা। সব টাকাই শসা আবাদ করতে খরচ করেছি, কিন্তু এখন দাম নাই। এখন কী করব তা ভেবে পাচ্ছি না।

বাহাদুরবাজার এলাকার কাঁচাসবজির আড়তদার মনা ইসলাম বলেন, সব সবজির দাম কমেছে। গাড়ি চলাচল না করায় এসব মালামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো যাচ্ছে না। আমরাও ব্যবসা ঠিকভাবে করতে পারছি না, লোকসানে আছি।

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু রেজা আসাদুজ্জামান বলেন, 'বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কৃষকদের উৎপাদিত সবজি রাজধানীসহ অন্যান্য জেলায় যেতে পারছে না। পাশাপাশি স্থানীয় ক্রেতারাও বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় শসাসহ বিভিন্ন সবজি কিনতে পারছেন না। কৃষকদের বলা হয়েছে যাতে করে তারা চাহিদা অনুযায়ী শসা ক্ষেত থেকে তোলেন। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শসার মূল্য পাবেন বলে আশা করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94853 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1