বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাজেকে হামে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, আক্রান্ত ১৫৫

যাযাদি ডেস্ক
  ০২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
সাজেকের দুর্গম এলাকা

কয়েক মাসের মধ্যে হামে গ্রাস করে নিয়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম সাজেক ইউনিয়নটি। দিন দিন এ রোগে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সঙ্গে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও।

সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের বেটলিং গ্রামের সুরেশ চাকমার ছেলে নিকেতন চাকমা (১৫) এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এ নিয়ে সাজেকে হামে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ এবং আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে ১৫৫ জনের মতো। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় মৃতু্যর বিষয়টি জানাতে দেরি হয় বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য গরেন্দ্র ত্রিপুরা।

জানা যায়, গত কয়েক মাসে সাজেকের কয়েকটি গ্রামে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এতে আক্রান্ত হয়ে ৮ শিশু মারা যায় এবং প্রায় শতাধিকের ওপর শিশু আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও আবারও হাম নতুন করে ওই ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে হানা দেয়। এতে আক্রান্ত হয় ১৫৫ জন শিশু এবং নিকেতন চাকমা নামে এক কিশোর মারা যায়।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, পুরো ইউনিয়নটি দুর্গম এলাকা। এখানে কখন কী হয় কেউ জানে না। ওই ইউনিয়নে হেলিকপ্টার ছাড়া যোগাযোগ করা প্রায় অসম্ভব। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগে নেই কোনো ভালো সড়ক পথ। তাই চিকিৎসা সেবা ওই এলাকায় পৌঁছানো খুবই কষ্টের ব্যাপার। কেননা দুর্গম পথ মাড়িয়ে ওই এলাকায় ডাক্তারদের পৌঁছানো অনেক কঠিন ব্যাপার। যে কারণে যথাসময়ে চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো যায় না।

এছাড়া ওই এলাকার বাসিন্দারা বেশির ভাগই নিরক্ষর হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামি। যখনই ডাক্তাররা বিভিন্ন সময় কঠিন পথ মাড়িয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে যায় তখনি তারা নানা কুসংস্কারে বিশ্বাস এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির ভয় দেখিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। যে কারণে চিকিৎসকদের হতাশা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়।

তবে কয়েক মাসে পুরো সাজেকে যখন হাম গ্রাস করে নিচ্ছে তখনি মাঠে নেমে পড়েছে সেনাবাহিনীর সদস্য এবং বিজিবির জোয়ানরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকদের দল। সবার সমন্বয়ে হামের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বের হতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। যেসব শিশু বেশি অসুস্থ তাদের উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে উন্নত চিকিৎসা দিতে চট্টগ্রামে পাঠানো হচ্ছে।

আক্রান্ত এলাকার ৭ নম্বর পাড়ার কার্বারী (গ্রামপ্রধান) দয়াল ত্রিপুরা বলেন, গত ২ দিন থেকে আমার এলাকায় মোট ১৬ জন হাম রোগে আক্রান্ত হয় এবং তারা সবাই এক থেকে আট বছরের শিশু।

তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাসিন্দারা সচেতন নয়। নেই কোনো শিক্ষিত মানুষ। কুসংস্কারে বিশ্বাস করে গ্রামের বাসিন্দারা। যে কারণে রোগ হলে চিকিৎসা করাতে চাই না। কেউ আক্রান্ত হলে ঝাড়-ফুঁ দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। যে কারণে আমাদের শিশুদের মৃতু্যর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। রোগটি দিনদিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ জানান, সাজেকের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বের হতে আগে থেকেই আমাদের দুইটি দল কাজ করছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী-বিজিবির সদস্যরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি সাজেক থেকে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দূর করতে এবং শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94997 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1